খাবার হিসেবে কাঠবাদামের জনপ্রিয়তা দিনদিন বেড়েই চলেছে। অবশ্য এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণও রয়েছে। কাঠবাদামের বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতাই বাদামটির জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব আলাবামার ডিপার্টমেন্ট অব হিউম্যান নিউট্রিশন অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ক্রিস্টি ক্রো-হোয়াইট বলেন, ‘কাঠবাদাম হলো একটি ফ্যান্টাসটিক সুপার ফুড, যেখানে ১০টিরও বেশি ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস রয়েছে। এসব পুষ্টি হার্ট ও রক্তনালীর স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।’
এছাড়া বাদামটি স্বাস্থ্যের অন্যান্য উপকারও করে থাকে। রিডার্স ডাইজেস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর পাঁচটি বাদামের তালিকায় কাঠবাদাম জায়গা করে নিয়েছে। এখানে কাঠবাদাম কেন ‘সুপার ফুড’ তা তুলে ধরা হলো।
* কাঠবাদামে প্রচুর স্বাস্থ্যকর চর্বি পাবেন। এ বিষয়ে ক্রো-হোয়াইট বলেন, ‘কাঠবাদামে যথেষ্ট পরিমাণে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা হার্টের উপকার করে।’ অ্যাডভান্সেস ইন নিউট্রিশনের ২০১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত একটি গবেষণা রিভিউ থেকে জানা গেছে- কাঠবাদাম অপকারী কোলেস্টেরল (এলডিএল কোলেস্টেরল), টোটাল কোলেস্টেরল, অ্যাপোলিপোপ্রোটিন বি ও শারীরিক ওজন কমাতে পারে। এটা হার্টের স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ২৪টি কাঠবাদামে ১৪ গ্রাম চর্বি পাবেন, যার ৮০ শতাংশই হলো মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট।
* কাঠবাদাম ভিটামিন ই এরও ভালো উৎস। ২৪টি কাঠবাদামে প্রায় ৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই পাবেন, যা প্রতিদিন যতটুকু ভিটামিন ই প্রয়োজন তার অর্ধেকের কাছাকাছি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই প্রয়োজন। ভিটামিন ই হলো একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা শরীর থেকে ধ্বংসাত্মক ফ্রি রেডিক্যালস দূর করে। এর ফলে হার্টের রোগ, স্মৃতিভ্রংশতা, চোখের ছানি, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমে।
* ২৪টি কাঠবাদাম থেকে প্রায় ৮০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পেতে পারেন। এটা দৈনিক প্রয়োজনীয় ম্যাগনেসিয়ামের প্রায় ২০-২৫ শতাংশ। রক্তচাপকে স্বাস্থ্যসম্মত পর্যায়ে রাখার জন্য এই মিনারেল গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ রক্তচাপ হলো হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের বড় ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ফ্লোরিডার নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্সের সহযোগী অধ্যাপক লরি ওয়াই. রাইট লবণাক্ত কাঠবাদাম খেতে অনুৎসাহিত করেছেন, কারণ লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।
* যখন আপনি শরীরে ক্যালসিয়াম যোগানোর কথা ভাববেন, তখন সম্ভবত দুধ ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার খেতে চাইবেন। ক্যালসিয়ামের প্রশ্নে বেশিরভাগ মানুষই দুধ ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেন না। কিন্তু আপনি জেনে খুশি হবেন যে কাঠবাদাম থেকেও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। আপনি ২৪টি কাঠবাদাম থেকে প্রায় ৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পেতে পারেন। অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য ক্যালসিয়ামের দৈনিক সুপারিশকৃত মাত্রা হচ্ছে ১,০০০ মিলিগ্রাম। অন্যদিকে ৪ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের প্রতিদিন ১,৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়াতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ক্যালসিয়াম হাড় গঠন করতে ভিটামিন ডি-কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে।
* কাঠবাদাম ফাইবারেরও ভালো উৎস। মাত্র ২৪টি কাঠবাদাম থেকে ৩.৫ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যাবে। অ্যাকাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্সের মুখপাত্র লরি ওয়াই রাইট বলেন, ‘ফাইবার পেটকে দীর্ঘসময় ভরা রাখে, নিয়মিত মলত্যাগে সাহায্য করে ও রক্ত থেকে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।’ বেশিরভাগ মানুষই প্রতিদিন যতটুকু ফাইবার খাওয়া প্রয়োজন তা খেতে সচেষ্ট থাকেন না। নারীর জন্য দৈনিক সুপারিশকৃত ডায়েটারি ফাইবারের মাত্রা হলো ২৫ গ্রাম, পুরুষের জন্য ৩৮ গ্রাম। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে প্রতিদিন কাঠবাদাম খেতে পারেন।
* প্রোটিন মানেই কেবল মাছ-মাংস অথবা দুধ-ডিম নয়। প্রকৃতপক্ষে, উদ্ভিজ্জ খাবারও প্রোটিনের ভালো উৎস হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কাঠবাদামের কথা বলা যায়। ২৪টি কাঠবাদাম খেলে আপনার শরীর ৬ গ্রাম প্রোটিন পাবে। শরীরে কতটুকু প্রোটিন প্রয়োজন তা বয়স ও স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনায় ভিন্ন হতে পারে। তবে সুস্থ অবস্থায় প্রতি কিলোগ্রাম শারীরিক ওজনের জন্য ০.৮ গ্রাম প্রোটিন খেতে পারেন। খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন না রাখলে শরীর পেশি, কলা ও ত্বক মেরামত করতে পারবে না। পেশি গঠনে প্রোটিনের অবদানকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না।