চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ এ সপ্তাহের মধ্যেই অনিয়ন্ত্রিতভাবে পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ‘লং মার্চ ৫বি’ নামক এই রকেটটির কোর (অভ্যন্তরীণ) অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে চীন।
গত ২৯ এপ্রিল পৃথিবীর কক্ষপথে নতুন চীনা স্পেস স্টেশনের প্রথম মডিউল চালু করার জন্য রকেটটি ব্যবহার করা হয়েছিল। রকেটটি সফলভাবে স্পেস স্টেশনের মডিউলকে কক্ষপথে স্থাপন করতে পারলেও পরে সেটি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। এরপর থেকে এটি পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরপাক খেতে খেতে ক্রমশ নিচের দিকে নেমে আসছে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, রকেটটির ধ্বংসাবশেষ রোববার পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে। তবে এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নন।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, কক্ষপথ থেকে পৃথিবীতে পুনঃপ্রবেশ করতে যাওয়া চীনা রকেটের অনিয়ন্ত্রিত অবশিষ্টাংশের গতিপথের দিকে নজর রাখছে মার্কিন মহাকাশ কমান্ড। তবে এটিকে গুলি ছুড়ে নিচে নামিয়ে আনার কোনো পরিকল্পনা আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের নেই।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি যে, এটি এমন জায়গায় ধসে পড়বে যেখানে কারও কোনো ক্ষতি হবে না। আশা করি সমুদ্র বা এমন কোথাও পড়বে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর ঘন বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় রকেটটির ধ্বংসাবশেষের বেশিরভাগ আগুনে পুড়ে যাবে। তবে উচ্চ গলনাঙ্ক এবং অন্যান্য প্রতিরোধী উপকরণের ধাতবঅংশগুলো টিকে থাকার যেহেতু সম্ভাবনা রয়েছে, তাই সেগুলো পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে। কিন্তু তা জনবসতিপূর্ণ কোনো এলাকায় পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
চীনা গণমাধ্যমের মতে, পশ্চিমা দেশগুলো রকেটটি ‘অনিয়ন্ত্রিত’ এবং এর কারণে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এমন ‘অতিরঞ্জিত’ খবর প্রকাশ করছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম পিপলস ডেইলি’র ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস এক প্রতিবেদনে মহাকাশ বিশেষজ্ঞ সং ঝংপিংয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ‘পরিস্থিতি মোটেই আতঙ্কিত হওয়া মতো নয়। এর বেশিরভাগ অংশই পৃথিবীতে পুনঃপ্রবেশের সময়ই পুড়ে যাবে, খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ সমুদ্রে পড়তে পারে।’
তবে হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের সদস্য ম্যাকডোয়েল বলেছেন, ‘পরিস্থিতি চীনকে খারাপভাবে তুলে ধরছে। এটিকে অবশ্যই চীনের গাফিলতি হিসেবে দেখা উচিত।’
বিবিসিকে তিনি জানান, এভাবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে আছড়ে পড়ার বিষয়টি লং মার্চ ফাইভবি রকেটের একটি বড় সমস্যা। এবার এই রকেটের দ্বিতীয় উৎক্ষেপণ ছিল। এর আগে গত বছর একই ধরনের রকেটের প্রথম মিশনেও নিয়ন্ত্রণ হারায় চীন। সেবার পশ্চিম আফ্রিকার আইভরি কোস্টের গ্রামগুলোয় প্রথম রকেটটির ধ্বংসাবশেষ পড়ে। যারমধ্যে ১২ মিটার বা ৩৯ ফুট দীর্ঘ ধাতব পাইপও ছিল। যদিও ওই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।
যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও মহাকাশ বর্জ্য বিশেষজ্ঞ ড. হিউ লুইসের মতে, গত ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে পৃথিবীর কক্ষপথে হাজার হাজার মহাকাশ বর্জ্য সৃষ্টি হয়েছে। এর দায় বেশ কয়েকটি দেশের, বিশেষ করে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। মহাকাশ বর্জ্যও পৃথিবীর কক্ষপথে হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে রকেটের ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীতে প্রবেশের ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রল শুরু হয়েছে। অনেকে মজা করে বলছেন- চীনের করোনার কারণে পৃথিবীবাসীকে মুখে মাস্ক পরে চলাফেরা করতে হচ্ছে। আর এবার রকেটের ধ্বংসাবশেষ থেকে বাঁচতে মাথায় হেলমেট পরেও চলাফেরা করা লাগবে।
/মহিদ