মানিকগঞ্জে কাফাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার :
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের কাফাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনিয়ম-দূর্নীতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক, শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে অত্র বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির এক অভিভাবক সদস্য।
অভিযোগ সূত্র ও সরেজমিনে জানা যায়, কাফাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অগোচরে অনিয়ম করে আসছেন।
২০১৮ সালের এসএসসি পরিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপে নির্ধারিত ফি সর্বসাকুল্যে ১,৭৯০/-টাকা নেয়ার সর্বস্মতির সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সেটি অমান্য করে তার ইচ্ছামত পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ্য ৪/৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী ১০২ জন ফরম ফিলাপ করে পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে অতিরিক্ত প্রায় ৩/৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষাক।
এছাড়া নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বিষয়ে অতিরিক্ত আরো ১হাজার টাকা আদায় করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানায়, টাকা আদায়ের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেও নির্বাচনী পরীক্ষায় তাদের ফেল করানো হয়েছে।
এদিকে সরকারের মহতী উদ্যোগে স্থাপিত শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাবে বিনামুল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষন দেওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে ৩শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এই টাকা আদায় করা হয়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অফিস রুমে ডেকে নিষেধ করেছেন। এই নিয়ে অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ রয়েছেন।
বিদ্যালয়ের মালিকানাধীন দুইটি বড় পুকুর রয়েছে। বিধি মোতাবেক পুকুরগুলো তিন বছর পর পর লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে অতি গোপনে ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে পুকুর লিজ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রধান শিক্ষক লাভবান হলেও বিদ্যালয় লক্ষাধিক টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়া বিধি মোতাবেক দাতা সদস্য না করে পছন্দের লোকদের দাতা সদস্য করা হয়েছে। প্রচারের মাধ্যমে নতুন দাতাদের উদ্বোদ্ধ না করে অতি গোপনে নিজেদের কয়েকজনকে দাতা সদস্য করেন প্রধান শিক্ষক।
এই গোপনীয়তার কারনে অনেকেই নতুন দাতা সদস্য হতে পারেননি। এতে বিদ্যালয় অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিস, জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন এই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য সোয়েব আহম্মদ রাজা।
সাংবাদিক আবুল বাশার আব্বাসী বলেন, তার মেয়ে শারমিন আব্বাসী এ বছর এই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা অংশ গ্রহন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার ফরম ফিলাপের সময়ও চার হাজার টাকা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
অনিয়ম দূর্ণীতির বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মফিজ উদ্দিন বলেন, পরীক্ষার ফি বাবত যে অতিরিক্ত ৪/৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে তা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নেওয়া হয়েছে। শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাবে শতাধিক প্রশিক্ষনার্থীদের কাছ থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ল্যাবের নিরাপত্তা রক্ষায় কলাপসিবল গেইট লাগানোর জন্য কিছু শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তবে সবার কাছ থেকে নেননি। এছাড়া পুকুর লিজের বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির ওপর দোষ চাপান তিনি। সভাপতির সিদ্ধান্তেই তিনি পূর্বে নেওয়া ব্যক্তিকেই লিজ দিয়েছেন।
কাফাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি সামসুদ্দিন আহমেদ জানান, সরকারি বিধি মোতাবেক সকল কাজ করার সিদ্ধান্ত হয় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মিটিংয়ে। এস এস সির ফরম ফিলাপে সময় ১৭৯০/- টাকার বেশী আদায় করে থাকলে অতিরিক্ত টাকা ফেরৎ দেওয়া হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে যে অনিয়ম দূর্ণীতির অভিযোগ ও আপনাদের মাধ্যমে জানলাম তা খতিয়ে দেখবো। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।