এস এম আকরাম হোসেন :
মানিকগঞ্জের গিলন্ড এলাকায় অবস্থিত মুন্নু মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে শিশু মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতালের দায়িত্বরত স্টাফদের অবহেলা নাকী স্বজনদের ভুল এ নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে ? মৃত্যুর মূল কারণ কী? পরবর্তীতে হাসপাতালে ভাঙচুর ও দায়িত্বরত স্টাফদেরকে মারধর এর সাথেই জড়িত কারা?
রবিবার (২জুন) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে মুন্নু মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু শিবালয় উপজেলার বগচর গ্রামের সোহেল গাজীর একমাত্র ছেলে।
হাসপাতালে থাকা নিহত শিশু রেদোয়ানের দাদা ফয়েজ উদ্দিন বলেন, সন্ধ্যা থেকে অসুস্থ। শ্বাসকষ্ট বেরে গেলে রাত দেড়টা অথবা ২টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অবস্থা খারাপ হলে ঢাকায় রেফার করে এবং বিল পরিশোধ করতে বলে। আমি প্যারালাইসের রোগী। আমি ছাড়া কোন ছেলে মানুষ হাসপাতালে ছিল না। আমাদের কারো কাছে বিল পরিশোধ ও ঢাকায় নেওয়ার মতো কোন টাকা ছিল না। আমি অসুস্থ থাকায় হাসপাতালের কোন কর্মকর্তাকে গিয়ে সমস্যার কথা বলবো বলতে পারিনি। পরে আমার নাতি সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে মারা যায়।
এ বিষয়ে শিশু রেদোয়ানের চাচা আবু হোসেন বলেন, সকালের দিকে অবস্থা কিছুটা ভালো হলে তাকে রেখে তার বাবা চাকুরিতে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে নার্স বলে রোগীর অবস্থা সিরিয়াস ঢাকায় শিশু হাসপাতালে রেফার করে দিয়েছে। হাসপাতালের বিল জমা দিয়ে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যান। হাসপাতালে তখন রোগীর অসুস্থ দাদা ছাড়া কোন পুরুষ মানুষ ছিল না এ কারনে তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল। সে সময় রোগীর সাথে তার দাদী আর মা ছিল। হাসপাতালের সিনিয়র কারও সাথে কথা বলবে তারা বুঝে উঠতে পারে নাই। এভাবে অনেক অনেকটা সময় চলে যায়। পরে বাচ্চাটা মারা যায়। হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আছে কী না জানতে চাইলে বলেন, আমাদের মানিকগঞ্জএ মুন্নু হাসপাতালের পরে আর কোন ভালো বেসরকারি হাসপাতাল নেই। এরপরে আছে সাভারে। মুন্নু হাসপাতালে সেবা বরাবরই ভালো। কিন্তু কতিপয় স্টাফদের কারণে হাসপাতালের সুনাম কিছুটা ক্ষুন্ন হচ্ছে। হাসপাতাল ভাঙচুর এবং স্টাফদের মারধর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলেন,কে বা কারা এমন করেছে আমরা জানি না। আমরা তখন ব্যাস্ত ছিলাম। যারা হাসপাতালে এমন কর্মকান্ড করেছে তারা আমাদের কেউ না।
মহাদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাজাহান বলেন, মুন্নু হাসপাতাল মুন্নু সাহেব এর একটা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। মানিকগঞ্জে মুন্নু হাসপাতাল ছাড়া আর কোন বেসরকারী পর্যায়ে এর চেয়ে ভালো হাসপাতাল নেই। এখানকার সেবা এবং পরিবেশ অনেক ভালো। কোন ৩য় ব্যাক্তি এর সুনাম নষ্ট করছে।
সিকিউরিটি অফিসার শামসুদ্দোহা বলেন, হঠাৎ ৪/৫জন যুবক এসে আমাদের ওপর আক্রমণ করে। হাসপাতালে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে। তাদের বুঝাতে গেলে তারা আমাদেএ উপর আক্রমণ করে। আমাদের হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি দেয়। আমাদের সিকিউরিটিদের গায়ে হাত তুলে। তাদের এমন পরিস্থিতি দেখে অন্যান্য রোগীরা ভয়ে আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে।
হাসপাতালের ঘটনার বিষয়ে মোবাইল ফোনে ষ্টাফদের ওপর হামলার প্রধান অভিযুক্ত সাকিব খান বলেন, শিশুটি আমার ভাতিজা। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা। আমার কাছে কোন হাতুড়ি বা কিছুই ছিল না। আমার শরীরে এখন অনেক জ্বর,শরীর খারাপ কথা বলতে পারছি না বলে ফোন কেটে দেয়।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক এস.এম মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা ফ্রী মেডিক্যাল ক্যাম্প করি। আমরা সর্বদা রোগীদের ৪০ শতাংশ, ৫০শতাংশ এমন কী ফ্রী চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। সেখানে ৩ হাজার টাকার জন্য আটকে রাখার প্রশ্নই আসে না। তবুও কারও অদক্ষতায় যদি এমন হয় তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যাবস্থা নিব। ইতিপূর্বে আমরা একজনকে বহিষ্কার করেছি। তাদের সকালে আমরা ঢাকা রেফার করি কিন্তু তাদের সাথে পুরুষ কেউ না থাকায় নিতে পারে না।হঠাৎ ১০টা ৩০মিনিট ৪/৫জন যুবক হাতুড়ি,লাঠি নিয়ে আমার হাসপাতালে এসে ভাঙচুর করে। হাসপাতালেতো কেউ হাতুড়ি,লাঠিছুটা নিয়ে আসে না। তারা পরিকল্পিত ভাবে আক্রমণ করে। আমাদের স্টাফদের মারধর করে।মূলত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঢাকায় রেফার করলে তারা সময়মত নিতে পারে নি এবং পরবর্তীতে তারা আমাদের উপর হামলা করে। মূলত এই ঘটনাকে চাপা দিতে তারা এই ঘটনা সাজিয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা.মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শনিবার দিনগত রাত ২টার দিকে হাসপাতালে শিশুটিকে ভর্তি করা হয়। সকালে আমরা ঢাকায় রেফার করলে তাদের সাথে কোন পুরুষ স্বজন না থাকায় তারা ঢাকা নিতে পারে নাই। এবং তাদের সহযোগিতা লাগবে আমাদের বললে আমরাও সহযোগিতা করতাম। আমাদের এটা চ্যারিটেবল প্রতিষ্ঠান। আমরা প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জনকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। সেখানে ৩ হাজার টাকার জন্য কীভাবে আমরা আটকে রাখি? যার বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ এনেছে তাকে আমরা সাথে সাথেই বহিষ্কার করেছি। এছাড়া সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করছি।
এরপরে রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ভর্তির পর থেকে কোন পুরুষ স্বজন তাদের সাথে ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করে পুরুষ স্বজনরা এসে হাসপাতালে হট্টগোল তৈরি করে এবং আমার স্টাফদের মারধর ও ভাঙচুর করে।আমার প্রায় ৮জন স্টাফকে তারা মারধর করে আহত করে। একই সাথে যারা হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর এবং মারধর করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুসারে ব্যাবস্থা নিব। হাসপাতালের সিসি টিভির ফুটেজে দেখে জানা যায় এই হামলার ঘটনার নেতৃত্বে ছিল বেউথা এলাকার সাকিব খান। তার হাতে হাতুরীও ছিল।
মুন্নু মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের চেয়ারম্যান আফরোজা খানম বলেন, আমার বাবা হারুনর রশীদ খান মুন্নু হাসপাতালটি মানুষের সেবা করার জন্য নির্মাণ করেন। আমিও তার দেখানো পথে হাটার চেষ্টা করেছি। হয়তো কোন কারণে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এবিষয়ে আমি সকলকে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে কেউ দায়িত্বে অবহেলা করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।