আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আরেকবার পুরোনো স্বপ্ন নতুন করে বোনা। স্বপ্ন, ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটের বৈশ্বিক আসরে ধারাবাহিক ও নজরকাড়া পারফরম্যান্স। বিজয়ের কেতন উড়িয়ে লাল-সবুজের পতাকার পালে হাওয়া লাগানো, বড় দলগুলিকে চোখ রাঙানি দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ, চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে মাঠ মাতিয়ে গগণবিদারী চিৎকারে যেন শোনা যায় একটাই শব্দ, একটাই স্লোগান, ‘বাংলাদেশ… বাংলাদেশ।
এ স্বপ্ন আজকের নয়। ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকেই দেখছে বাংলাদেশ। বারবার হোঁচট খেয়ে বারবার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা। আগের ছয় আসর সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি একটুও। নতুন মোড়কে সেই লালিত স্বপ্ন পূরণের আশা দেখিয়ে আজ আরেকবার বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করছে বাংলাদেশ।
এবার মাহমুদউল্লাহর হাতে দলের মশাল। সঙ্গে আছে একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটার। আর সাকিব, মুশফিক, সৌম্য, মোস্তাফিজ ও লিটনকে নিয়ে তো অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার টইটম্বুর। তাই তো সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে এবার বিশ্বকাপ মাতাতে চায় বাংলাদেশ।
সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই আজ রাতে ওমান যাত্রা শুরু করছে বাংলাদেশ। রাত ১০টা ৪৫ মিনিটের ফ্লাইটে উড়াল দেবেন মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকরা। সাকিব ও মোস্তাফিজ আইপিএল খেলতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছে। তারা দলের সঙ্গে ৯ অক্টোবর আরব আমিরাতে যোগ দেবেন।
কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দুই সপ্তাহ আগে ওমানে যাচ্ছে মাহমুদউল্লাহরা। চার দিনের অনুশীলনের পর দল যাবে আরব আমিরাতে। সেখানে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের পর আবার ওমানে ফিরবে দল। ওমানে প্রথম রাউন্ডে বাংলাদেশ দল খেলবে স্কটল্যান্ড, ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে। এই পর্ব টপকে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের যেতে হবে আরব আমিরাতের সুপার-১২ রাউন্ডে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে সুখকর কিছু পায়নি বাংলাদেশ। আগের ছয়টি বিশ্বকাপে ২৫ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে কেবল পাঁচটি, যার চারটিই বাছাই পর্বে। মূল পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একবার হারিয়েছিল বিশ্বকাপের প্রথম আসরে, নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে। হংকং, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তানের মতো প্রতিপক্ষের কাছে হারের লজ্জাও পেয়েছে। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ভালো নয়। তবুও এবারের বিশ্বকাপে ভালো করার এবং প্রত্যাশার চেয়ে বেশিদূর যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বিশ্বকাপে ভালো কিছু করার আশায় বুক বাঁধছেন। দলের বেশ কজন অলরাউন্ডার ও বোলিং শক্তির ভরসা পাচ্ছেন অধিনায়ক। আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মাহমুদউল্লাহ বলেছিলেন, ‘আমাদের শক্তির জায়গা দলের অলরাউন্ডাররা এবং বোলিং বিভাগ। পাশাপাশি আমাদের ব্যাটিংও ভালো এবং দলের ভারসাম্য দারুণ। পাঁচ-ছয়জন অলরাউন্ডার আছে আমাদের, যারা ব্যাট-বল দুটিতেই অবদান রাখতে পারে। এই মুহূর্তে আমাদের ফাস্ট বোলাররা অবিশ্বাস্য পারফর্ম করছে। স্পিন তো বরাবরই আমাদের শক্তি। তারা যদি কয়েকটি ম্যাচে নিজেদের মেলে ধরতে পারে, আশা করি আমরা ভালো কিছু ফল পাব।’
দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ভালো। ১৩ ম্যাচে ৯টিই জিতেছে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১, নিউ জিল্যান্ডকে ৩-২ ব্যবধানে হারানোর সুখস্মৃতিও আছে। জিম্বাবুয়ের মাটিতেও জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। জয়ের এই ধারাবাহিকতা ও জয়ের অভ্যাস গড়ে উঠায় বিশ্বকাপে ভালো করতে আত্মবিশ্বাসী দলের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসান, ‘আমার কাছে মনে হয় এবারের বিশ্বকাপে ভালো সুযোগ আছে। আমাদের প্রস্তুতি খুবই ভালো হয়েছে। এর বড় কারণ হচ্ছে গত তিনটা সিরিজ আমরা জিততে পেরেছি। জয়ের কোনো বিকল্প নেই। একটা দল যখন জিততে থাকে, জয়ের মানসিকতা থাকে, তা অন্য পর্যায়ের আত্মবিশ্বাস দেয়। আপনি অনেক ভালো খেলে ম্যাচ হারলে এই আত্মবিশ্বাস থাকবে না। এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমরা বিশ্বকাপে যেতে চাই।
বিশ্বকাপ স্কোয়াডে আছে এমন তিনজন যারা এর আগে প্রতিটি আসরে খেলেছেন। সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। নিশ্চিতভাবে এবার ত্রয়ীর দায়িত্ব অন্য সবার চেয়ে বেশি। আবার স্কোয়াডে বিশ্বকাপ জেতার অভিজ্ঞতা আছে দুইজনের। ২০২০ সালে শামীম পাটোয়ারী ও শরিফুল ইসলাম জিতেছিলেন যুব বিশ্বকাপ। এবার প্রথমবার তারা খেলবেন বড়দের বিশ্বকাপ। তাদের দায়িত্বটাও যে পাহাড়সম তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
লিটন, মোস্তাফিজ, সৌম্য দলের অন্যতম সেরা তারকা। নির্দিষ্ট দিনে তারাও প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি। তবে তারা ধারাবাহিক নন বলে আস্থার জায়গা অর্জন করতে পারেননি। এবারের বিশ্বকাপে তারা সেই খোলস থেকে বের হয়ে আসতে পারে নাকি সেটাও দেখার।
বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ভালো করবে বলে বিশ্বাস নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাকের, ‘সম্ভাব্য সেরা দলই যাচ্ছে। আশা করব যেন ভালো একটা ফলাফল হয়। অমুক অবস্থানে দলকে দেখতে চাই- এভাবে বলা ঠিক হবে না। ভালোর শেষ নেই। আমি তো খুশি হব চ্যাম্পিয়ন হলেই। আমি নিশ্চিত সবাই তাতেই খুশি হবেন। আমি চাইব বাংলাদেশ দল যেন ভালো ক্রিকেট খেলে।
বিশ্বকাপের আগে জয়ের অভ্যাস দারুণভাবে গড়ে উঠছে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজের এ অভ্যাস আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে বহুগুণ। সেই আত্মবিশ্বাসে এবার বিশ্বমঞ্চ রংধনুর সাত রঙে রাঙাতে পারে কি না মাহমুদউল্লাহ সেটাই দেখার।
বাংলাদেশ দল: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), লিটন দাস, নাঈম শেখ, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, কাজী নুরুল হাসান সোহান, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন, শেখ মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ ও তাসকিন আহমেদ।