স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকা মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. জামাল উদ্দিন বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জয়লাভ করেছেন। তবে তার এই বিজয়কে ঘিরে হাসপাতাল অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের ছায়াতলে বেড়ে ওঠা এই কর্মকর্তা এখন রাজনৈতিক অবস্থান পাল্টে বিএনপি ঘেঁষা পরিচয় নিয়ে সংগঠনের নেতৃত্বে এসেছেন।
সূত্র জানায়, জামাল উদ্দিন ২০১৬ সালে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে নার্স হিসেবে যোগদান করেন। তিনি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আত্মীয় এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মজিদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ২০২০ সালে তিনি মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে যোগদান করেন।
এরপর থেকেই তিনি নার্সদের সংগঠন বিএনএ-তে সক্রিয় হয়ে উঠেন। আওয়ামীপন্থী প্যানেলের মাধ্যমে তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে হাসপাতালের কেনাকাটা, ঔষধ সরবরাহ, ডিউটি ব্যবস্থাপনা এবং নিয়োগে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি বিএনএ নির্বাচনে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হওয়ার পর থেকেই তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নার্সদের একটি বড় অংশ। অভিযোগ রয়েছে, জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতার ছবি ব্যবহার করে নির্বাচনী পোস্টারে নিজেকে বিএনপি-সমর্থক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে বিএনএ’র বর্তমান নেতৃত্বও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিএনএ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন,”ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হয়ে যিনি আগে আমাদের উপর জুলুম চালিয়েছেন, তিনি এখন ভোল পাল্টে বিএনপি পরিচয় নিচ্ছেন। এটি নার্সদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। তিনি অতীতে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে নানা অনিয়মে যুক্ত ছিলেন, এখনো সেই উদ্দেশ্যেই সংগঠনে এসেছেন।”
হাসপাতালের একাধিক নার্স অভিযোগ করেছেন, জামাল উদ্দিন তার পদের অপব্যবহার করে নারী সহকর্মীদের প্রতি অসদাচরণ করেছেন। গাইনি ওটি বিভাগের এক নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,”২০২২ সালে আমাকে চাকরি হারানোর ভয় দেখিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে বাধ্য করার চেষ্টা করেন। পরে আমি প্রতিরোধ করলে তিনি আমার স্বামীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এই ঘটনার জেরে আমার সংসার ভেঙে যায়।”
অভিযোগের বিষয়ে মো. জামাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংক্ষেপে বলেন,আমি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে আগ্রহী নই। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার এখতিয়ার আমার নেই।” এরপরই তিনি ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
এদিকে, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন হাসপাতালের অন্যান্য নার্স নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্টরা।