স্টাফ রিপোর্টার: বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় লোকসংগীত শিল্পী মহুয়া মুনা। তার অসাধারণ কণ্ঠশৈলীর জাদুতে অল্প সময়েই জায়গা করে নিয়েছেন ভক্ত-শ্রোতাদের হৃদয়ে। তার মৌলিক গানের সংখ্যা চল্লিশের অধিক। নিয়মিতভাবেই নতুন নতুন গান উপহার দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
মহুয়া মুনার জন্ম ও বেড়ে ওঠা মানিকগঞ্জ জেলার এক মনোরম পরিবেশে। তিনি মূলত লোকসংগীত শিল্পী। লোকসংগীতের পাশাপাশি আধুনিক ধারার গান গাওয়ারও দক্ষতা রয়েছে তার। তবে, লোক সংগীতের প্রতিই তার দুর্বলতা বেশি। জন্মস্থান মানিকগঞ্জের বিভিন্ন সংগীত একাডেমিতে তিনি গান শেখেন। সংগীতকে হৃদয়ে ধারণ করেই তিনি একজন সংগীতশিল্পী হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন।
সংগীতের সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে জানতে চাইলে মহুয়া মুনা বলেন, ‘পরিবারের সবার অনুপ্রেরণায় আজকে আমি সংগীতজগতে আসতে পেরেছি। বিশেষ করে আমার মা-বাবা এবং দাদা-দাদির কারণে। আমার দাদা একজন লোকসংগীতশিল্পী। আমি আমার দাদার মুখে প্রথম বাউল গান শুনি। আর আমার সংগীতজীবনের হাতেখড়ি আমার বাবার কাছে। মা আমার সংগীতচর্চার ব্যাপারে প্রচ- আগ্রহী ছিলেন। যদিও আমার বাবা-মা প্রফেশনালি গান করেন না। একপর্যায়ে আমি মানিকগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিসহ স্থানীয় বিভিন্ন গানের স্কুলে স্বল্প সময়ের জন্য গানের টিচারদের কাছে তালিম নিই। এভাবেই আমার সংগীতের সঙ্গে যুক্ত হওয়া।’
মহুয়া মুনা বর্তমানে বিভিন্ন স্টেজ প্রোগ্রাম, পাশাপাশি কিছু নতুন মৌলিক গানের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই ঈদে বেশ কয়েকটি নতুন গান প্রকাশিত হবে তার। গানগুলো নিয়ে তিনি দারুণ আশাবাদী।
তার ‘ভেলুয়া’ শিরোনামের একটি গান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গানটির গীতিকার ও সুরকার জাহাঙ্গীর রানা। মিউজিক করেছেন আকাশ মাহমুদ। এছাড়াও আকাশ মাহমুদের সাথে ‘জাদু করিলা’, ‘সুন্দরী রে’, ‘নয়া বউ’, ‘কোঁকড়া কোঁকড়া চুল’সহ আরো বেশ কিছু ডুয়েট গানও শ্রোতাদের ভালো লাগার তালিকায় রয়েছে। সামনের ঈদে আইকে মিউজিক স্টেশনের ব্যানারে আসছে তার এবং জনপ্রিয় তিন শিল্পী বন্যা তালুকদার, আকাশ মাহমুদ এবং শিমুল হাসানের কণ্ঠে, মনসুর সানির লেখা ও সুরে অসাধারণ একটি গান। গানটির সংগীত আয়োজন করেছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আকাশ মাহমুদ।
এছাড়া তরঙ্গ মিউজিক স্টেশনের ব্যানারে রনক রায়হানের লেখা এবং সুরে এ এন ফরহাদের সংগীত আয়োজনে গৌরব গোগোর কোরিওগ্রাফিতে, এম. এইচ রিজভীর পরিচালনায় ‘মেড ইন জিঞ্জিরা’ শিরোনামে একক মৌলিক গান আসছে তার। একাধিক চ্যানেল থেকে আরও বেশকিছু গান প্রকাশিত হবে বলে জানালেন মুনা।
মহুয়া মুনার মৌলিক গানের সংখ্যা ৪০টিরও অধিক। এরমধ্যে কিছু গান বেশ শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। গানগুলো দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। মুনা তার সংগীত ক্যারিয়ারে খুব ভালো কিছু গান রেখে যেতে চান, যে গানগুলো তাকে বাঁচিয়ে রাখবে।
লোকসংগীতের প্রতি আগ্রহী হলেন কীভাবে জানতে চাইলে বলেন, “লোকসংগীত মূলত বাংলার নিজস্ব সংগীত। যে গানে গ্রামবাংলার মানুষের জীবনের কথা, সুখ-দুঃখের কথা ফুটে ওঠে। আমি আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখেছি দাদাকে গান করতে। দাদার গান শুনে মানুষের চোখ থেকে পানি পড়ত। যে গান মাটি ও মানুষের কথা বলে, মানুষের মনকে শান্ত করে দেয়, যে গান শুনলে মানুষের চোখে জল আসে, সেই গানের ভিতরে কী আছে সেটা জানতেই লোকগানের প্রতি আগ্রহ। আর অন্যরকম একটা ভালো লাগাও কাজ করে ভেতর থেকে।”
লোকসংগীত এখন আর আগের মতো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। এখন যে-গানগুলো হচ্ছে তা মাটি ও মানুষের কাছে যাচ্ছে না। এব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানতে চাই, তিনি বলেন, “যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হয়। সংগীতশিল্পীরা দর্শক-শ্রোতাদের জন্য কাজ করে। আমাদের এই সময়ে যারা দর্শক রয়েছেন তারা যে-ধরনের গান পছন্দ করেন আমরা শিল্পীরা সেই ধরনের গানই করার চেষ্টা করি। আমাদের যারা গুণী লেখক আছেন তারাও তাই ট্রেন্ডিংয়ে গা না ভাসিয়ে পারছেন না। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে অনেক ভালো গান জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না অথচ ট্রেন্ডিংয়ে গা ভাসিয়ে চলার মতো গান যদি মার্কেটে দেওয়া হয় তখন ঠিকই সেগুলো ভিউ হচ্ছে। এখন যেহেতু দর্শক জনপ্রিয়তা বা ভালো কথার গান ভালো সুরের গানকে প্রাধান্য না দিয়ে ভিউয়ের ওপর ডিপেন্ড করে গান বানানো হচ্ছে, তাই কিছুদিন সেগুলো নিউজফিডে ঘোরাঘুরি করলেও তারপর সে গানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। তবে, আমি এই কথার সাথে একমত নই যে, এই সময়ের কোনো গানই সেরকম জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না বা মাটি ও মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। এখনো অনেক ভালো ভালো গান ভালো ভালো শিল্পীরা করছেন। অনেক গুণী লেখকেরা তাদের অসাধারণ লেখনী দিয়ে সেগুলো গুণী শিল্পীদের গায়কির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছেন এবং সেগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এই গানগুলো থেকে যাওয়ার মতোই গান। তবে, আমাদের নিজেদের ঐতিহ্য লোকগানকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এটা আমি একজন লোকগানের শিল্পী হিসেবে মনে করি।”
সংগীত জীবনের বিশেষ কোনো স্মৃতি আছে কি না জানতে চাইলে মুনা বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করতে গিয়ে অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে। তাদের সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মুহূর্ত আমার কাছে বিশেষ মূল্যবান স্মৃতি হিসেবে রয়েছে। সংগীতজীবনের বিশেষ কোনো স্মৃতির কথা যদি বলি তাহলে বলতে হবে, সংগীতজীবনে এসে ভালো বন্ধু পেয়েছি, যে-বন্ধুদের হয়ত-বা আমি এই সংগীত জীবনে না এলে পেতাম না।”
সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, মহুয়া বলেন, “সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে আমি ভালো কিছু গান করে যেতে চাই, যে-গানগুলো থেকে যাবে মানুষের মনে এবং বাঁচিয়ে রাখবে আমাকে।”
মহুয়া মুনার প্রিয় ঋতু শীত ও বর্ষাকাল। অবসর সময়ে রান্না করতে ও পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। খুব বেশি সময় পেলে পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে চলে যান। তার প্রিয় খাবার ভাত, সব ধরনের সবজি ও মাছ। এছাড়া ফাস্টফুড আইটেমও রয়েছে তার পছন্দের তালিকার শীর্ষে।