মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া এলাকায় আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। কম খরচে অল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়াতে স্থানীয় চাষীরা মিষ্টি কুমড়া আবাদে ঝুকেছেন।
উপজেলার বিস্তীর্ণ জমিতে বড় বড় মিষ্টি কুমড়া পরিপক্ক হয়ে আছে। উর্বর মাটি হওয়াতে মিষ্টি কুমড়া গুলো প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি হয় যার ফলে এই অঞ্চলের মিষ্টি কুমড়ার চাহিদা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র। অপর দিকে ঢাকার সঙ্গে পন্য পরিবহনের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়াতে চাহিদা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার ঘিওর উপজেলায় বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন তুলনা মূলক ভাবে একটু নিচু হওয়াতে জমিতে পানি জমাট বাঁধে আর এই কারণেই মৌসুমি সবজি আবাদে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়। ধীর্ঘ দিন যাবত এই অঞ্চলে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয় তবে অল্প সময়ে অধিক মূল্য পাওয়াতে স্থানীয় চাষীরা এই আবাদের দিকে মনোনিবেশ করেছেন। জমি প্রস্তুত থেকে মিষ্টি কুমড়া পরিপক্ব হতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই মাস, অন্য সবজি আবাদের চেয়ে খরচও অনেকাংশেই কম তবে লাভ বেশি। স্থানীয় চাষীদের বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হয় না এই মিষ্টি কুমড়া, বাইকাররাই জমির সব কুমড়া একেবারেই কিনে নেয়। প্রতিটি কুমড়া আকার ভেদে তিন থেকে ১০ কেজিও হয়ে থাকে। মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৮/৯ টার দরে বিক্রি হয়ে থাকে তবে খুচরা বাজারে এর দর দ্বিগুণ পর্যন্ত হয়। স্থানীয় পাইকারা চাষীর জমি থেকে পরিপক্ব মিষ্টি কুমড়া তুলে নির্দিষ্ট একটি স্থানে রাখে এবং বড় বড় ট্রাক যোগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারী আড়তদে নিয়ে বিক্রি করে।
বালিয়াখোড়া এলাকার মিষ্টি কুমড়া চাষী মো: মহর আলী বলেন, এ বছর আট বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছি এবং প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমে ফলন ভালো হয়েছে, প্রতি বিঘার মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বিক্রি করেছি। অন্য ফসলের চেয়ে অধিক লাভ হওয়াতে এবছর ৫ বিঘা জমিতে বেশী মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছি। নায়েব নামের আরো এক চাষী বলেন, আমাদের এই অঞ্চলের মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হচ্ছে ধীর্ঘ দিন যাবত তবে এখন তা আরো বেড়েছে। জমি প্রস্তুত থেকে কুমড়া তোলা পর্যন্ত তেমন খরচ হয় না, আবার সময়ও লাগে অন্য ফসলের চেয়ে কম। এ অঞ্চলের মাটি ভালো হওয়তে মিষ্টি কুমড়ার ফলনও আশানুরূপ হয়। আমাদের-তো জমি থেকে কুমড়া তুলে আনতে হয় না,পাইকাররা জমি থেকেই কিনে নেয়। যে দিন পাইকররা ট্রাক যোগে মিষ্টি কুমড়া নিয়ে যাবে সে দিন শুধু ওজন করে দিতে হয়। এ বছর অন্য সময়ের চেয়ে দামটা কম হলেও লাভ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন এই চাষী।
ঘিওর এলাকার পাইকার জামাল বেপারী বলেন,আমরা স্থানীয় চাষীদের কাছ থেকে মিষ্টি কুমড়া কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকি। এই অঞ্চলের মিষ্টি কুমড়ার চাহিদা রয়েছে গাজীপুর নারায়ণগঞ্জ রাজশাহী চিটাগাং অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। যে কারণে ওইসব অঞ্চলের বড় বড় আড়তদাররা আমাদেরকে অগ্রিম টাকা দিয়ে এই মিষ্টি কুমড়া কেনার জন্য ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় পাঠান।
ঘিওর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাজেদুল ইসলাম বলেন, ঘিওরের বালিয়াখোড়া অঞ্চলের মিষ্টি কুমড়ার চাহিদা দেশের সর্বত্রই রয়েছে।নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে এই অঞ্চলের মিষ্টি কুমড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাইকাররা ট্রাক যোগে নিয়ে যান। স্থানীয় চাষীদের এ মিষ্টি কুমড়া আবাদের সকল ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়।