সুপার টুয়েলভে যাওয়া যতটা সহজ বাংলাদেশ মনে করেছিল, ঠিক ততটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কটল্যান্ডের কাছে হারার পর যে শঙ্কা ঘিরে ধরেছিল, তা তারা দূর করেছে স্বাগতিক ওমানকে হারিয়ে। তাতে স্বস্তি ফিরেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলাদেশের প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ পাপুয়া নিউ গিনি। এই ম্যাচ নির্দিষ্ট ব্যবধানে জিতলেই উঠে যাবে পরের রাউন্ডে। তাই আরেকটি স্বস্তির জয়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ।
চোখ মেললেই দেখা মেলে পাহাড়। চোখ বুজলেও কল্পনায় সেই পাথুরে পাহাড়। ওমানের রাজধানী মাসকটে যে একবার ঘুরেছেন তার ভাবনা এমন না হয়ে কোনো উপায় নেই। এই শহর দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ের ছায়াতলে। আঁকা-বাঁকা রাস্তা হতে শুরু করে দালান-কোঠা সবকিছুই তৈরি পাহাড় কেটে অথবা পাহাড়ের মাঝেই। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-সাকিব আল হাসানদের সামনে এবার পাথুরে পাহাড়ে লাল সবুজের নাম খোদাই করার দিন।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই দিনের ওপরই নির্ভর করছে টিকে থকার পথ। সফল হলেই পাওয়া যাবে বিশ্বকাপের আসল লড়াইয়ে যাওয়ার টিকিট, না হয় কঠিন সমীকরণ না পক্ষে গেলে ব্যাগ-পত্র গুছিয়ে ধরতে হবে দেশের বিমান। দোলাচলে দুলতে থাকা বিশ্বকাপে টিকে থাকার পরীক্ষার দিনে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ এবার পাপুয়া নিউ গিনি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় মাসকটের আল আমিরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে পাপুয়া নিউ গিনির মুখোমুখি মাহমুদউল্লার রিয়াদের দল।
এই পরীক্ষায় বাংলাদেশকে শুধু জিতলেই হবে না, আগে ব্যাটিং করলে কমপক্ষে ৩ রানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে। আর পরে ব্যাটিং করলে প্রথম ইনিংসের পর বোঝা যাবে কত ওভারের মধ্যে বা কত উইকেটে জিততে হবে। তবে পরের ম্যাচ স্কটল্যান্ড যদি ওমানকে হারিয়ে দিতে পারে তাহলে কোনো সমীকরণের কাটাছেঁড়ায় যেতে হবে না, পাপুয়া নিউ গিনিকে হারাতে পারলেই পাওয়া যাবে আরব আমিরাতের টিকিট।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ পার করছিল নিজেদের ইতিহাসের সেরা সময়, অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডকে উড়িয়ে ওমানে পা রেখেছিল বিশ্বকাপের মিশনে। স্কটিশদের বিপক্ষে এক হারে সব আত্মবিশ্বাস ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এতটাই অস্বস্তিতে বাংলাদেশ শিবির, ওমানের বিপক্ষে জয়ের পরও কাটেনি ভ্রম। বাংলাদেশকে স্কটিশ ট্র্যাজেডি থেকে বের হয়ে আসতে হলে পাপুয়া নিউ গিনিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে যেতেই হবে।
ওমান জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান ম্যাচ শেষে জানিয়েছিলেন বাংলদেশের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। অনেক যদি-কিন্তুর ওপর নির্ভর করছে অবশ্য সেটি। সেদিন লক্ষ্যের কথা জানাতে গিয়ে একটু বড় স্বপ্নই দেখিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বলেছেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য সেমি ফাইনাল খেলা। স্কটিশদের মতো পাপুয়া নিউ গিনিও হুমকি দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে, তারাও চান মাহমুদউল্লাহদের হারিয়ে অঘটন ঘটাতে, ইতিহাস রচনা করতে।
তবে পাপুয়া নিউ গিনি নিয়ে বাংলাদেশের ভাবনা জানা যায়নি। পূর্ব নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ক্রীড়া সাংবাদিকদের অপেক্ষার পরও দলের কোনো প্রতিনিধি আসতে পারেননি। এরপর ক্রীড়া সাংবাদিকরা সেই সম্মেলন কেন্দ্র ত্যাগ করেন। তবে ভাবনা নিশ্চয়ই প্রতিপক্ষকে হারিয়ে বি গ্রুপ থেকে সুপার টুয়েল্ভ নিশ্চিত করা। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
পিএনজির স্পিন অলরাউন্ডা চার্লস আমিনি বাংলাদেশকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমরা বিশ্বকাপে খেলতে পেরে সত্যি গর্বিত। আমরা নিজেদের চেষ্টার জন্যও গর্বিত। আমরা হয়তো প্রথম দুই ম্যাচ হেরেছি কিন্তু এখনো আমাদের হাতে একটি সুযোগ আছে। স্কটল্যান্ড যদি অঘটন ঘটাতে পারে আমরাও বাংলাদেশকে হারিয়ে অঘটন ঘটাতে পারি।’
আইসিসির এই সহযোগী সদস্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এই প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামছে। গত দুই দশকে দলটির বিপক্ষে কোনো ধরনের ম্যাচই খেলেনি বাংলাদেশ। সর্বশেষ নব্বইয়ের দশকে, ১৯৮২ সালে অনানুষ্ঠানিক ওয়ানডে ম্যাচে দেখা হয়েছিল দুই দলের। আর এবার একেবারে বিশ্বকাপের আসরে। দুই যুগের বেশি সময় পর এবার সরাসরি বিশ্বকাপেই মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল।
এই ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুব কম। যদি পরিবর্তন হয় তাহলে পেস অ্যাটাকে তাসকিন আহমেদের জায়গায় দেখা যেতে পারে শরিফুল ইসলামকে। এ ছাড়া আর কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। সবশেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট ব্যাটিং অর্ডারে বেশ পরিবর্তন এনেছিল। অভিজ্ঞ সাকিব, মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম তাদের নির্ধারিত জায়গায় ব্যাট না করে তরুণ মেহেদী হাসান, নুরুল হাসান ও আফিফ হোসেনদের। তবে তারা উপরে উঠে এসেও সুযোগ কাজে লাগেতে পারেননি। টিমের কৌশল অনুযায়ী এই ম্যাচেও এমন হতে পারে।
ওমানের বিপক্ষে ১০ উইকেটে হারলেও পাপুয়া নিউ গিনি নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ লড়াই করেছিল। ১৬৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে তারা ১৪৮ রান তুলে ফেলে। ইতিমধ্যে বিশ্বকাপ তাদের শেষ। কোনো কিছু হারানোর নেই, তবে পাওয়ার আছে অনেক কিছু। এখানেই টাইগারদের সবচেয়ে বড় ভয়। যার কিছু হারানোর নেই সে তো চাপমুক্ত হয়ে লড়তে পারবে, আর বাংলাদেশ নিশ্চয়ই বাড়তি একটা চাপে থাকবে। সেটিই এখন শঙ্কার।
সেই চাপ আর শঙ্কা কাটিয়ে বাংলাদেশের এখন এগিয়ে যাওয়ার পালা। পাথুরে পাহাড়ের এই মাসকটে পাপুয়া নিউ গিনিকে হারিয়ে বাংলাদেশ কি পারবে তাদের নাম খোদাই করে রাখতে? কারণ এখানেই যে ওমান পর্ব শেষ।