বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ অন্য নেতারা
আবাসিক পর্যায়ে গ্যাসের প্রিপেইড মিটারের ভাড়া বৃদ্ধির সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, এমনিতেই আবাসিক পর্যায়ে গ্যাস সঙ্কট মারাত্মক। বাসায় অধিকাংশ সময়ে গ্যাস থাকে না। অথচ, অবৈধ সরকার নানা কৌশলে গ্যাস ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা চুষে নিচ্ছে। মিটার ভাড়া এক লাফে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে। এটা ৭ জানুয়ারি নীরবে ভোট নামের সার্কাস দেখার শাস্তি হিসেবে জনগণের ওপর ধার্য করা হয়েছে।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণ প্রত্যাখ্যাত একদলীয় ডামি সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরেই জানা গেল, আবাসিক পর্যায়ে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার ভাড়া ১০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। মিটার চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় সমন্বয় করতেই নাকি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত না করে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে মিটার ভাড়া দ্বিগুণ করা সরকারের স্বৈরাচারী চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অরাজকতার কালো আঁধারে আচ্ছন্ন, দাবি করে তিনি বলেন, ভয়াবহ ডলার সঙ্কটের কারণে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে ধস নেমেছে। তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে নগদ সহায়তা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবৈধ এই ডামি সরকার। এমনিতেই বায়ারদের কাছ থেকে পোশাকের অর্ডার অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ ছাড়াও চামড়া, পাটজাত পণ্য, অ্যাগ্রো প্রসেসিং পণ্যে নগদ সহায়তা অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে, এসব পণ্যের রপ্তানি চরমভাবে হ্রাস পাবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ভোটারবিহীন সরকার কখনোই জনকল্যাণমুখী হতে পারে না। এরা অবাধ লুণ্ঠনের যে নজির তৈরি করেছে, তা পৃথিবীতে বিরল। বেপরোয়া দুর্নীতি আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ দিয়ে এ সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থা গড়ে তুলেছে। এদের দিয়েই প্রবল জনমতকে দমন করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবির ওপর নামিয়ে আনা হচ্ছে ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। দলীয় ক্যাডার, সন্ত্রাসী আর সিন্ডিকেটবাজদের ভরণ-পোষণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রের কোষাগার শূন্য করা হয়েছে। তথাকথিত উন্নয়নের নামে যেভাবে হরিলুট হয়েছে, সেসব পূরণ করতেই সরকার রপ্তানি খাত থেকে তহবিল কমাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রভুদের সমর্থনে ডামি নির্বাচন করে অবৈধ ক্ষমতার জোরে আওয়ামী মন্ত্রীরা নিজেদের এখন কর্তৃত্বের অধিকারী ভাবছেন। এরা গণতান্ত্রিক বিশ্বের নামকরা গণমাধ্যমকেও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে অবলীলায়। নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিশ্বের অনেক নোবেল বিজয়ী ও বিশ্বনেতার বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে ওয়াশিংটন পোস্টে। এই বিবৃতিকে বিজ্ঞাপন বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে পারদর্শী আওয়ামী সরকারের মন্ত্রীরা রাষ্ট্রশক্তিকে কব্জায় নিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসের বিচার প্রসঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশে নাকি বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ! আমরা মনে করি, সেটা স্বচ্ছ তো বটেই, তবে তা বর্তমানে বুড়িগঙ্গা নদীর পানির মতো। রুচিহীন, আপত্তিকর ও বানোয়াট কথা বলার জন্য আওয়ামী মন্ত্রীদের পুরস্কৃত করা উচিত।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব গতকাল বলেছেন, দুর্নীতি সারা বিশ্বেই আছে। কেন কেবল বাংলাদেশকে অপবাদ দেওয়া হয়? তার এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে চাই, দুর্নীতি হয়ত সারা বিশ্বেই কম-বেশি থাকতে পারে, কিন্তু বিশ্বব্যাপী আওয়ামী মার্কা দুর্নীতির কলঙ্ক তিলক আর কোথাও আছে বলে অন্তত আমাদের জানা নেই।
গতকাল বিএনপির পূর্বঘোষিত কালো পতাকা মিছিলে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়েছে, অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সেই হামলায় ৭০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। কালো পতাকা মিছিলে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ১০০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছয় মামলায় ৪৫৬ জনের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন—বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, বিলকিস জাহান শিরিন, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আমিনুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ।