মানব শরীরের জন্য একটি প্রয়োজনীয় মিনারেল হলো আয়রন। এটি মেটাবলিজমে সহায়তা করে। আমাদের শরীর পর্যাপ্ত আয়রন না পেলে রক্তস্বল্পতায় ভুগতে পারে। রক্তস্বল্পতা থেকে ক্লান্তি, বমিভাব ও হার্টে সমস্যা (যেমন- অনিয়মিত হার্টবিট) হতে পারে। একারণে চিকিৎসকেরা গর্ভবতী নারী, ঘন মাসিকের নারী, শিশু বা অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে, মাংস বর্জনকারী লোক, ঘনঘন রক্তদাতা, পরিপাকতন্ত্রের রোগী ও কিছু ক্যানসার রোগীদের আয়রন সাপ্লিমেন্ট প্রেসক্রাইব করেন।
ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের অন্তর্গত অ্যাকাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্সের মতে- প্রতিদিন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ৮ মিলিগ্রাম, প্রাপ্তবয়স্ক নারীর ১৮ মিলিগ্রাম ও গর্ভবতী নারীর ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন হয়। এটা মনে রাখা ভালো যে প্রয়োজনাতিরিক্ত আয়রন বিপদজনক হতে পারে। যাদের বয়স ১৪ বছরের বেশি তাদের সর্বোচ্চ লিমিট হচ্ছে ৪৫ মিলিগ্রাম। অতিরিক্ত আয়রন গ্রহণে কেবল বমিভাবের মতো ছোটখাট উপসর্গ নয়, অর্গান ড্যামেজও হতে পারে। তাই মিনারেলটির সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। আপনি ডায়েটে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার সংযোজন করে দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতে পারেন। এখানে আয়রন পাওয়া যায় এমনকিছু খাবারের তালিকা দেয়া হলো।
* কলিজা: কলিজা অনেকেরই পছন্দের খাবার নয়, কিন্তু এটা হলো আয়রনের অন্যতম সর্বোত্তম উৎস। ৪ আউন্স কলিজাতে ৭ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১২ এবং প্রোটিনও পাওয়া যায়। সাবধান, এতে উচ্চ পরিমাণে কোলেস্টেরলও রয়েছে। তাই বেশি পরিমাণে বা প্রতিদিন কলিজা খাবেন না। সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি কমিটি অন নিউট্রিশনের মতে, প্রতিসপ্তাহে একবারের বেশি কলিজা খাওয়া উচিত নয়।
* গরুর মাংস: কাটের ভিত্তিতে গরুর মাংসে দৈনিক প্রয়োজনীয় আয়রনের ১০ থেকে ২৪ শতাংশ পাওয়া যায়। মাংসের আয়রনকে হিমি আয়রন বলা হয়, যা শরীরে উদ্ভিজ্জ আয়রনের চেয়ে ভালোভাবে শোষিত হয়। মাংস খেতে না চাইলে আপনার ডায়েটে সেসব খাবারের পরিমাণ বাড়ান যা একজন ভেজিটারিয়ান আয়রনের চাহিদা মেটাতে খেয়ে থাকেন।
* ফর্টিফায়েড সিরিয়াল: ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, নন-হিমি আয়রনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস হলো ফর্টিফায়েড ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল। বিশেষ করে যারা মাংস এড়িয়ে চলেন তাদের জন্য এই খাবার শরীরে প্রয়োজনীয় আয়রন যোগাতে বিশেষ সহায়ক হতে পারে। এক বাটি ফর্টিফায়েড সিরিয়ালে দৈনিক প্রয়োজনীয় আয়রনের ১০০ শতাংশ পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব। এর পাশাপাশি এক গ্লাস ভিটামিন সি সমৃদ্ধ অরেঞ্জ জুস পান করুন, যা শরীরকে আয়রন শোষণে সাহায্য করবে। পরামর্শটি দিয়েছে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক।
* রাজমা: মাংস অনাহারীদের জন্য নন-হিমি আয়রনের আরেকটি সমৃদ্ধ উৎস হলো রাজমা বা কিডনি বিনস। এক বাটি রাজমাতে প্রায় ৩ মিলিগ্রাম আয়রন পেতে পারেন।
* মুরগির মাংস: আয়রনের অন্য একটি ভালো উৎস হলো মুরগির মাংস। হোয়াইট মিটের চেয়ে ডার্ক মিটে আয়রন একটু বেশি থাকে। মুরগির এক বাটি ডার্ক মিটে (পা বা উরুর মাংস) দৈনিক প্রয়োজনীয় আয়রনের ৮ শতাংশ পাওয়া যায়।
* পালংশাক: বাজারে বা রাস্তায় পালংশাক চোখে পড়লেই কিনে ফেলুন, কারণ এটি হলো নন-হিমি আয়রনের একটি সর্বোৎকৃষ্ট উৎস। এক বাটি পালংশাক খেয়ে শরীরে ৪ মিলিগ্রাম আয়রন সরবররাহ করতে পারবেন। কেবল আয়রন নয়, শাকটিতে উচ্চ মাত্রায় অন্যান্য পুষ্টিও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এক বাটি পালংশাকে আমাদের শরীরে প্রতিদিন যতটুকু ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন তার ৪০ শতাংশ পাওয়া যায়।
* ডিমের কুসুম: ডিমের সাদাংশের তুলনায় কুসুমেই সবচেয়ে বেশি পুষ্টি থাকে। একটি মধ্যম আকারের ডিমের কুসুম থেকে ০.৫ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়। এখানেই শেষ নয়- ডিমের কুসুমে স্বাস্থ্যকর চর্বি, কোলাইন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি, ফোলেট ও সেলেনিয়ামও রয়েছে।
* মসুর ডাল: আপনার জন্য সবচেয়ে বড় চমক মসুর ডালেই। এক বাটি মসুর ডালে প্রায় ১৪ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে। একারণে সম্ভবত এটাই শাকাহারীদের জন্য আয়রনের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উৎস।
* কাজুবাদাম: সকল বাদামই আয়রনের ভালো উৎস, কিন্তু সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় কাজুবাদামে। প্রতি আউন্স (প্রায় ১৭টি) কাজুবাদামে প্রায় ২ মিলিগ্রাম আয়রন পেতে পারেন। কাজুবাদামে ভলো পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ ও ফাইটেটসও পাবেন।
* শিমের বিচি: শরীরে আয়রন যোগানোর একটি সুস্বাদু উপায় হলো শিম ও শিমের বিচি খাওয়া। আপনার জন্য আরেকটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, এক বাটি রান্নাকৃত শিমের বিচিতে প্রায় ৫.৪ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে। শিমের বিচিকে রান্না করে অথবা ভেজে যেভাবেই খান না কেন, আয়রন পাবেন। আধ বাটি ভাজা শিমের বিচিতে প্রায় ২ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়।