মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির দুই নেতা অংশ নেন। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফার উপজেলা নির্বাচনে তাঁরা পরাজিত হলেন।
বিএনপির এ দুই নেতা একদিকে হারালেন দলীয় পদ, অন্যদিকে হেরে গেলেন ভোটে। দুই কূলই হারিয়ে তাঁদের মধ্যে এখন হতাশা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন অনেকটা ধ্বংসের মুখে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচনে অনেক বেশি ভোটের ব্যবধানে তাঁরা পরাজিত হয়েছেন। একজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জন করেছে বিএনপি। ভোট বয়কট এবং বহিষ্কারের তকমা কাঁধে নিয়ে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন জেলা বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সদস্য খন্দকার লিয়াকত হোসেন।
তফসিল ঘোষণা ও প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত বিএনপির বহিষ্কৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ও লিয়াকত হোসেন ভোটের মাঠে কোনো অবস্থান তৈরি করতে পারেননি। বিএনপির ভোট বয়কট ও লিফলেট বিতরণের ফলে তাঁরা আরও বেকায়দায় পড়েছিলেন।
ঘিওর উপজেলা সহ-রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনও আমিনুল ইসলাম জানান, গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে মাহবুবুর রহমান (জনি) শালিক প্রতীকে ২১ হাজার ৮০৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। খন্দকার লিয়াকত হোসেন পেয়েছেন ৩২১ ভোট। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ৩ হাজার ৭১৩ ভোট।
উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন বিএনপি নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তাঁদের সমর্থিত ভোটাররা ভোট বয়কট করেছেন। তাছাড়া বিএনপি ঘরানার ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ভোটের ময়দানে তেমন কোনো উত্তাপ নেই। ভোট বয়কটে তাঁরা উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে লিফলেট বিতরণ করে ভোটারদের ভোটদানে বিরত থাকার আহ্বান জানান। নির্বাচনী প্রচারের শুরুতে বিএনপি নেতা প্রার্থীদের সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীদের অনেকেই অংশ নেন। তবে দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর প্রার্থীদের কাছ থেকে সরে যান দলীয় নেতা-কর্মীরা। প্রচার-প্রচারণায় আর অংশ নেননি।
মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতার নেতৃত্বে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট বয়কটে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয় প্রথম ধাপের নির্বাচনের আগে থেকেই। জেলার সাতটি উপজেলার ৬৫ ইউনিয়নেই ভোট বয়কটের আওয়াজ তুলে দলটির নেতা-কর্মীরা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেছেন, যার ফলে প্রথম ধাপে সিংগাইর ও হরিরামপুর উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত চার নেতার ভরাডুবি হয়েছে। ঘিওর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে দলের বহিষ্কৃত দুই প্রার্থীর একই পরিণতি হলো।
ঘিওর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর মানিকুজ্জামান বলেন, ‘ভোট বয়কট দলীয় সিদ্ধান্ত। এই লক্ষ্যে আমরা সাধারণ মানুষের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেছি, যাতে তাঁরা ভোটদানে বিরত থাকেন। এখানে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দুজন চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহণ করলেও তাঁরা অতি নগণ্য ভোট পেয়েছেন।’
বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা খন্দকার লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘বিএনপি ভোট বয়কটের কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। এ ছাড়া আমার ওপর একজন প্রভাবশালী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা হামলা-মামলার কারণে আমি মূলত নির্বাচনের সাত দিন আগে থেকে মাঠে ছিলাম না।’
এ বিষয়ে জানতে আরেক প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি ধরেননি। তবে নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং আমার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ভোটারদের অনুরোধে আর ভালোবাসা উপেক্ষা করতে না পেরে আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।’
এ বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাঁরা বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দিয়েছেন। এ কারণে দল থেকে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে।’
নিউজ ডেস্ক:/রা.আ/আমার নিউজ