স্টাফ রিপোর্টার: মানিকগঞ্জে কলেজ ছাত্র মনির হোসেন চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় ৪ জনের মৃত্যুদন্ড ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও তিনজনকে বেকসুর খালাশ প্রদান করা হয়েছে। মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ শহীদুল আলম ঝিনুক সোমবার বেলা বারোটার দিকে এই রায় প্রদান করেন। ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর এই হত্যা কান্ডের ঘটনাটি ঘটে । মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন বাদশা মিয়া,লাল মিয়া, আনোয়ার হোসেন ও আজগর চৌধুরী । এদের প্রত্যেক আসামীদের ২০ হাজার অর্থদন্ড করা হয় । যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামী আক্তার হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা অর্থ দন্ড করা হয়েছে। রায়ের আদেশের সময় দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বাদশা মিয়া ও লাল মিয়া উপস্থিত ছিলেন।বাকী সবাই পলাতক রয়েছে। সরকার পক্ষের পিপি আব্দুস সালাম জানান, মানিকগঞ্জ খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন খান কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র মো: মনির হোসেনকে ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ২০ লাখ টাকা মুক্তিপন চেয়ে অপহরণ করে। পরে দিন ১১ সেপ্টেম্বর মনির হোসেনের মা মালেকা বেগম বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় বাদশা মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। আসামী বাদশা মিয়ার স্বীকারোক্তি মতে পুলিশ ১২ সেপ্টেম্বর বংশি নদীর ভাষা শহীদ রফিক সেতুর কাছ থেকে মনিরের লাশ উদ্ধার করে। পরে অপহরনকারীরা মনির হোসেনকে সাভারের নামাবাজার খেয়াঘাটে আসামী লাল মিয়ার ট্রলারে করে রানা প্লাজার ধবংসস্তুপের খন্ড খন্ড স্লাপ দিয়ে মনির হোসেনকে বংশাই নদীতে হাত,পা,কোমর ও গলা বেঁধে জীবন্ত নদীতে ফেলে হত্যা করে।
এঘটনায় ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এক নম্বর আসামী বাদশা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্ত মুলক জবানবন্দিতে হত্যার কথা স্বীকার করেন। আসামীদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল বিজ্ঞ আদালত দ:বি: ৩৬৫/৩৪/৩৮৫/৪৮৬/৩০২/২০১ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্র পক্ষ মামলায় মোট ২৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহন করেন। নিহতের বাবা পরোশ আলী জানান,এই রায়ে আমি খুশি। আজ ছেলের হত্যার প্রকৃত বিচার পেয়েছি। আর যেনো বাবা-মায়ের বুক কেউ খালি করতে না পারেন। তাই অতি দ্রুত রায় কার্যক্রর দেখতে চাই। আসামীপক্ষের আইনজীবি শিপ্রা সাহা এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তারা উচ্চ আদালাতে আপিল করবেন। সেখানে ন্যয় বিচার পাবেন। মামলার বিবরনীতে জানা গেছে,২০১৫ সালের ১০ সেপ্টম্বর মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের বিদেশ প্রবাসী পরোশ আলীর একমাত্র পুত্র মানিকগঞ্জ খান বাহাদুর আওলাদ হোসের কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র মনির হোসেন একই এলাকার বাদশা মিয়া সেনাবাহীনিতে চাকুরী দেয়ার কথা বলে সাভার নিয়ে যায়। এর পর বাদশার সাথে সেখানে যোগ হয় মো. আক্তার হোসেন জামাল ওরফে কামাল,মো. আজগর চৌধুরী ,মো. শুকুর আলী,মো. লাল মিয়া,মো. আনোয়ার হোসেন,মো. মাসুদ ও মো. আলম। তাদের সবার উদ্দেশ্য ছিল মনিরকে হত্যা করবে এবং তার পরিবারের কাছে মোটা অংকের মুক্তিপন দাবিও করবে। সাভার নিয়েই ওই দিন রাতেই পুর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সকলে মিলে মনিরের হাত-পা, চোখ-মুখ ও মাজা দড়ি দিয়ে বেধে একটি নৌকায় উঠায়। পরে রানা প্লাজার ধ্বংসষÍুতের পাথর দিয়ে মনিরকে দড়ির সঙ্গে বাধা হয়। এর পর মোবাইলে মনিরের মায়ের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে হত্যাকারীরা। এর আগেই মোবাইলে রেকর্ড করা হয় মনিরের কথা ও কান্নার শব্দ। ফোনে মনিরকে নির্যাতনের আওয়াজ শোনার পর মনিরের মা মালেকা বেগম দিশেহারা হয়ে পড়েন। মুক্তিপনের টাকা দিতেও রাজি হন। কিন্ত তার তার আগেই সর্বনাশ হয়ে যায়। ওই দিন রাতের কোন এক সময় নৌকায় করে সাভারের নামা বাজার থেকে হেমায়েতপুর-সিংগাইর সড়কের শহীদ রফিক সেতুর কাছে নিয়ে জীবন্ত নদীতে নিক্ষেপ করে মনিরকে হত্যা করা হয়।