সাটুরিয়া থেকে পার্থ কর্মকার:
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় স্ত্রীর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়ার ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্ত্রী ও শ্যালকের মৃত্যুর পর বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা গেলেন শাশুরি।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থেকে ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেলে মারা যান স্ত্রী শারমিন আক্তার এবং স্ত্রীর চাচাতো ভাই রুবেল। বৃহস্পতিবার দুপুরে চাচি শিরীন আক্তারও মৃতু হয়। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে ৩ জনই মারা গেলেন।
ঘটনার পরেই ১৩ সেপ্টেম্বর নিহত শারমিনের ভাই শামীম বাদী হয়ে শারমিনের স্বামী হাসান আলীকে (৩২) আসামি করে সাটুরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে ঘাতক হাসান আলীকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ।
জানা যায়, উপজেলার সাটুরিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম গওলা গ্রামের মৃত হানের মেয়ে শারমিন আক্তারের সাথে ধামারাইয়ের রাজাপুর গ্রামের হাসান আলীর ১০ বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ৯ বছরের রোহান নামের এক ছেলে আছে। বিয়ের পর থেকেই স্বামী তাকে অমানবিক নির্যাতন করত। এ নিয়ে শারমিন আক্তার বেশ কয়েকবার বাবার বাড়ি চলে আসে।
সাটুরিয়া ইউপি চেয়াররম্যান মো. আনোয়ার হোসেন পিন্টু বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার শারমিন আক্তার বাবার বাড়ি এসে স্বামী হাসান আলীকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ খবর শুনে হাসান আলী শুক্রবার সকালে শ্বশুরবাড়ি আসেন। স্বামী আসার খবর শুনে শারমিন তার চাচার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এ সময় হাসান আলী চাচা শ্বশুরবাড়ির বাথরুমের উপর দিয়ে রুমের ফলস সিলিং ভেঙে রুমে প্রবেশ করে। পরে তিনি পেট্র্রোল দিয়ে শারমিনের শরীরে আগুন ধরিয়ে হত্যা চেষ্টা করে। এ সময় শারমীনকে বাঁচাতে এসে চাচি শিরীন আক্তার ও চাচাতো ভাই রুবেলের শরীরেও আগুন লেগে যায়।
পরে স্থানীয়রা তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
শারমিনের ভাবি লিজা পারভিন বলেন, বহস্পতিবার রাতে ননদ শারমিন তার স্বামীকে তালাক দেবে বলে সব ধরণের কাগজপত্র ঠিক করছিল। কিন্তু এ খবর পেয়ে ননদের স্বামী হাসান আলী শুক্রবার সকালে এসে শারমিনের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। শারমিনকে বাঁচাতে এসে চাচি শিরীন আক্তার ও চাচাতো ভাই রুবেলের শরীরেও আগুন লেগে যায়।
লিজা আরো বলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার শারমিন ও রুবেল মারা যায়। বৃহস্পতিবার শারমিনের চাচী শিরীন আক্তারও মা যায়।
সাটুরিয়া ইউপি চেয়াররম্যান মো. আনোয়ার হোসেন পিন্টু আরো বলেন, ওই দম্পতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলছিল। স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেবে শুনে স্বামী হাসান আলী গায়ে পেট্রোল দিয়ে স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় আরো দুইজন আগুনে পুড়ে গেছে। তিনজনই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে।
সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত মানবেন্দ্র বালো বলেন, ঘটনার রাতেই স্বামীকে আসামী করে মামলা হলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।