ফুটবল মঞ্চে গোলবন্যা কে না দেখতে চায়। ১৪ গোলের এক রাতের কথা মনে থাকে সবার। তাতে হাততালি পরে। আবার সেই রাতে গোল রুখে দিয়েও কেউ হয়ে যান মহানায়ক। যাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখা শুরু করে একঝাঁক তরুণ। টুইটারে পোস্ট হয়, ‘আমরা ইয়ান সোমারকে দেখেছি। যার দুই হাত এক চুম্বক।’
সুইজারল্যান্ডের বীরকে সম্মান জানাতে দেশটির ইংরেজি দৈনিক দ্য লোকাল লিখে, ‘সুইজারল্যান্ডে চারটি ভাষা রয়েছে, জার্মান, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান ও রোমান। কিন্তু আমরা জাতীয় ফুটবল দলকে সম্মান জানাতে একটি ভাষা ব্যবহার করতে পারি…ইয়ান সোমার।
বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় তারকা এখন কিলিয়ান এমবাপ্পে। পেনাল্টিতে এমবাপ্পে শট নেবেন আর গোল হবে না এমন ভাবতে পারেননি কেউ। কিন্তু ইয়ান সোমার ‘দেয়াল’ সেদিন ইউরোর মঞ্চে এমবাপ্পেকে মাটিতে নামান। ফ্রান্স সুপারস্টারের ডানপায়ের শট সোমার রুখে দেন। ওই মুহূর্তের ঠিক আগে কতজন জানতেন সোমার জার্মান ক্লাব বুরুশিয়া মনশেনগ্লাডব্যাখের গোলরক্ষক! এমবাপ্পেকে থামিয়ে সুইজারল্যান্ডের নায়ক সেদিন শুধু নিজের অবস্থান জানান দেননি, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কিভাবে লড়াই করতে হয় তাও দেখিয়েছেন।
তার ওই এক সেইভে সেদিন সুইজারল্যান্ড ১৯৫৪ সালের পর প্রথম কোনো বড় আসরের কোয়ার্টারে উঠে যায়। আর তাদের নায়ক ছিলেন ইয়ান সোমার। এবার কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ। প্রতিপক্ষ স্পেন। কিন্তু আত্মঘাতী গোলে শুরুতেই পিছিয়ে সুইসরা। এরপর শাকিরির গোলে সমতায় ফেরা।
শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলের সমতা নিয়ে অতিরিক্ত সময়ে খেলা গড়ানো এবং শেষ পর্যন্ত ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেও স্পেনের রদ্রির গোল রুখে দেন ইয়ান সোমার। কিন্তু স্পেনের গোল রক্ষক উনাই সিমন ছিলেন আরেকটু এগিয়ে। তার ‘দেয়াল’ ভাঙতে পারেননি ফ্যাবিয়েন সেচার ও ম্যানুয়েল আকানজি। তাতে সুইজারল্যান্ডের ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনাল খেলা হয়নি।
কিন্তু তাতে কী! ইয়ান সোমারের অভাবনীয় পারফরম্যান্সে একটু দাড় পড়েনি। পুরো খেলায় ২৭ শট নেয় স্প্যানিশরা। ২১টি ছিল বক্সের ভিতরে। সোমার ‘দেয়াল’ ভাঙতে পারেনি সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। সেজন্য স্পেনের গোলরক্ষক নিজের ম্যাচ সেরার পুরস্কার প্রতিপক্ষের গোলরক্ষকে দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলেন,‘সত্যি বলতে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা সোমারের প্রাপ্য। আমি তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দিতে চাই।’
সুইজারল্যান্ড ম্যাচ জেতেনি, হৃদয় জিতেছে। আর ইয়ান সোমার দলের বিদায়ের দিনও মহানায়ক।