সুকান্তের কবিতার মতো সুতীব্র চিৎকারেই শিশু জানিয়ে দেয়- আমি এসেছি। শিশুর কান্নার এখানেই শেষ নয়, এরপর কয়েকটা বছর ক্ষুধা লাগলে বা একটু অসুবিধা মনে হলেই শিশু কেঁদে ওঠে। অনেক সময় শিশুর কান্না থামতেই চায় না! এ অবস্থায় তাকে শান্ত করার কিছু উপায় রয়েছে।
তোয়ালে মুড়িয়ে নিন
শিশুর কান্না না থামলে শুষ্ক তোয়ালে বা এমন আরামদায়ক কাপড়ে শিশুকে মুড়িয়ে নিন। একে সোয়াডলিং বলে। শিশুর জন্য এটি অনেকটা মায়ের গর্ভে ফিরে যাওয়ার মতো। দেখবেন তখন শিশুর চোখে ঘুম চলে আসবে। তবে তোয়ালে এমনভাবে মুড়িয়ে দিতে হবে যাতে শিশু হাত-পা মুক্তভাবে নাড়াতে না পারে। এরপর তাকে চিৎ করে শুইয়ে দিন।
পজিশন পরিবর্তন করুন
পিতামাতাদের মধ্যে দৃশ্যমান একটা প্রবণতা হলো কান্নারত শিশুর মুখ উপরের দিকে রেখে কোলে নেওয়া। কিন্তু কান্না থামানোর জন্য এটা সহায়ক নাও হতে পারে। এর পরিবর্তে শিশুর শরীরের একপাশ আপনার এক হাতের ওপর রেখে অন্য হাতের ওপর তার মাথা রাখুন। অর্থাৎ আপনার দুই হাতের সাহায্য শিশুকে কাত করে ধরে রাখুন। এতে শিশুর পেটে চাপ পড়ে অস্বস্তিকর গ্যাস বের হয়ে আসবে ও কান্না থামবে।
হোয়াইট নয়েজ
হোয়াইট নয়েজ শুনতে পেলে শিশুর চোখে সহজেই ঘুম আসে। তারা মায়ের গর্ভে যেমন ছিল তেমন অনুভব করে। হোয়াইট নয়েজ বলতে ঘূর্ণায়মান ফ্যান বা পানি পড়ার মতো শব্দ বোঝায়। অথবা স্মার্টফোনে হোয়াইট নয়েজের অডিও প্লে করতে পারেন। সাউন্ড অবশ্যই লো লেভেলে রাখবেন।
চুষনি দিন
শিশুদের সহজাত প্রবণতা হলো চোষার অভ্যাস। তাদের মুখে চুষনি (প্যাসিফাইয়ার) দিয়ে কান্না সহজেই থামানো যেতে পারে। গবেষণা বলছে, প্যাসিফাইয়ার চুষলে শিশুর সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিন্ড্রোমের ঝুঁকি কমে। এর পেছনে একটি তত্ত্ব হলো- প্যাসিফাইয়ার চুষলে শিশুর শ্বাসনালী খুলে যায়, ফলে সে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়।
মুখ দিয়ে শব্দ করুন
কান্নারত শিশুর মাথা কাঁধে রেখে মুখ দিয়ে ও… ও … শব্দ করুন। এতে শিশু শান্ত হয়ে ঘুমের দেশে চলে যাবে। এ সময় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবেন না। তাকে কোলে নিয়ে হাঁটুন।
দোলনা
শিশু মায়ের গর্ভে থাকাকালে যথেষ্ট রাইড পায়। কারণ মা তো সবসময় বসে বা শুয়ে থাকেন না। তাই তারা জন্মের পরও রাইড পেতে চায়। শিশুকে ক্র্যাডল বা দোলনায় দোল খাওয়ালে কান্না থামতে পারে এবং সে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে।
ম্যাসাজ করুন
শিশুর কান্না থামাতে বেবি ম্যাসাজ বিস্ময়কর ভূমিকা রাখতে পারে। বেশিরভাগ শিশুই ত্বকের সংস্পর্শে প্রশান্তি অনুভব করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুকে ম্যাসাজ করা হয়েছে তারা কান্না কম করত ও বেশি ঘুমাত। শিশুর পোশাক খুলে হাতের তালু, বাহু, পায়ের পাতা ও অন্যান্য অংশ, পিঠ, বুক ও মুখমণ্ডলে ম্যাসাজ করুন। শিশুর শরীরে অয়েল বা লোশন ব্যবহারের পূর্বে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। গ্যাস জমেছে মনে হলে শিশুর পেটে ক্লকওয়াইজ মোশনে ম্যাসাজ করুন।
পিঠ চাপড়ে দিন
শিশু কান্নার সময় প্রচুর বাতাস গিলে ফেলে। এতে তাদের পেটে গ্যাস তৈরি হয়। এতে শিশুর কান্না আরো বেড়ে যায়। তাই বাতাস বের করার জন্য শিশুর পিঠে মৃদু থাপ্পড় দিন। এসময় শিশুর মাথা আপনার কাঁধের ওপর রাখবেন।
/মহিদ