বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবল দল আর্জেন্টিনা। এই দলটির নাম বলতেই ভেসে ওঠে ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও লিওনেল মেসির ছবি। সর্বকালের সেরা কে, সেই তুলনাতেও চলে আসে দুজনের নাম। শুধু তারাই নয়, আলবিসেলেস্তের জার্সিতে মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন আরও অনেকেই। কোপা আমেরিকায় রোববার রিও ডি জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিলের মুখোমুখি হওয়ার আগে আর্জেন্টিনার সেরা ১০ খেলোয়াড়কে তুলে ধরার প্রচেষ্টা রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য:
ডিয়েগো ম্যারাডোনা: ফুটবল ঈশ্বর। ‘এল পেলুসা’, বিশ্বজুড়ে চিরভাস্বর তিনি। যে দলেই খেলেছেন, রেখেছেন কিংবদন্তিতুল্য স্বাক্ষর। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে তার বীরত্ব, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় দ্বিতীয় গোল তাকে দেশের ফুটবল ইতিহাসে সর্বকালের সেরা বানিয়েছে। আর নাপোলিতে তাকে মানা হতো আইডল, ইতালিয়ান ক্লাবকে আশির দশকে স্কুদেত্তো জিতিয়ে হয়ে গেছেন দলটির আইকন।
আর্জেন্টিনার সেরা হওয়ার দৌড়ে ম্যারাডোনা ও মেসির তুলনা কোনোদিনই শেষ হওয়ার নয়। দুজনই লিজেন্ড, নিজ নিজ জায়গায়। কিন্তু বিশ্বকাপ সাফল্য ম্যারাডোনাকে রেখেছে অনন্য অবস্থানে। গত বছরের ২৫ নভেম্বর না ফেরার দেশে চলে গেলেও ফুটবল ঈশ্বর থাকবেন সবার হৃদয়ে।
লিওনেল মেসি: আধুনিক যুগের অন্যতম সেরা তারকা লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনা আর বার্সেলোনার শীর্ষ গোলদাতা। ‘লা পুলগা’, বাঁ পায়ের ড্রিবল দিয়েই ম্যারাডোনার সঙ্গে তুলনীয় হয়ে উঠেছেন। বার্সার সঙ্গে অগণিত ট্রফির পাশাপাশি রেকর্ড ছয়টি ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট ও ছয়টি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। কেবল আন্তর্জাতিক একটি শিরোপা না জেতার আক্ষেপ। সেটা কি ঘুচাতে পারবেন ৩৪ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড? এই কোপাতেই হয়তো শেষ সুযোগ!
আলফ্রেডো ডি স্টেফানো: রিয়াল মাদ্রিদে সন্ত মনে করা হয় ডি স্টেফানোকে। গতি, শক্তি ও অসাধারণ দক্ষতা তার। বলা হয়, মাঠের যে কোনও পজিশনে খেলতে পারার দারুণ ক্ষমতা তার রয়েছে। পঞ্চাশের দশকে ইউরোপ কাঁপানো রিয়ালের দলে ছিলেন প্রাণভোমরা। ‘দ্য ব্লন্ড অ্যারো’ তার ক্যারিয়ারে করেছেন আটশরও বেশি গোল এবং ২০০৩ সালে ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীর নির্বাচিত ৫০ বছরের চতুর্থ সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে ৮৮ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।
মারিও আলবার্তো কেম্পেস: বাবার পূর্ণ সমর্থনে হয়ে উঠেছিলেন ফুটবলার। বাবার সঙ্গে যেতেন অনুশীলনে। ‘এল ম্যাটাডোর কেম্পেস’ তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ৮ বছর বয়সে। ম্যারাডোনারও আগে আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক। দেশের বাইরে ফুটবল মাতানো একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপে সিজার লুইস মেনোত্তির দলে ডাক পেয়েছিলেন। ভ্যালেন্সিয়া তারকা তার কোচের আস্থার প্রতিদান দেন ৬ গোল করে, যার দুটি ছিল ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। কেম্পেসের ক্যারিয়ার শেষ হয় ৩০০টিরও বেশি গোলে। শহরের এই বিখ্যাত সন্তানের নামে সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামের নামকরণ করেছে কর্দোবা।
হুয়ান রোমান রিকুয়েলমে: প্রতিভা, মেধা ও অধ্যাবসায়। এই শব্দগুলো দিয়ে রিকুয়েলমে ও তার ক্যারিয়ারকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। বোকার নীল-হলুদ জার্সিতে অন্যতম সেরা হিসেবে ভাবা হয় তাকে। চারবার তাকে আর্জেন্টিনার বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত করে ফিফা।
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা: ফিওরেন্তিনা ও রোমার সাবেক স্ট্রাইকার গোলমুখের সামনে ছিলেন ভয়ঙ্কর। জাতীয় দলের হয়ে ৭২ ম্যাচে গোল ৫৬। ২০০৫ সালে বুট তুলে রাখার সময় আর্জেন্টিনার সর্বকালের শীর্ষ গোলদাতার আসনে ছিলেন, কেবল মেসি পেছনে ফেলেন তাকে। ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে দুটি আলাদা বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেন ‘বাতিগোল’। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ ১০ গোল তার নামের পাশে। জিতেছেন দুটি কোপা আমেরিকা। রোমার সঙ্গে ছুঁয়ে দেখেছেন স্কুদেত্তো।
জাভিয়ের মাসচেরানো: ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ খেলে যখন অবসর নেন জাভিয়ের মাসচেরানো, তখন তিনি দেশের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ফুটবলার। ১৪৭তম ম্যাচ খেলে আর্জেন্টিনাকে বিদায় বলেন, যা কয়েকদিন আগে ভেঙেছেন মেসি। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় দলের হয়ে হতাশা আর ব্যর্থতা দেখেছেন মাসচেরানো। খেলেছেন তিনটি বিশ্বকাপ। অধিনায়কত্বের আর্মব্র্যান্ডও উঠেছিল তার বাহুতে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার প্রতিভা কোনোভাবেই খাটো করে দেখার নয়।
ড্যানিয়েল পাসারেল্লা: ১৯৭৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ে আর্জেন্টিনার নেতৃত্বে ছিলেন ড্যানিয়েল পাসারেল্লা। ডাকনাম ‘এল কাইজার’- মাঠে ও মাঠের বাইরে ছিলেন সাবলীল চরিত্রের অধিকারী। উচ্চতার কারণে বন্ধুদের কাছে তো বটেই, শত্রুদেরও সমীহ আদায় করতেন।
ছিলেন অসাধারণ ডিফেন্ডার। কিন্তু গোল করার ক্ষমতাও ছিল। ক্লাব পর্যায়ে ৪৪৭ ম্যাচে করেন ১৪৪ গোল। আর আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৭০ ম্যাচ খেলে গোল ২২টি। একমাত্র আর্জেন্টাইন হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ জিতেছেন পাসারেল্লা- ১৯৭৮ সালের পর ম্যারাডোনার নেতৃত্বে ১৯৮৬ সালে।
উবালদো ফিল্লোল: প্রায় ৩০ বছরের গোলকিপিং ক্যারিয়ারে প্রায় পুরোটা সময় আর্জেন্টিনায় খেলেন উবালদো ‘এল পাতো’ ফিল্লোল। দেশের বাইরে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আতলেতিকো মাদ্রিদ ও ফ্লামেঙ্গোতে ছিলেন।
ক্লাব পর্যায়ে অবিশ্বাস্য সাফল্য ছিল তার। রিভার প্লেটের সঙ্গে জিতেছেন সাতটি লিগ শিরোপা। ৩৮ বছর বয়সেও তার পারফরম্যান্সের ধার কমতে দেখা যায়নি। রেসিংয়ে সুপারকোপা সুদামেরিকানার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে দারুণ অবদান রাখায় দেশের সেরা শট স্টপারের মর্যাদা পান। ১৯৭৪, ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ দলে ছিলেন। দেশের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের আসরে হয়েছিলেন সেরা গোলকিপার। পেনাল্টি ঠেকানোর সামর্থ্য তাকে এনে দেয় খ্যাতি। পেনাল্টির ২৫ শতাংশই তিনি ঠেকিয়েছেন তার লম্বা ক্যারিয়ারে।
সার্জিও আগুয়েরো: এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে ধরা হয় সার্জিও আগুয়েরোকে। প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় তিনি। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ম্যানসিটির সর্বকালের সেরা গোলদাতা হন নাপোলির বিপক্ষে ১৭৮তম গোল করে। প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চতুর্থ শীর্ষ গোলদাতা এবং ইংল্যান্ডের বাইরের সবচেয়ে বেশি গোল করা ফুটবলার। ইংল্যান্ডের শীর্ষ ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিকের রেকর্ডও তার দখলে।