1. hasanchy52@gmail.com : admin :
  2. amarnews16@gmail.com : Akram Hossain : Akram Hossain
শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পূর্বাহ্ন

জলবায়ু পরিবর্তনের আঘাতে ভুগছে বাংলাদেশ

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৭০ বার দেখা হয়েছে

১৯৯৫ সালের পয়লা মে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৯ বছর পর আবারও তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রির সেই রেকর্ড স্পর্শ করলো। সোমবার (২৯ এপ্রিল ২০২৪) চুয়াডাঙ্গায় এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড বলছে, গত ছয় দশকে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে। এ ধারা থাকলে আগামী তিন দশকে তাপমাত্রা বাড়ার এই পরিমাণ ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে। এমনটা মনে করছেন আবহওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।

স্বাধীনতার আগে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯৬০ সালে। ওই বছরের ৩০ এপ্রিল তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৫৪ বছর পর ২০১৪ সালের ১৪ ও ২৩ এপ্রিল, ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় একই তাপমাত্রা আবার রেকর্ড করা হয় ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল। এবার তাপমাত্রার সব রেকর্ড ভাঙতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।

এই পরিস্থিতির জন্য বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনকে কারণ হিসেবে বর্ণনা করলেও মোটাদাগে দেশের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন। অপরিকল্পিত নগরায়ন, নির্বিচারে বন ধ্বংস, সবুজায়নে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে না পারা, ভূ-গর্ভস্ত পানির অধিক ব্যবহারের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ভূমি তপ্ত হয়ে ওঠাকে দায়ী করছেন। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, ব্যাপক সচেতনতা তৈরিতে। এছাড়া ব্যাপক বৃক্ষরোপণ এবং জলাভূমি রক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যতে কিছুটা হলেও পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স গরম বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বলছে, গত ২৮ বছরে ঢাকা থেকে ২৪ বর্গকিলোমিটার সম-আয়তনের জলাধার ও ১০ বর্গকিলোমিটারের সমপরিমাণ সবুজ কমেছে।

জানতে চাইলে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ শাহ আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা একটা উন্নত দেশের দিকে এগোচ্ছি। আমাদের স্থাপনা বাড়বেই। আমরা আমাদের পানির স্তর ঠিক রাখতে পারবো না। এটা যদি বন্ধ করতে পারি, তাহলে একটা সুবিধা হবে। ভূমি এত শুকাবে না। পানির লেয়ারটা নিচে চলে গেলে রোদ হলেই ভূমি একদম শুকিয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে একটা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ঢাকায় বিল্ডিং হচ্ছে অপরকল্পিতভাবে, কোনো গাছপালা নেই।  ঢাকায় যেখানে রাস্তারই জায়গা নেই সেখানে গাছ লাগানোর মতো জায়গা কোথায়? এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।’

প্রকৃতির বিরুদ্ধে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর অপরাধে দায় বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে ভোগ করছে জানিয়ে এই আবহাওয়া বিজ্ঞানী বলেন, ‘প্রকৃতি ধ্বংস করছি। ইন্ডাস্ট্রি বানাচ্ছি। চুল্লি বানাচ্ছি। ইটের ভাটা বানাচ্ছি। সাগরে বোমা ফেলছি-এসব কারণে সাগরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। এসব কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। লবণাক্ত বাড়ছে। সারা পৃথিবীর মানুষ এগুলো করছে আর আমরা এর ভুক্তভোগী হচ্ছি।’

দাবদাহের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের দিক দিয়ে যে বাতাসটা আসে তা গরম বাতাস। প্রতি বছর এটা হয় না, এবার হচ্ছে। সেখানে যদি বৃষ্টি বা কালবৈশাখী হতো তাহলে গরম বাতাসটা আসতো না। এখন সেখানেও গরম বাতাস হচ্ছে। হিট ওয়েভগুলো সেখান থেকে এখানে আসছে। আমাদের এখানেও বৃষ্টি হচ্ছে না। আমাদের মাটি শুকিয়ে গেছে, জলাশয় শুকিয়ে গেছে, তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।’

গত প্রায় দুই সপ্তাহ বাংলাদেশে বাড়তি তাপমাত্রায় জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। যতটা তাপমাত্রা পারদে উঠছে, তারচেয়ে অনুভূত হচ্ছে বেশি। ঢাকায় পরিস্থিতি চলছে বিপজ্জনক। হিটস্ট্রোকে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবরও আসছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় প্রকাশিত আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়েছে, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আর তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে। এছাড়া আরও অনেকগুলো জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের যে তাপপ্রবাহ বইছে তা অব্যাহত থাকতে পারে। এ কারণে, গতকাল বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর নতুন করে আরও ৩দিনের জন্য ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে। বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার একদল গবেষক ঢাকার তাপমাত্রা নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে। গবেষণাটি চলতি এপ্রিলে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অব অ্যাটমস্ফেয়ারিক সায়েন্স–এ প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, একই আবহাওয়াগত অবস্থার মধ্যেও ঢাকা শহরের চেয়ে এর পার্শ্ববর্তী জেলা মাদারীপুরের তাপমাত্রার পার্থক্য থাকছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। অর্থাৎ ঢাকার বাতাস গরমের পাশাপাশি মাটি, পানি ও সব ধরনের উপাদান সব সময় বেশি গরম থাকছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় মাত্র ২৯ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় গাছপালা বা ফাঁকা স্থান রয়েছে, যা ১৯৯৫ সালে ছিল প্রায় ৫২ দশমিক ৪৮ বর্গকিলোমিটার। অন্যদিকে জলাভূমি এলাকা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটারে, যা ১৯৯৫ সালে ৩০ দশমিক ২৪ বর্গকিলোমিটার ছিল। যদিও একটি আদর্শ শহরে ১৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ শতাংশ জলাভূমি থাকার নিয়ম রয়েছে।

২৯ মার্চে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী আরবান ক্লাইমেট-এ ‘চেঞ্জেস ইন হিউম্যান ডিসকমফোর্ট অ্যান্ড ইটস ড্রাইভার ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ছয় দশকে শুধু ঢাকায় তীব্র এবং অসহনীয় গরমের দিনের সংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহওয়া অধিদপ্তর। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ জেলাসহ বরিশাল, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। মঙ্গলবার সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পরের দিন ১ মে বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।

দেশের আবহাওয়া যেভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে বিষয়টিকে অ্যালার্মিং হিসেবে দেখছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানী মোহাম্মদ শাহ আলম। এই ধরনের আবহাওয়া সামনের বছরগুলোতে থাকলে খাদ্যে প্রভাব পড়তে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, মুরগি মারা যাচ্ছে, গরু অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমাদের শস্য উৎপাদনও কমে যাবে। দাবদাহের কারণে খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব পড়বে। আমরা যে অন্য দেশ থেকে আনবো তাদেরও উৎপাদন থাকবে না। বিশ্বব্যাপী এটা হবে। সুতরাং আমাদের ভাবতে হবে।’

এ সময় ভূগর্ভস্ত পানি রিজার্ভ রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘তা না হলে ৫০ বছর পর দেখবেন ভূগর্ভস্ত পানিই নেই। ভূ-উপরিভাগের পানি ব্যবহার করতে হবে। পানির লেয়ার যত নিচে নামবে একটু রোদে ভূমি তত বেশি তপ্ত থাকবে। এতে ভূমির তাপমাত্রাও বাড়বে।’ 

শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2014 Amar News
Site Customized By Hasan Chowdhury