সবুজাভ উইকেট। পেসারদের জন্য যা রীতিমত স্বর্গ। সেখানে টিকতে হলে আগ্রাসন দেখানো বাধ্যতামূলক। বাজে বল শাসন করতে হবে। ভালো বল মেরিট অনুযায়ী খেলতে হবে। তামিম ইকবাল পাল্লেকেলের ২২ গজে শুরু থেকে সেই কাজটা করে আসছিলেন।
সব ক্রিকেটীয় শট। কোনো বাড়তি ঝুঁকি নেই। বলের ওপর গিয়ে শট খেলছিলেন। পেসারদের লাইন ও লেংথ যাচাই করে ড্রাইভ, ফ্লিক, পাঞ্চ খেলেছেন। আগ্রাসন দেখালেন, বাউন্ডারির ফুলঝুরি ছোটালেন। তাতে স্কোরবোর্ড দৌড়াচ্ছিল।
এক মুহূর্তের জন্য তাকে এলোমেলো মনে হয়নি। ৫৩ বলে পাওয়া হাফ সেঞ্চুরি সেঞ্চুরিতে রূপ দেওয়ার পথেই ছিলেন তিনি। দুই বছর পর টেস্ট সেঞ্চুরির অপেক্ষা ফুরাবে তার। কিন্তু ৯০’র ঘরে গিয়ে পথ ভুললেন বাঁহাতি ওপেনার। আবার তিনি নার্ভাস নাইন্টিজের শিকার।
বিশ্ব ফার্নান্ডোর লেংথ বল খোঁচা মেরে উইকেটের পেছন থেকে বাউন্ডারি আদায় করতে চেয়েছিলেন তামিম। বিপদ ডেকে আনেন ওই শটে। বল যায় একমাত্র স্লিপ ফিল্ডার থিরিমান্নের হাতে। মুহূর্তেই যেন সব ওলটপালট তামিমের। ১০১ বলে ৯০ রান করে ফিরলেন দেশসেরা ওপেনার। ১৫ চারে সাজানো অসাধারণ ইনিংসের ‘অপমৃত্যু’ ওই শটে।
পরিসংখ্যান বলছে, ওয়ানডে ও টেস্ট মিলিয়ে মোট পাঁচবার তামিম আউট হয়েছেন ৯০’র ঘরে। ২০১৩ সালে ঢাকায় নিউ জি-ল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ৯৫। বাকি তিনটা ওয়ানডেতে। তিনটাতেই একই রান, ৯৫। ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে একই রানে আউট হয়েছিলেন। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তামিম আউট ৫ রানের আক্ষেপ নিয়ে।
নার্ভাস নাইন্টিজ’ ক্রিকেটে খুব পরিচিত। ব্যাটসম্যানরা ৯০-র ঘরে পৌঁছালে কিছুটা ঘাবড়ে যান। প্রত্যেক ব্যাটসম্যানই চান মাইলফলক ছুঁতে। সেঞ্চুরি সেই কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক। ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরি একশটি। অথচ নার্ভাস নাইন্টিজে ভারতের ব্যাটিং ঈশ্বর আউট হয়েছেন ২৭ বার।
নার্ভাস নাইন্টিজে ব্যাটসম্যানদের মানসিকতায় কী কাজ করে সেসব জানাতে গিয়ে দেশের অন্যতম সেরা কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম মুঠোফোনে বলেন,‘খুব বড় কিছু অর্জন করার আগে শেষ মুহূর্তের যেই চ্যালেঞ্জ থাকে সেটা যে কোনো মানুষকে একটু আলাদাভাবে চাপে রাখে। এটা এমন না যে ক্রিকেটে হয়। জীবনের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে।
তামিমের ইনিংসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি যোগ করেন, ‘তামিমের ক্ষেত্রে বলবো না যে চাপে ছিল। তামিম নরম্যালি যেভাবে খেলে আজ সেভাবে খেলেনি। খুব ইতিবাচক ছিল। খুব ভালো খেলছিল। বোলারদের চড়াও হওয়ার সুযোগই দেয়নি। ওইজন্য ওর আত্মবিশ্বাস ও আস্থা ভালো ছিল। উইকেটের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে গিয়েছিল। আবার ওদের বোলারদের তেমন ধারও দেখিনি। ল্যাপস অব কনসেনট্রেশনে একটা শট না খেললে তামিম অনেক বড় স্কোর করতে পারত।
তামিমের সেঞ্চুরির থেকেও ফাহিম তাকিয়ে ছিলেন শান্ত ও তামিমের জুটির দিকে। তাদের জুটি আজ আরও বড় হতে পারত বলেই বিশ্বাস করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘তামিমের সেঞ্চুরিটা হলে ভালো হতো। তবে ওদের জুটিটা আরও বড় হলে ভালো হতো। শান্ত শুরুর দিকে একটু এলোমেলো ছিল। জড়তা ছিল। কিন্তু এখন স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারছে। ওর জন্য আজকের ইনিংসটি দরকার ছিল।