স্টাফ রিপোর্টার: মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়নে প্রায় মাসখানেক আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া মেসার্স যমুনা ব্রিকসে কারণে এলাকার কৃষকদের ধানক্ষেতে ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ উঠেছে। তবে এ নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, ইটভাটার ধোঁয়ায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আবার কেউ এর পেছনে প্রাকৃতিক কারণ, বিশেষ করে অতিরিক্ত পোকামাকড়কে দায়ী করছেন।
ঘটনার পর পরই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হয়, যেখানে ৭১ জন কৃষকের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে অনেক কৃষকই জানেন না কিভাবে তাদের নাম সেই তালিকায় এসেছে। এ বিষয়ে ইটভাটার মালিক পক্ষের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে একটি পক্ষ গোপন তালিকা তৈরি করেছে এবং এতে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ বা সম্মতি নেওয়া হয়নি।
মালিকপক্ষের প্রতিনিধি মো. সুজন খান অভিযোগ করে বলেন, “একতরফা ভাবে আমাদের ওপর ক্ষতিপূরণের দায় চাপানো হয়েছে।” তিনি সঠিক ক্ষয়ক্ষতির নিরুপণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে পুনরায় তদন্তের আবেদন করেছেন।
তারা এও দাবি করেছেন যে, গত বছরও ইটভাটা চলছে সে বছর কোন ধরনের ক্ষয় ক্ষতির কোন অভিযোগ কেউ করেননি। ভাটার ধোয়ায় ক্ষতি হলে গত বছরও ধান নষ্ট হওয়ার কথা ছিলু। তাই এবার এমন ঘটনায় বিষয়টিকে তারা ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছে।
এবিষয়ে তালিকায় থাকা কৃষক হানিফ বেপারী বলেন, ‘ভাটার আগুনে খুব একটা ক্ষতি হয় নাই। এখানে আমার ৭২ শতাংশ জায়গা, ৫ থেকে ৭ শতাংশের মত আমার ক্ষতি হয়েছে’। এবার ধানের ফলন কেমন জানতে চাইলে তিনি জানান ‘ফলন বেশ ভাল হইছে’।
হরগজ মৌজায় দুইটি সেলু মেশিনের মালিক আব্দুল আলিম। তার মেশিন দিয়েই ৭১ জনের তালিকাকৃত কৃষক মালেকের জমির সেচ দেওয়া হয়। মালেকের জমির পাশে তার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ‘এটা মালেকের ক্ষেত। এই ক্ষেতে তেমন কোন ক্ষতি হয় নাই। আর লিস্টে যে ৭১ জনের নাম এতো লোকের ক্ষতি হয় নাই’।
তালিকায় থাকা আরেক কৃষক হরগজ ঘোসাইনগর গ্রামের মো. কাইমুদ্দিন। হরগজ মৌজায় তার ১১৪ শতাংশ জায়গা। তার ধানের জমির পাশে কথার ফাকে তিনি জানান, ‘১০০ শতাংশ জায়গার ধান আমার ভাল হয়েছে। আর এই ১৪ শতাংশ জায়গার ধান একটু কম হবে। এইটা ইটভাটার ধোয়ায়ই পুরছে নাকি আমার কপালে পুরছে আমি তা কইয়া পারুম না।’ তালিকায় কি কোন নাম দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘তালিকায় আমি কোন নামও দেই নাই’।
বর্তমানে এ ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় চলছে তীব্র আলোচনা ও বিতর্ক। কৃষকেরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে এখন দুইভাগে বিভক্ত। একটি অংশ ক্ষতি পূরণ আদায়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে আন্দোলন করলে বেশীর ভাগ কৃষকের ধারণা পোকামাকড়ের কারণেই এমনটি ঘটতে পারে। ফলে তারা কোন ক্ষতি পূরণ আদায়ের পক্ষে নয় বলে জানা যায়।
এদিকে, জানা গেছে গত ২৫ এপ্রিল থেকে ইটভাটাটি বন্ধ রয়েছে। এরপরও ২০ মে একটি অভিযান পরিচালনা করা হয় যেখানে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও চুল্লির কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। অভিযানের ফলে ইটভাটার মালিকপক্ষ উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলেও জানা যায়।