স্টাফ রিপোর্টার:
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, জাতি সংঘের এবারের সাধারণ অধিবেশনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে এর মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ের অনেক দিক নিয়ে বিশ্ব নেতাদের সাথে সভা হয়েছে। সারাবিশ্বে করোনা মহামারি হয়েছে, আগামীতে কোনো ধরণের মহামারি আসলে তা কি উপায়ে প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্যের অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে যক্ষার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
আজ শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে মন্ত্রীর গড়পাড়ার নিজ বাড়ীতে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ইসরাফিল হোসেন, সাধারন সম্পাদক আফসার উদ্দিন সরকার, জাগীর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি বাবুল সরকার, সদর উপজেলা শ্রমিকলীগের আহবায়ক ইমদাদুল হক লিটন সহ দলীয় নেতাকর্মীরা।
তিনি আরোও বলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সকল দেশ যাতে শতভাগ যক্ষা নির্মূলকরতে পারে। সেই তুলনায় আমাদের দেশে আগের চেয়ে এখন প্রায় ৫০ ভাগ যক্ষা রোগী কমে গেছে। যক্ষার ব্যাপারে আমাদের লক্ষ্য আছে, আমারাও ২০৩০ সালের মধেই যক্ষা শতাভাগ নির্মূল করবো। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন,জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আমাদের দেশের স্বাস্থ্যে যক্ষা, চক্ষু ও কমিউনিটি ক্লিনিক বিষয়ে বিশধ আলোচনা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব একটি উদ্যোগ, সেটি জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে। যেটার নাম শেখ হাসিনা ইনিসেয়েটিভ। অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে এবং তাঁকে আহবান করা হয়েছে, গ্লোবাল হেলস্থ ফোরামের কোচ চেয়ারম্যান হিসেবে আহবান করা হয়েছে। এখন তিনি এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে দেখবেন।
তিনি বলেন, কিউবাতেও আমরা গিয়েছিলাম আপনারা জানেন। সেখানে ৭৭ টি দেশের সঙ্গে সভা হয়েছে। সেখানে প্রযুক্তির মাধ্যমে কিভাবে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন করা যায়। জাতিসংঘের এই সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ ভালোভাবে বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনায় অংশ নিতে পেরেছে।
ডেঙ্গুর ভ্যাকসিনের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গু স্থিতি আছে, আর ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি আছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এখন প্রায় নয় হাজার রোগী চিকিৎিসাধীন আছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় এখন স্যালাইনেরে কোনো ঘাটতি নেই। আমরা মন্ত্রণালয় থেকে সাত লাখ ব্যাগ স্যালাইন আমদানির অনুমোদন দিয়েছিলাম। এর মধ্যে ইতোমধে তিন লাখ ব্যাগ স্যালাইন চলে এসেছে। বাকি চার লাখ ব্যাগ স্যালাইনের চালানও দ্রুত চলে আসবে। প্রতিদিনি প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার ব্যাগ স্যালাইন রিসিভ করছি এবং হাসপাতাল গুলোতে দিয়ে দিচ্ছি। এ ছাড়া বেসরকারি ঔষধ উৎপাদন কোম্পানিগুলো স্যালাইনের উৎপাদন এখন অনেকগুণ বাড়িয়েছে। আমি যতটুকু তথ্য পেয়েছি, তারা মাসে ৫৩ লাখ ব্যাগ স্যালাইন উৎপাদন করত পারে।
তিনি বলেন, দেশবাসীর উদ্দ্যেশে মন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু রোগী তো আছে, তবে জনসাধারণকে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রতিদিনই ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। অনেক সময় দেরি করে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ক্ষেত্রে রোগীকে তখন চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলাও কঠিন হয়ে যায় এবং অনেক সময় রোগী মারাও যান। সেই জন্য তড়াতাড়ি ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। তবে আমরা আশা করছি ধীরে ধীরে আমাদের দেশে ডেঙ্গু কমে যাবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিকা নিয়ে গবেষণা কিন্তু বিশ্বব্যাপী চলছে। ইতোমধ্যে দুটি টিকাও আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু সেই টিকাগুলো ব্যবহার হয় না, টিকাগুলোতেও আবার কিছু সমস্যা আছে। চার ধরণের ডেঙ্গু আছে, ভাইরাস আছে। টিকা নিলে দেখা যায় কিছু ভাইরাস দমনে হচ্ছে, কিন্তু সব ভাইরাস দমন হয় না। আর যারা একবার ডেঙ্গুর টিকা নিয়েছে তাদেরকে অন্য ভাইরাসে আক্রমণ করলে তাদের অবস্থা বেশি গুরুতর হয়ে যায়। যে কারণে বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুর টিকা ব্যবহার হচ্ছে না।
তিনি বলেন, দেশের এসেই শুনতে পারলাম আইসিডিডিআরবি একটি পরীক্ষামূলকভাবে একটি টিকা তৈরি করেছে। সেটা এখনও পরীক্ষায় রয়েছে, তারা বলছে, তাদের এই টিকাটি বেশ কর্যকর। আমাদের আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে, প্রয়োজনে বিশ্বা স্থাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন নিবো এবং আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবো। যখন পরীক্ষাগুলো শেষ হবে যাবে তখন, আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন নিয়ে আমাদের দেশেও ব্যবহার করত পারবো। কিন্তু এই মুহুর্তে বিশ্বের কোনো দেশেই ডেঙ্গু কার্যকরি টিকা তৈরি হয় নাই।
আগামী নির্বাচনের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণ তিনবার ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। এবং সামনেও আশা করি জনগণ তাঁকে নির্বাচিত করবে। আমরা গত ১০ বছরে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। দেশের বড় বড় সব প্রকল্পই বাস্তবায়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার পূরণ করেছে। সরকার করোনাকালীন সময়ে দেশের মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি, বিভিন্ন দুর্যোগের সময় জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এই সরকার। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে, খাদ্যের অভাব হয় নাই, পেট্রোলের অভাব হয় নাই।
মন্ত্রী বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা মানিকগঞ্জ- ৩ আসন থেকে আমি তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছি। ১০ বছর আগে কি ছিল তা আপনারা জানেন। আমার সময়ে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, মেডিকেল কলেজ, নাসিং কলেজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন হয়েছে। জনগণ সবসময় উন্নয়নের পাশাপাশি শান্তিও চায়। আমার সংসদীয় আসনে রাজনৈতিক কোনো অস্থিরতা নেই। আপনারাই ভালো জানেন আমি কতটুকু ভালো কাজ করছি। জনগণ ভালবেসে আমাকে ভোট দিয়েছে, আশা করছি সামনের নির্বাচনেও আমাকে ভোট দিবে।
দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানিকগঞ্জ-৩ আসনে পুনরায় আমাকে নৌকার মনোনয়ন দিলে আমি খুবই খুশি হবো। আমি মনে করি, দেশবাসী আমাকে আপন করে নিবে, আমাকে মূল্যায়ন করে এবং ভালোবাসে। ইনশাআল্লাহ বিপুল ভোটে আমরা নির্বাচিত হবো।