সিলেট বিএনপিতে চলছে মামলার হিড়িক। মামলা আতঙ্কে ঘরছাড়া নেতাকর্মীরা। এমনকি মামলার ভয়ে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতেও নামছেন না তারা। তবে এবার সিলেটে আলোচনায় এসেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের আরেকটি মামলা। পুলিশের ওপর হামলা না করেই বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় আসামি হয়েছেন ৮২জন বিএনপি নেতাকর্মী। ইতোমধ্যে পুলিশ এ মামলায় সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদসহ আট জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। এমনকি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনকে ৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে পুলিশের দায়ের করা এ মামলায়।
সূত্র জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ৩০ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে জড়ো হন সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ। এসময় সিলেট কোতোয়ালি থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার গোলাম কাওসার দস্তগীরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেয়। এসময় তিনি কথাও বলেন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের সঙ্গে। প্রায় ২০ মিনিট কথা বলার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলে পুলিশের লেগুনায় করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় পুলিশের সঙ্গে কোনও ধরণের সংঘাত বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পুলিশের কথা কাটাকাটি হয়। এসময় কোতোয়ালি থানা এলাকায় সিয়েরা-১ এর দায়িত্ব পালন করছেন এসআই হাবীবুর রহমান। তিনিও শহীদ মিনারের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের অবস্থানের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। এরপর ওই দিন রাতেই পুলিশের এসআই হাবীবুর রহমান কোতোয়ালি থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা নং-৪৫ দায়ের করেন। এই মামলায় আসামি করা হয় জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জল, কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, সাধারণ সম্পাদক হাজী দিনার, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সুদীপ জ্যোতি এ্যাশসহ বিএনপি, ছাত্রদল, সেচ্ছাসেবক দলের ৮২ জনকে আসামি করা হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন জানান, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনের জন্য জড়ো হওয়া শুরু করতেই পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়। এখানে পুলিশের ওপর হামলার কোনও প্রশ্নই আসে না। পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক সাজানো মামলা দিয়েই যাচ্ছে। এভাবে দেশের রাজনীতি চলতে পারে না। আর এভাবে কোনও গণতন্ত্র হয় না। পুলিশের ওপর ওই দিন হামলা হয়েছে কিনা তা স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করলেই বেরিয়ে আসবে।’
বিএনপির আইনজীবী ও জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফখরুল হক বলেন, ‘বিশেষ ক্ষমতা আইনের নতুন মামলাটি একেবারেই সাজানো। ওই দিন পুলিশের ওপর হামলার কোনও ঘটনা ঘটেনি। জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে পুলিশ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদসহ আট জনকে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাদের নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। যদি পুলিশের ওপর সত্যিকার হামলা হয় তাহলে চৌহাট্টা পয়েন্টে যেসব সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে এসব পর্যবেক্ষণ করলেই সত্যতা বেরিয়ে আসবে ওই দিন কী হয়েছিলো। পুলিশ বিএনপিকে যে হারে গায়েবী মামলা দিয়ে যাচ্ছে তা এককথায় আক্রোশের মামলা।’
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘গত ৩০ অক্টোবর মঙ্গলবার কোতোয়ালি থানাধীন চৌহাট্টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের দুস্কৃতিকারীরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করে জননিরাপত্তা বিপন্ন, জনশৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষনের কাজ বিপন্ন বা ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে নাশকতা সৃষ্টি এবং অন্তর্ঘাতমূলক কার্য সম্পাদনের জন্য সমবেত হয়। এমন খবর পেয়ে মামলার বাদী এসআই হাবীবুর রহমান তার সঙ্গীয় পুলিশের পাশাপাশি সিয়েরা-৪ এর এএসআই মিরাজ উদ্দিনসহ পুলিশের একটি দল নিয়ে শহীদ মিনারের সামনে যান। পুলিশকে দেখেই দুষ্কৃতিকারীরা এলোপাতাড়ি পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে।’
তবে ঘটনার দিন ওই এলাকায় থাকা বেশ কয়েকজন হকার জানিয়েছেন, পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের কোনও সংঘাত কিংবা সংঘর্ষ হয়নি। শহীদ মিনারের সামনে বিএনপির ৮-১০ জন নেতাকর্মী কিছু সময় অবস্থান নেওয়ার পরপরই পুলিশ তাদের লেগুনায় করে থানায় নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী জানান, ‘আমরা তখন দোকানে বসে ছিলাম। হঠাৎ শহীদ মিনারের সামনে পুলিশ দেখে বের হই। এসময় পুলিশ বিএনপির কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এরমধ্যে বিএনপি নেতা আলী আহমদকে আমরা চিনতে পারি।’ ওই দিন পুলিশের ওপর কোনও হামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ এসে তাদের সঙ্গে কিছু সময় কথা বলেই গাড়িতে করে নিয়ে যায়। এসময় বিএনপি নেতা আলী আহমদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেন পুলিশের একজন কর্মকর্তা।’
মামলার বাদী কোতোয়ালি থানার এসআই হাবীবুর রহমান জানান, ‘চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন নাশকতার জন্য, এমন খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়া মাত্রই পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অভিযান চালিয়ে আট জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরদিন ৩১ অক্টোবর বুধবার বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশ আটককৃতদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।’ বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলায় পুলিশের কেউ আহত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়টি এড়িয়ে যান।