আমার নিউজ ডেস্ক,
আগামী ১১ জুন থেকে শুরু হচ্ছে ইউরোর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। ১১টি শহরের ভিন্ন ১১ ভেন্যুতে লড়াই হবে ২৪ দলের। এই মহাযজ্ঞের আগে ছয়টি গ্রুপ নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী ধারাবাহিক আলোচনার দ্বিতীয় পর্ব ‘বি’ গ্রুপ নিয়ে:
আশির দশকে বিশ্ব ফুটবলে কী দাপটই না ছিল বেলজিয়ামের। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠেছিল। তার ছয় বছর আগে ইউরোতে পশ্চিম জার্মানির কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় ফাইনালে। তিন দশক পর বেলজিয়াম আবার বিশ্ব ফুটবলে আধিপত্য দেখাচ্ছে রোমেলু লুকাকুদের হাত ধরে। গেলো বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য পেয়েছে তৃতীয় হয়ে। দেশের ফুটবল ইতিহাসে তাদের বলা হচ্ছে সোনালি প্রজন্ম। ইউরোতে এই সোনালি প্রজন্মের হাত ধরে বেলজিয়াম কি পারবে ট্রফি খরার অবসান ঘটাতে? ফিফা র্যাংকিংয়ের শীর্ষ দলকে গ্রুপে পরীক্ষা নেবে রাশিয়া, ডেনমার্ক ও নবাগত ফিনল্যান্ড।
বেলজিয়াম
বেলজিয়ামের বাছাইপর্ব ছিল সবচেয়ে স্বচ্ছ। ১০ ম্যাচের সবগুলো জিততে তারা করেছিল ৪০ গোল, মাত্র তিনবার তাদের জালে বল জড়ায়। ওই পর্বের মতো ইউরোতেও বেলজিয়ানদের গ্রুপ সঙ্গী রাশিয়া। মার্তিনেজের রণকৌশল হয়তো চেনা হয়ে গেছে রুশদের। তাই কিছুটা কৌশলী থাকতে হবে বেলজিয়ানদের। আপাতত তাদের একমাত্র দুশ্চিন্তা কেভিন ডি ব্রুইনার ফিটনেস ও এডেন হ্যাজার্ডের ফর্ম।
কোচ: রবার্তো মার্তিনেজ
সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৩-৪-৩; কোর্তোয়া, অ্যাল্ডারওয়েইরেল্ড, ডেনায়ের, ভার্টনঘেন, মুনিয়ের, টিয়েলেমান্স, ডেনডনকার, হ্যাজার্ড, মের্টেন্স, লুকাকু, ডি ব্রুইনা।
সূচি: ১২ জুন, প্রতিপক্ষ রাশিয়া; ১৭ জুন, প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক; ২১ জুন, প্রতিপক্ষ ফিনল্যান্ড।
ইউরো খেলেছে: ৫ বার
শেষ ইউরোতে: কোয়ার্টার ফাইনাল
সেরা সাফল্য: সেমিফাইনাল (১৯৭২)
নজরে থাকবেন: রোমেলু লুকাকু। সবচেয়ে ফর্মে থাকা ৯ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড় হিসেবে এই ইউরোতে খেলতে যাচ্ছেন কে? এই প্রশ্নের উত্তরে নিঃসন্দেহে ইন্টার মিলান স্ট্রাইকারের নাম আসবে। সিরি আ’য় যেখানে শেষ করেছেন, সেখান থেকেই আবার দেখা যেতে পারে তাকে।
শক্তি: এই বেলজিয়ামের সবচেয়ে শক্তির দিক হলো আক্রমণভাগ। কোনও সংশয় থাকার কথা নয় এ নিয়ে। প্রতিপক্ষের জন্য লুকাকু, ডি ব্রুইনা ও মের্টেন্সই শুধু হুমকি নয়। রিয়াল মাদ্রিদে বাজে ফর্মের বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইবেন এডেন হ্যাজার্ড। লিগ ওয়ান দল রেনেসের জার্সিতে নিজের সামর্থ্য দেখানো ১৯ বছর বয়সী উইঙ্গার জেরেমি ডকুও নজর কাড়তে পারেন।
দুর্বলতা: বাঁ পায়ের সেন্টার ব্যাকের বড়ই অভাব এই দলে। রবার্তো মার্তিনেজের দলে বাঁ পায়ের সেন্টার ব্যাক বলতে আছেন ৩৪ বছর বয়সী জন ভার্টনঘেন ও ৩৫ বছরের থোমাস ভারমালিন। দুজনের ফর্মেই ভাটা পড়েছে। রক্ষণে নিশ্চিতভাবে ভার্টনঘেনই এগিয়ে। আর এই জায়গাটি হতে পারে বেলজিয়ামের বড় দুর্বলতা।
ডেনমার্ক
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম তিন ম্যাচের সবগুলো জিতে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে ইউরো মিশন শুরু করবে ডেনমার্ক। গোল করেছে ১৪টি, আর গোলপোস্ট ছিল অক্ষত। কিন্তু ইসরায়েল, মলদোভা ও অস্ট্রিয়ার চেয়ে ‘বি’ গ্রুপের প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক বেশি শক্তিশালী। যদিও জমাট রক্ষণ ও ক্ষিপ্র প্রতি আক্রমণের সামর্থ্য দিয়ে প্রতিপক্ষকে চমকে দিলেও দিতে পারে ডেনিসরা।
কোচ: ক্যাস্পার জুলমান্ড
সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৪-২-৩-১; শুমেইখেল, ভাস, কায়ের, ক্রিস্টেনসেন, মাহলে, হজবার্গ, ডিলানি, পলসেন, এরিকসেন, ব্রেইথওয়েট, উইন্ড।
সূচি: ১২ জুন, প্রতিপক্ষ ফিনল্যান্ড; ১৭ জুন, প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম; ২১ জুন, প্রতিপক্ষ রাশিয়া।
ইউরো খেলেছে: ৮ বার
শেষ ইউরোতে: গ্রুপ পর্ব
সেরা সাফল্য: চ্যাম্পিয়ন (১৯৯২)
নজরে থাকবেন: ক্যাস্পার শুমেইখেল। ডেনমার্কের গোলপোস্টের নিচে বাবার শূন্যস্থান পূরণ করেছেন শক্ত হাতে। লেস্টার সিটি গোলকিপার একা হাতে ডেনিসদের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে প্রায় তুলেই ফেলেছিলেন। এবারও তার কাঁধেই থাকবে গোলপোস্ট সামলানোর দায়িত্ব, তার সামনের দিকে থাকা খেলোয়াড়রা ফর্মে থাকলে ভালো কিছুই হয়তো হবে। মাত্র ছয়বার জাতীয় দলের জার্সি পরা জোনাস উইন্ডও থাকবেন নজরে। ২২ বছর বয়সী স্ট্রাইকার মার্চে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দারুণ খেলেছেন। গত মৌসুমে এফসি কোপেনেহেগেনের হয়ে ২৮ লিগ ম্যাচে করেছেন ১৫ গোল।
শক্তি: আক্রমণভাগের গভীরতা। মার্টিন ব্রেইথওয়েট বার্সেলোনার হয়ে কার্যকরী ছিলেন। ইউসুফ পলসেনও বল নিয়ে খুব খাটতে পারেন। ডেনমার্কের হয়ে গোল করার সামর্থ্য দেখিয়েছেন ভালোভাবে। ক্লাবের হয়ে ক্যাস্পার ডলবার্গ ও আন্দ্রেস কর্নেলিয়াস বিপজ্জনক না হলেও জাতীয় দলে ধারাবাহিক।
দুর্বলতা: সেন্টার ব্যাকের কারণে ভুগতে হতে পারে ডেনমার্ককে। সিমন কায়ের কিংবা আন্দ্রেস ক্রিস্টেনসেন তালগোল পাকিয়ে ফেলেন মাঝেমধ্যে।
রাশিয়া
২০১৮ সালের বিশ্বকাপে আয়োজক রাশিয়া শেষ আটে উঠেছিল। ওই আসরে খেলা গোলকিপার ইগোর আকিনফিভ ও সেন্টার ব্যাক সের্গেই ইগনাশেভিচ অবসর নিয়েছেন। তারপর থেকে রাশিয়া তাদের দল নতুন করে গোছাতে শুরু করেছে। নতুন প্রজন্মকে দিয়ে চেরচেশোভ কতদূর যেতে পারেন, দেখার অপেক্ষা।
কোচ: স্তানিস্লাভ চেরচেশোভ
সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৪-২-৩-১; ফের্নান্দেজ, সেমেনোভ, জিকিয়া, জিরকোভ, ওজদয়েভ, গোলোভিন, চেরিশেভ, মিরানচুক, জেমালেৎদিনোভ, জিউবা।
সূচি: ১২ জুন, প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম, ১৬ জুন, প্রতিপক্ষ ফিনল্যান্ড, ২১ জুন, প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক।
ইউরো খেলেছে: ১১ বার
শেষ ইউরোতে: গ্রুপ পর্ব
সেরা সাফল্য: সেমিফাইনাল (২০০৮)
নজরে থাকবেন: মারিও ফের্নান্দেজ। সহজাত রাইট ব্যাক, ২০১৮ সালে বিশ্বকাপের রাশিয়ার সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। দলের সর্বোচ্চ সুযোগ তৈরি করে দিতে সামনের দিকে ছিলেন তিনি। এবারের ইউরোতেও তার ব্যতিক্রম হবে না।
শক্তি: তারুণ্যে ভরপুর মিডফিল্ড। এবারের ইউরোতে তারুণ্যের দাপট দেখা যাবে, বিশেষ করে মাঝমাঠে। তাই রণকৌশল সাজাতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে মাঠের এই অংশটি। স্তানিস্লাভ চেরচেশোভের খুব বেশি ঝামেলা হবে না।
দুর্বলতা: দেশের বাইরে টুর্নামেন্ট খেলতে হচ্ছে তাদের। যখন তারা আয়োজক হয় না, তখন হতাশাজনক পারফরম্যান্স তাদের ঘিরে ধরে। বি গ্রুপ ভারসাম্যপূর্ণ হলেও তারা এবার সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।
ফিনল্যান্ড
ইউরো ২০১৬ বাছাইপর্বে হতাশার সাগরে হাবুডুবু খেয়েছিল ফিনল্যান্ড। একটি ম্যাচও তারা জিততে পারেনি। পরের এক বছরে দুটি ড্র ও ৯ হারের পর মারকু কানের্ভাকে নিয়োগ দেয় তারা। পাঁচ বছর পর প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে নামছে ফিনিশীয়রা। বাছাইয়ে নিজ গ্রুপে ১০ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল তারা।
কোচ: মারকু কানের্ভা
সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৩-৪-৩; হ্রাডেকি, ইভানোভ, রাইটালা, ও’শফনেসি, সোইরি, কামারা, স্পার্ভ, ইউরোনেন, লাপ্পালাইনেন, পুক্কি, ফোর্স।
সূচি: ১২ জুন, প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক, ১৬ জুন, প্রতিপক্ষ রাশিয়া, ২১ জুন, প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম।
নজরে থাকবেন: টিমু পুক্কি। ৩০ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড নরউইচ সিটির হয়ে চ্যাম্পিয়নশিপের গত মৌসুমে ২৬ গোল করেছেন। ফর্মের তুঙ্গে থেকে ইউরোতে নামবেন তিনি।
শক্তি: রসায়ন। এই চক্রে বেশির ভাগ সময় একসঙ্গে ছিলেন দলের খেলোয়াড়রা। কয়েকজন খেলোয়াড়ের মৌসুম কেটেছে চমৎকার। এটা হতে পারে তাদের জন্য দারুণ ব্যাপার।
দুর্বলতা একমাত্রিক আক্রমণ তাদের দুর্বলতা। কাউন্টার অ্যাটাকের ওপর নির্ভরশীল তারা। তাতে করে প্রতিপক্ষের আক্রমণ সহজ হয়ে যেতে পারে।