তাঁবুর ক্ষীণ প্লাস্টিকের ওপারে শিশুরা কুকুরের ডাক শুনতে পাচ্ছিল। কুকুরের ভয়ঙ্কর চিৎকার শুনে রিহ্যাব আবু দাক্কার সাত সন্তান তাদের মায়ের চারপাশে ভিড় করে। তাঁবু থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে কুকুরগুলো কবর থেকে একটি মৃতদেহ টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্যের ভয়াবহতা কোনো শব্দের মাধ্যমে বর্ণনা করতে পারছিলেন না আবু দাক্কা।
আবু দাক্কা বিবিসিকে জানান, শিশুরা কুকুরকে মৃতদেহ খেতে দেখেছে। বেড়ার পাশে তারা একটি মানুষের পা পড়ে থাকতে দেখেছিল।
রিহ্যাব আবু দাক্কা বলেন, ‘আজ সকালে কুকুররা কবর থেকে একটি মৃতদেহ বের করেছিল এবং তা খেয়েছিল। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত কুকুররা আমাদের ঘুমাতে দেয় না… বাচ্চারা আমাকে ধরে রাখে কারণ তারা অনেক বেশি ভয় পায়।’
এই কুকুরগুলো দল বেঁধে আসে। এগুলো একসময় গৃহপালিত ছিল, যাদের মালিক এখন মৃত বা বাস্তুচ্যুত। মালিকবিহীন এসব কুককুর রাফাহ এর বিদ্যমান জনসংখ্যার সাথে মিশে গেছে। তারা সবাই এখন বন্য এবং তারা যা পায় তা-ই খায়। কবরস্থানে অসংখ্য অগভীর কবর রয়েছে যেখানে বাস্তুচ্যুত লোকজন তাদের স্বজনদের মৃতদেহ রেখেছে। যুদ্ধ শেষ হলে এলাকার কবরস্থানে দাফনের জন্য এভাবে স্বজনদের কবরে রাখা হয়েছে। কুকুরকে মৃতদেহের থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করার জন্য কিছু কবরের উপর ইট স্থাপন করেছে আত্মীয়রা।
বাস্তুচ্যুত আবু দাক্কা অসহায় ও ক্লান্ত। কবরের দুর্গন্ধ রোধ করতে তিনি মুখ ও নাক কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বা আমার সন্তানদের কবরস্থানের পাশে বসবাস করা উচিত তা আমি মানতে পারছি না। আমার সন্তান তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আজ খেলার পরিবর্তে সে একটি কবর আঁকছিল এবং মাঝখানে সে একটি মৃতদেহ এঁকেছিল। এইগুলি হল ফিলিস্তিনের সন্তান… কি বলবো দুভোর্গ!, দুর্ভোগ শব্দটিও দিয়েও এর ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামলার পর থেকে রাফাহতে ১৪ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। যুদ্ধপূর্ব জনসংখ্যার তুলনায় এই সংখ্যা পাঁচগুণেরও বেশি। ছোট্ট শহরটির প্রতি বর্গকিলোমিটার এখন ২২ হাজারেরও বেশি লোক বাস করছে।