//গাজীপুর প্রতিনিধি//
শিল্পঅধ্যুষিত গাজীপুর জেলায় ছোটবড় প্রায় ৫ হাজার শিল্পকারখানা রয়েছে।এরমধ্যে পোশাক কারখানা ২ হাজারের বেশি। অর্থনৈতিক ও ঐতিহ্যগত দিক থেকে এই জেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দায়িত্বহীনতা, অব্যবস্থাপনা, ঝুট গুদাম ও বৈদ্যুতিক গোলযোগসহ বিভিন্ন কারণে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে৷
গত দেড় বছরে এই জেলায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ৯৪৬টি৷ এসব অগ্নিকাণ্ডের ফলে ক্ষতির পরিমাণ ১৬ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়াও ঘটেছে হতাহতের ঘটনা। এ তথ্য জেলা ফায়ার সার্ভিসের।
২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ৯৪৬টি। এর চলতি বছরেই ৩৫০টি৷ অগ্নিকাণ্ডে ২০২২ সালে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ৬৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা এবং চলতি বছরের ৬ মাসে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৪০ লাখ ৪০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এসকল অগ্নিকাণ্ডের ফলে আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক মানুষ, পাশাপাশি মারা গেছেন অন্তত ১০ জন।
জেলা ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্যমতে, দেড় বছরে ইলেকট্রনিক, গ্যাস ও মাটির চুলা থেকে অগ্নিকাণ্ড ৫৩টি, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে ৪২১টি, বিড়ি সিগারেট জলন্ত টুকরো থেকে ৬৫টি, খোলা বাতির ব্যবহারে ৩টি, যন্ত্রাংশ ঘর্ষণজনিত কারণে ৯টি, শত্রুতা ও উচ্ছৃংখল জনতা কতৃক অগ্নিসংযোগ ৫টি, মাত্রাতিরিক্ত তাপে ৩টি, মেশিনের মিস ফায়ারে ৩টি, চিমনির স্ফুলিঙ্গ থেকে ৩টি, গ্যাস লাইন থেকে ৬৬টি, যানবাহনে দুর্ঘটনাজনিত কারণে ৬টিসহ মোট ৯৪৬টি আগুনের ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে আগুন লাগে ৪২১টি। বৈদ্যুতিক গোলযোগে লাগা আগুনে ক্ষতির পরিমাণ ১১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
ফায়ার সার্ভিস অফিস জানায়, গাজীপুরের জয়দেবপুর, টঙ্গী, ডিবিএল, কালিয়াকৈর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জসহ মোট ৮ টি ফায়ার স্টেশন রয়েছে। আরও ৩টি একবছরেই চালু হবে।
বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গাজীপুরের টঙ্গী, কাশিমপুর ও কোনাবাড়ি এলাকায় আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে। এসকল এলাকায় অধিক পরিমাণ লোকের বসবাস এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন। এরমধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে হাজার হাজার ঝুটের গোডাউন। ফলে আগুন লাগলে পড়তে হয় পানিসংকটে। এছাড়াও ঘনবসতি হওয়ায় ঠিক সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেন না দমকল বাহিনীর সদস্যরা। ফলে অনেক সময় আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বৃদ্ধি পায়।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ্ আল আরেফীন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কমাতে অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। পোশাক কারখানায় থাকলেও বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষণ ও মহরা নিতে হবে। আমরা প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছি। অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং প্রশিক্ষণ থাকলে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে। আমাদের আটটি ফায়ার স্টেশন আছে। অর্থনেতিক উন্নয়ন ও শিল্পকারখানা কথা চিন্তা করে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, কোনাবাড়ি ও রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা এলাকায় আরও ৩টি মর্ডান ফায়ার স্টেশন চালু করা হচ্ছে।