স্টাফ রিপোর্টার:
করোনায় বিশ্বের অনেক বন্দরের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলেও ব্যতিক্রম ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর। প্রথম পর্যায়ে কিছুদিন ডেলিভারি কার্যক্রম না থাকলেও খুব অল্প সময়ে তা কাটিয়ে ওঠা যায়। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে সরকারঘোষিত কঠোর লকডাউনেও পুরোপুরি স্বাভাবিক দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশের নিয়ন্ত্রক এই বন্দর।
জানা গেছে, বন্দরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়। আর রাজস্ব আদায় হয় দৈনিক হাজার কোটি টাকা। গত বছর করোনা সংক্রমণের শুরুতে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। যার কারণে বন্দরের কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। এ ছাড়া করোনার প্রস্তুতি কম থাকাতে গত বছরের পরিবহন ও অপারেশনাল কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছিল।
তবে এবার কঠোর বিধিনিষেধেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচলে অবদান রাখা এই বন্দর চালু রাখতে বেশ আগেভাগেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিতভাবে সচল রাখা হয়েছে বন্দরের কার্যক্রম। অফিসের কাজে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হলেও অপারেশনাল কাজে স্বাস্থবিধি মেনে সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।
রোববার (২৫ এপ্রিল) চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৩৪ বছর আগে এই দিনে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় প্রতিষ্ঠিত এই বন্দর বর্তমানে দেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক।
প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকলেও করোনার কারণে গত বছর থেকে কোনো রকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই দিবসটি পালন করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের আমদানি ও রফতানির ৯২ শতাংশেরও অধিক পণ্য এবং ৯৮ শতাংশ কনটেইনারজাত পণ্য হ্যান্ডলিং করে থাকে। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতিতেও এ বন্দর ২৮ লাখের বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দর ১০০টি কনটেইনার পোর্টের তালিকায় ৯৮তম অবস্থানের স্বীকৃতি অর্জন করে। মাত্র ১১ বছরে ৪০ ধাপ এগিয়ে ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ৫৮তম অবস্থানে উন্নীত হয়।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের গৃহীত বিভিন্ন স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে বন্দর কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর। তাছাড়া একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বন্দরের আধুনিকায়ন, যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণ ও নিউমুরিং ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। ইতোমধ্যে পতেঙ্গায় লালদিয়াচর এলাকায় বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ৫২ একর ভূমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। উক্ত এলাকায় বন্দর সুবিধাদি বৃদ্ধির বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হচ্ছে।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘২০২০ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আগত জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৬৬টি। কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৯ টিইইউস, কার্গো হ্যান্ডলিং এক কোটি দুই লাখ ৬৪ হাজার ৪০২ মেট্রিক টন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে তা যথাক্রমে জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৭৬টি, কনটেইনার হ্যান্ডলিং ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৬ টিইইউস, কার্গো হ্যান্ডলিং এক কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ৮১৮ মেট্রিক টন। কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডিলিংয়ে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৭.৭ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ২.৭ শতাংশ।’
১৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষেু চট্টগ্রাম বন্দরকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সর্বাত্মক সহায়তার জন্য বন্দরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, বার্থ অপারেটর, টার্মিনাল অপারেটর, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, বিকডা, শিপিং এজেন্ট, শ্রমিক, বন্দর ব্যবহারকারী ও স্টেকহোল্ডারদের বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।