সিংগাইর (মানিকগঞ্জ)প্রতিনিধি:
তথ্য গোপন করে সরকারি বরাদ্দে অন্যের জমিতে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের তথ্য ফাঁস হয়েছে। নির্মিত ওই ঘরটিতে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও বসবাস করছেন না। মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের চর ফতেপুর গ্রামে এমন কান্ডে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সরেজমিন জানা যায়, জেলা পরিষদের দেয়া প্রকল্পের ঘরটি ওই এলাকার জনৈক সেলিনা বেগমের নামে বরাদ্দ হয়। সেলিনার ভাই স্থানীয় মিজান মাস্টার ফতেপুর মৌজায় অন্যের জমি নিজের নামে ১৫৫৬ নম্বর বিডিএস পর্চা করে সরকারি বরাদ্দপ্রাপ্ত ঘরটি ওই বিতর্কিত জায়গায় নির্মাণ করেন। ঘরটির অর্থ বরাদ্দ ও নির্মাণে জেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সদস্য শোভা রহমান তাকে সহায়তা করেন। জমির প্রকৃত মালিক রফিক কারিকর অভিযোগ করে বলেন, সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ড অনুযায়ী পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে ওই জমির মালিক আমি। আমার বসতবাড়ি পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের চুকোরিয়া গ্রামে। আমার পরিবার এ এলাকায় না থাকার সুযোগে মিজান মাস্টার চলামান বিডিএস জরিপ করে তার বোনের নামে সরকারি ঘর বরাদ্দ এনে ওই জায়গায় নির্মাণ করেন। ভুক্তভোগী রফিক কারিকর ঘরটি দ্রুত অপসারণসহ ও বিডিএস পর্চা বাতিলের দাবি জানান। স্থানীয় কহিনুর ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেনসহ অনেকেই জানান, জেলা পরিষদের বরাদ্দ পাওয়া ওই ঘরটি নির্মাণের পর থেকে কেউ থাকে না। প্রকৃত মালিকদের বেদখল করে নিজের নামে জমিটি নেয়ার জন্য মিজান মাস্টার বোনের নামে বরাদ্দপ্রাপ্ত ঘরটি ওই জায়গায় নির্মাণ করে দখলে নেন। অভিযুক্ত মিজান মাস্টার উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের চর ফতেপুর গ্রামের তাজ উদ্দিনের পুত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আরএস ৬৯৮ ও ৬৯৬ দাগের ৪১ শতাংশ জমির প্রকৃত মালিক রফিক কারিকর ও তার বোন সাফিয়া বেগম। ১৯৭২ সালে ১৭৭৭৭ নম্বর ভুয়া দলিল দেখিয়ে বিভিন্ন সময় একাধিক ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর হয়। সর্বশেষ ওই জমি স্থানীয় এলাহী, আমোদ আলী, নজরুল ইসলাম ও হুকুম মোল্লা দাবি করছেন। এ নিয়ে প্রকৃত মালিক রফিক কারিকর ও তার বোনের সঙ্গে ভূয়া দলিলে দাবিকৃতদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরে খোঁজ নিয়ে ১৭৭৭৭ নম্বর দলিলটির কোন অস্তিত্ত্ব মেলেনি।
অভিযুক্ত মিজান মাস্টার অন্যের জায়গা দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি আলী মুনছের ও আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ জমি বায়নাসূত্রে মালিক হয়ে বোনের নামে বরাদ্দকৃত ঘরটি নির্মাণ করে দিয়েছি।
চান্দহর ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারি কর্মকর্তা একেএম আব্দুছ ছালাম বলেন, ঘরটি জেলা পরিষদ থেকে দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।
সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য শোভা রহমান বলেন, মিজান মাষ্টারের কাছ থেকে তার বোনের অংশটি অন্য জায়গা থেকে ক্রয় করে দিবে মর্মে এ জায়গাটি দেখানো হয়েছিল। পাশাপাশি একটি দলিলও দেখিয়েছিল। সে কারণে ঘরটি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিপন দেবনাথ বলেন, জেলা পরিষদ থেকে ঘর বরাদ্দের বিষয়টি আমার জানা নেই।