স্টাফ রিপোর্টার: মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা ইউনিয়নের উত্তর চানপুর গ্রামে ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষের যাতায়াতের প্রধান রাস্তার উন্নয়ন কাজে বরাদ্দ পাওয়া ৮০ হাজার টাকা গায়েব হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই টাকার বরাদ্দ দেয়া হলেও বাস্তবে রাস্তায় কোনো সংস্কার কাজ হয়নি বলে দাবি করছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগে উঠে এসেছে, চালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কাজি আব্দুল মজিদের সঙ্গে যোগসাজশে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মো. শামছুল হক মোল্লা , মমেজউদ্দিন মোল্লা, ছালাম মোল্লাসহ বেশ কয়েকজন এই টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। বরুনা, সাপাইর, কল্যাণপুর এবং উত্তর চানপুর গ্রামের মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করেন। এলাকার ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রকল্পের সভাপতি মির্জা সোলাইমান হোসেন রানাও এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তার দাবি, প্রকল্পের অর্থ চেয়ারম্যান ও তার ঘনিষ্ঠরা আত্মসাৎ করেছেন।
এছাড়াও, উত্তর চানপুরে নতুন মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তা সংকুচিত করার অভিযোগও এসেছে শামছুল হক মোল্লার বিরুদ্ধে। যদিও তিনি নিজেই এই রাস্তার নির্মাণ প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন। জানা গেছে, রাস্তার দুই পাশে থাকা ৩২ জন জমির মালিকের মধ্যে তিনিও একজন। স্থানীয়দের দাবি, রাস্তা নির্মাণের সময় টাকার ভাগ বসাতে চেয়েছিলেন অভিযুক্ত শামছুল।
এ বিষয়ে হরিরামপুর উপজেলার ইউএনও ও এসিল্যান্ড রাস্তা রক্ষার মত দিলেও শামছুল মুন্সি নানা কৌশলে রাস্তা বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি স্থানীয়দের।
উত্তর চানপুর পশ্চিমপাড়া থেকে পূর্বপাড়া যাওয়ার রাস্তায় আবার নতুন করে ২লক্ষ ১০ হাজার টাকার বরাদ্দ দেয় ইউনিয়নটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর। এখন এই প্রকল্পের কমিটিতেও কৌশলে জায়গা করে নিয়ে শামছুল মুন্সি রাস্তার দুই পাশের বাড়ি ওয়ালাদের কাছ থেকে টাকা দাবি করে বসে। ২লক্ষ ১০ হাজার টাকায় নাকি রাস্তা মেরামত সম্ভব নয় এই অজুহাতে এলাকার গরীব কৃষকদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
তবে শুধু রাস্তাঘাট নয়, শামছুলের বিরুদ্ধে আরো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। চানপুর পূর্বপাড়া জামে মসজিদের ওয়াকফ করা জমি নিজ দখলে রাখার অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। মসজিদটি স্থানান্তরের পর, সাজানো নিলামের মাধ্যমে হাতবদল করে মসজিদের ঘর ও জমি দুই নিজ দখলে নিয়ে নেন শামছুল মুন্সি। বর্তমানে ওই জমি এবং মসজিদ উভয়ই তার নিয়ন্ত্রণে বলে অভিযোগ।
এবিষয়ে চানপুর পূর্বপাড়া জামে মসজিদের সাবেক ইমাম মাহমুদুল হাসান মুন্সি ওয়ায়েসী বলেন, আমাদের জনসংখ্যা বাড়া এবং জায়গাটাও অসুন্দর হওয়ার কারণে মসজিদটা আমরা স্থানান্তর করছি। পরে আওয়ামী লীগের সময় ক্ষমতা বলে মসজিদ তালা দিছে শামছুল মুন্সি। পরে সাইদুর মিয়ার হস্তক্ষেপে সে তালা খুলে দিলেও পকেট কমিটি করে মসজিদ কিনে নিছে। জায়গা কিনে নাই। মসজিদের ঘর বিক্রি হইছে কিন্তু জায়গা তো বিক্রি হয় নাই। এখন সে মসজিদ ও জমি দখলে রাখছে।
উত্তর চানপুর পশ্চিমপাড়া থেকে পূর্বপাড়া যাওয়ার রাস্তার বরাদ্দকৃত টাকার বিষয়ে স্থানীয় এ্যাডভোকেট মো. আশরাফ খান বলেন, আগের বরাদ্দকৃত টাকার কোন কাজ হয় নাই। এখন নতুন করে আবার বরাদ্দ আসছে তাই আমরা চাই এখন যে প্রকল্প আসছে তার সাথে আগের বরাদ্দকৃত টাকা যোগ করে রাস্তার সংস্কার কাজে ব্যবহার করা হোক। আওয়ামী লীগের দোসররা উই টাকা বাগভাটোয়ারা করেছে।
স্থানীয়বাসীন্দা মো. জাহাঙ্গীর আহমেদ বলেন, এই রাস্তার বরাদ্দকৃত ৮০ হাজার টাকা শামছুল হক বিশ্বাস, মোমেজ মাদবর আর ছালাম মোল্লা আর সভাপতির সাক্ষরে টাকা তুলছে সভাপতি পরে আমাদের যেটা বলল সে নাকি বার বার বলছিল কাজ করতে তারা করে নাই বলছে পরে করবে কাজ। এই কথা বলে তারা কাজ করে নাই। এখন তারা বলে টাকা নাই । টাকাটা তারা আত্মসাৎ করে ফেলছে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত শামছুল মুন্সি বলেন, ২০২০-২১ অর্থ বছরের বরাদ্দকৃত টাকা কি হয়েছে আমি জানি না। আমি ওই কমিটিতেই ছিলাম না। রাস্তার দুই পাড়ের লোকদের কাছে টাকা চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন কোন টাকা কাউর কাছে চাওয়া হয় নাই। রাস্তার স্বার্থে যদি সাইড বাই সাইড মাটি দেয় তবে টাকাটা কম লাগে। আর যদি সবাই মনে করে সাইড বাই সাইড মাটি দিতে পারতেছি না ঠিক আছে আমরা কিছু কিছু দিয়া রাস্তাটা কইরা লই। যদি সবাই দেয় তাহলে রেজুলেশন করে রাস্তা করা হবে আর যদি তা না দেয় যে টাকা আমরা পাইছি এই টাকা দিয়াই আমরা রাস্তায় ইট বিছাইয়া নিয়া যামু। বা ইঞ্জিয়ার সাব বলছে উনি ইট বিছায়া দিবে।
মসজিদের ব্যাপারে তিনি জানান, মুরুব্বিরা ওয়াকফ কইরা দিছে পূর্ব দক্ষিণ কনারে থিকা। আর ঘর উঠাইছে তারা পশ্চিম দক্ষিণ কনারে প্রায় ৬০ বা ৭০ বছর আগে। সাত আট বছর আগে আমি জানতে পারছি যেখানে মসজিদ এটা মসজিদের জায়গা না ওয়াকফ করা হইছে পূর্ব দক্ষিণে। পরে মসজিদ স্থানান্তর করার সময় এলাকার গণ্যমাণ্যরা ঘর মমু মোল্লার কাছে বিক্রি করছিল পরে তার কাছ থেকে আমি আবার নিছি ৯০ হাজার টাকায়।