স্টাফ রিপোর্টার: মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ফুলহাড়া ও চরবাইলজুরি ভাওরপাড়া গ্রামের ফসলী জমিতে দেশীয় ড্রেজার বসিয়ে রাতদিন অবাধে হাজার- হাজার ঘন ফুট বালু বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। গত তিন বছর যাবৎ সংঘবদ্ধ স্থানীয় চক্রটি প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ বালু বিক্রি করছে। বালু বিক্রির কারনে এলাকার হাজার হাজার বিঘা ফসলী জমি হুমকির মধ্যে রয়েছে। ভুক্তভুগি এলাকার লোকজন জীবনের ভয়ে মুখ খুলে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। ফলে এলাকার জনগনের মাঝে চরম আতংক বিরাজ করছে। ড্রেজার ব্যবসায়ী ফুলহাড়া গ্রামের যুবদল নেতা মিনার হোসেন ও চরবাইলজুরী ভাওর গ্রামের নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগকারী ঊষা রানীকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। সংখ্যালঘু পরিবারটি চরম নিরাপত্তার অভাবে ভুগছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে কয়েক দফায় লিখিত অভিয়োগ করেও কোন লাভ হয়নি বলে ভুক্তভোগী পরিবার সহ ্এলাকার লোকজন জানান। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখে গেছে, প্রশাসনের নাকের ডগায় ফুলহাড়া এবং চরবাইরজুরী ভাওরে ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ সমস্ত এলাকায় হাজার – হাজার ঘনফুট মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলনের ধারন ক্ষমতা রয়েছে। এ ভাবে প্রতিদিন ৫/৬ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে থাকে। ফলে এ সমস্ত গ্রামের শত শত একর জমি ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাদের ব্যবসা পাহারা দিচ্ছে একটি বাহিনী। এদের খুটি খুবই শক্তিশালী। জীবনের ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পায়না। ঘিওরে ড্রেজার বন্ধের দাবিতে সম্প্রতি এলাকার জনগন মানব বন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করলে স্থানীয় প্রশাসন সমস্ত ড্রেজার বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে এই সব ভ’মিদস্যুরা কি ভাবে ড্রেজার চালাচ্ছে এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ফুলহাড়া মিনারের ড্রেজার পাশ^বর্তী জমির মালিক সদরউদ্দিন, লতিপ, বিল্লাল, ফুলচান, আঃ বাতেন, হোসেন আলী খান সাংবাদিকদের জানান, গত তিন বছর যাবৎ মিনার অবৈধ ভাবে দেশীয় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এলাকার লোকজন অনেক নিষেধ করলেও সে মানেনি। সে বিভিন্ন সময়ে লোকজনকে হুমকী ধামকী দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এ ব্যাপারে মিনারের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে ব্যবসা করছি। আপনাদের সাথে আলাপ করা হবে। আগেই পত্রিকায় দিয়েননা। উল্লেখ্য, মিনার হোসেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে এ আই টেকনিশিয়ান এই পদে কর্মরত। এ ছাড়া উপজেলা যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী। দলীয় বিভিন্ন কর্মসুচিতে ব্যাপক ভুমিকা রয়েছে । ভাওরপাড়া এলাকার বসবাসরত ঊষা রানী জানান, এলাকার নুরুল ইসলাম তার জমি পুকুর খনন করে অবাধে বালু বিক্রি করছে। গত তিন বছর যাবৎ একটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে । দিবারাত্রি বালু উত্তোলনে ফলে আমাদের জমিগুলো হুমকির মধ্যে রয়েছে। বহুবার উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও কোন ব্যবস্থা নেযনি তারা। ফলে এলাকার নিরিহ শত- শত জমির মালিকরা অসহায় হয়ে পরেছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল আলীম মিন্টু জানান, ঘিওরে প্রশাসন সমস্ত ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তÍু একটি সংঘবদ্ধ চক্র প্রশাসনের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করতে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার। এলাকার লোকজন শুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা খন্দকার সাংবাদিকদের জানান, আমি লিখিত অভিযোগ পাবার পরেও ড্রেজার বন্ধের ব্যবস্থা করি| কিন্তু স্থানীয় একটি চক্র রাতে চুরি করে ড্রেজার এবং ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বিক্রয় করে । তবে কয়েক দিন আগে সমস্ত ড্রেজার এবং ভেকু দিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু মাত্র ফুলহাড়া একটি প্রতিষ্ঠানে বালু ভরাটের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।