স্টাফ রিপোর্ট ার: গত একযুগ ধরে গ্যাসের কোনো সেবা না পেয়েও প্রতি মাসে দুই কোটির বেশি বিল গুনছে মানিকগঞ্জের হাজারো গ্রাহক। গ্যাস সংযোগ থাকার পরও কার্যত গ্যাসহীন এই জেলার বাসিন্দারা প্রতিবাদ, আন্দোলন, এমনকি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েও সমস্যার সমাধান পাননি। বরং জনগণের ন্যায্য দাবির আন্দোলনে পুলিশের গুলি ও মামলার মুখে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন অনেকেই।
জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকেই ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে গ্যাস সরবরাহ। ২০১২ সালের শুরুর দিকেই তা পৌঁছে যায় প্রায় শূন্যের কোটায়। কিন্তু তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্যাস না দিলেও মাসিক বিল আদায়ে কোনো ছাড় দেয়নি। বর্তমানে জেলার বাসাবাড়িতে থাকা ২১,৭৭৩টি ডাবল ও ১,১০৯টি একক চুলার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি মাসে বিল আদায় করা হচ্ছে প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যার বাৎসরিক পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
সিএনজি পাম্প ও শিল্প কারখানাগুলোতেও একই অবস্থা। মোট ১৭টি সিএনজি স্টেশন এবং ৪৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানেও নিয়মিত গ্যাস বিল আসলেও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকেরও কম। তিতাস সূত্র জানায়, জেলার দৈনিক গ্যাস চাহিদা ২২.৬ এমএমসিএফডি হলেও সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ১১.৮ এমএমসিএফডি।
আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছিল মানিকগঞ্জবাসী। ২০১৪ সালে পৌর মেয়র রমজান আলীর নেতৃত্বে এক বিশাল মিছিলে পুলিশের টিয়ারশেল ও গুলিতে আহত হন মেয়র, সাংবাদিকসহ অনেক সাধারণ মানুষ। এরপরও আন্দোলন থামেনি। হাইকোর্টে রিট আবেদন করেও কোনো কার্যকর ফলাফল পাননি অনেক গ্রাহক।
বেউথা এলাকার ভুক্তভোগী আরশেদ আলী বলেন, আমি হাইকোর্টে রিট করেছি, তাও কোনো ব্যবস্থা হয়নি।
সেওতা এলাকার গৃহিণী ফরিদা ইয়াছমিন বলেন, মাসে এক হাজার টাকা বিল দিচ্ছি, অথচ সারা মাস গ্যাস আসে না। রান্না করি সিলিন্ডার আর লাকড়ি দিয়ে। এটা কি ন্যায্যতা?
জেলার ক্যাব সাধারণ সম্পাদক এবিএম সামছুন্নবি তুলিপ বলেন, এটি একটি ভয়াবহ প্রতারণা। আমরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অভিযোগ জানিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো সাড়া মেলেনি।
তিতাস গ্যাসের মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক অফিস এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও, জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা জানিয়েছেন, আমরা বিষয়টি তিতাস গ্যাসের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নজরে এনেছি। আশা করছি, দ্রুত সমাধান হবে।
এদিকে বহু গ্রাহক এখন নিজেরাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হচ্ছেন। একদিকে গ্যাসের বিল, অন্যদিকে সিলিন্ডার, লাকড়ি ও বিদ্যুৎ খরচ—চরম আর্থিক চাপে দিশেহারা জেলার সাধারণ মানুষ।
মানিকগঞ্জবাসীর প্রশ্ন—আর কতকাল চলবে এই গ্যাসহীন গ্যাসবিলের যন্ত্রণা?