করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর অক্সিজেন কমে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘হাইপোক্সিক কন্ডিশন’ বলে। আর কোনো রোগীর যদি এ অবস্থা হয়, ধরে নিতে হবে রোগীর অবস্থা ক্রমশ মন্দের দিকে এগোচ্ছে। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর অক্সিজেন অনেক না কমলে শ্বাসকষ্ট হয় না। তাছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর হাইপোস্কিয়া হলেও অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হয় না। এ রকম অবস্থাকে বলে ‘সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া’ বা ‘হেপি হাইপোক্সিয়া’। ভেতরে হাইপোক্সিয়া চলছে কিন্তু রোগী ভালো আছে তাই একে ‘হেপি হাইপোক্সিয়া’ বলে।
এ ধরনের হাইপোক্সিয়া ঝুঁকিপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে অক্সিজেন স্বল্পতা নির্ণয় করে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন দিতে পারলে অধিকাংশ রোগী ঝুঁকিমুক্ত হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮৮-৯২ রাখতে যতটুকু অক্সিজেন লাগে ততটুকু দিতে হবে। মোটকথা অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৩ এর উপরে রাখতে হবে।
করোনা রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে শ্বাস নিয়ন্ত্রণ ব্যায়াম বা ব্রেদিং কন্ট্রোল এক্সারসাইজ করানো যেতে পারে। চিৎ হয়ে মাথার নিচে কাঁধ পর্যন্ত ও হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে শোবেন। একটা হাত পেটের উপর আরেক হাত বুকের উপর রেখে শ্বাস-প্রশ্বাস অনুভব করবেন। বুকের প্রসারণ না করে শুধুমাত্র পেটের সামান্য প্রসারণের মাধ্যমে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস চালানোর চেষ্টা করবেন।
অক্সিজেন কমে গেলে ‘প্রোনিং পজিশন’-এ বা উপুর হয়ে শুতে হবে। এতে ফুসফুসে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ে। তারপর ডান কাতে শুয়ে থাকবেন। তারপর বালিশে হেলান দিয়ে বসে থাকবেন। তারপর বাম কাতে শুয়ে থাকবেন। প্রতিটি পজিশনে ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারলে অক্সিজেন বাড়বে এবং শ্বাসকষ্ট কমবে।
রোগীর শ্বাসকষ্ট কমাতে ‘ইনসেনটিভ স্পাইরোমিটার’-এর সাহায্যে ব্যায়াম করবেন। এই ব্যায়ামে শ্বাস-প্রশ্বাসের পেশি শক্তিশালী হয়। রোগী চেয়ারে বা খাটের কিনারে পা ছেড়ে বসবেন। তারপর ইনসেনটিভ স্পাইরোমিটার মেশিনটি হাতে নিয়ে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস ছাড়বেন। মেশিনের মুখের অংশটি ঠোঁট দিয়ে শক্তভাবে ধরে রাখবেন। আস্তে আস্তে যতটা সম্ভব গভীরভাবে শ্বাস নেবেন এবং মেশিনের বলের ওঠানামা লক্ষ করবেন। যতক্ষণ সম্ভব শ্বাস ধরে রাখবেন। তবে অন্তত ৫ সেকেন্ড। এবার মুখ থেকে মেশিনের নলটি নামিয়ে ফেলবেন। তারপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়বেন। উপরের প্রক্রিয়াটি ১০ বার করবেন। এই ব্যায়মটি দিনে ৫ বার করবেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোগে রক্ত জমাট বেঁধে ‘পালমোনারি এম্বোলিজম’ (ফুসফুসের রক্তনালী বন্ধ) হয়। ফুসফুসের রক্তনালী বন্ধ হয়ে প্রচুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। করোনা রোগে হার্টঅ্যাটাক অথবা হার্ট ফেইল্যুর হতে পারে। এমন হলেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। করোনা সংক্রমণে ফুসফুস আক্রান্ত হয়। নিউমোনিয়া হয়। নিউমোনিয়া হলেও অক্সিজেন স্বল্পতায় শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
তবে যে কারণেই শ্বাসকষ্ট হোক না কেন, এমন পরিস্থিতি সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
লেখক: সিনিয়ির মেডিক্যাল অফিসার