স্টাফ রিপোর্টার:
দাম্পত্যকলহের জেরে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় স্ত্রীসহ তিনজনের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছেন এক যুবক। এতে ওই তিনজনের শরীর ঝলছে গেছে। শুক্রবার সকালে উপজেলার গওলা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাঁদেরকে উদ্ধার করে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদেরকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জানি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন, ঢাকার ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের হাসান আলীর স্ত্রী শারমিন আক্তার (৩০), তাঁর চাচী শিরিন আক্তার (৫৫) ও চাচাতো ভাই রুবেল হোসেন (৩)।
সাটুরিয়া থানা-পুলিশ, ভূক্তভোগী পরিবার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর আগে ধামরাইয়ের রাজাপুর গ্রামের হাসান আলীর সঙ্গে সাটুরিয়া উপজেলার গওলা গ্রামের মৃত আতোয়ার হোসেনের মেয়ে শারমিন আক্তারে বিয়ে হয়। এই দম্পতির ৮ বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। কয়েক বছর ধরে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্যকলহ দেখা দেয়। এ নিয়ে হাসান তাঁর স্ত্রী শারমিনকে মারধরও করতেন। এই দাম্পত্য কলহের জেরে গত সোমবার অভিমান করে ছেলেকে নিয়ে শারমিন গওলা গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। শুক্রবার সকালে হাসান শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখানেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে শারমিন পাশের চাচার বাড়িতে যান। সকাল ১০টার দিকে হাসান চাচা শ্বশুরের ঘরের ভেতর গিয়ে শারমিনের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় চাচী শিরিন ও চাচাতো সম্বন্ধি (শারমিনের চাচাতো ভাই) রুবেল তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে তাঁদের শরীরেও কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন। এতে শারমিন ও তাঁর চাচী শিরিন ও চাচাতো ভাই রুবেলের গায়ে আগুন ধরে যায়। পরে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ততক্ষণে তাঁদের তিনজনের শরীর আগুনে ঝলসে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁদেরকে উদ্ধার করে শিরিন ও রুবেলকে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এ দিকে শারমিনকে জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জানি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
বেলা ১২টার দিকে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা া়, অগ্নদগ্ধ মা শিরিন ও ছেলে রুবেল কাতরাচ্ছেন। চিকিৎসক ও নার্সরা তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাঁদের শরীরের অধিকাংশ ঝলছে গেছে।
এ সময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত এক নারী চিকিৎসক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, কি কারণে তাঁদের শরীর ঝলসে গেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জানি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে শারমিনের মামা মো. বাসু বলেন, বিনা কারণে হাসান তাঁর ভাগ্নি শারমিনকে প্রায়ই মারধর করতেন। এ নিয়ে সামাজিকভাবে মিমাংসার জন্য একাধিকবার সালিসও হয়েছে। আজ সকালে তাঁর ভাগ্নিকে হত্যার উদ্দেশে হাসান শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে ভাগ্নির চাচী ও চাচাতো ভাইকেও একইভাবে আগুন দিয়ে ঝলসে দিয়েছেন।
এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত হাসান পলাতক রয়েছেন। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বার বন্ধ থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাটুরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মানবেন্দ্র বালো বলেন, খবর পয়ে ওই বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্যকলহের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।