বিশেষ প্রতিবেদক:
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আইনি জটিলতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার কারণে দীর্ঘ ২৭ বছর পর বগুড়ার কোনো আসন থেকে জিয়া পরিবারের কোনো সদস্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে থেকে বঞ্চিত হলো।
১৯২৮ সালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে সামরিক শাসন জারির পর সামরিক আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে তৎকালীন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দলীয় জোট। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের সময় পরপর দুটি নির্বাচন হলেও এরশাদের শাসনামলে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ১৯৯০ সালে ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো বগুড়া-৭সহ দেশের ৫টি সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচন করে সবগুলোতেই বিজয়ী হন। ষষ্ট, সপ্তম, অষ্টম এবং নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে নির্বাচন করেন এবং বিজয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়া ‘জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট’ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারান্তরিণ রয়েছেন। এ অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি-না? এ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই। পক্ষান্তরে এটর্নি জেনারেলের দপ্তর থেকে বলা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই। বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারটি এখন আর সাধারণ রাজনীতিবিদদের হাত নেই। আইনের মাধ্যমে তাকে বিষয়টি সমাধান করতে হবে বলে বলা হচ্ছে সরকারের তরফ থেকে। এ অবস্থায় বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। এ দুই আসনে বিএনপির অন্য প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। শাজাহানপুর উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা সরকার বাদল বগুড়া-৭ আসনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। আবার গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা মোর্শেদ মিল্টন বিএপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বগুড়া-৬ আসনে বেগম খালেদা জিয়ার পাশাপাশি মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বগুড়া পৌরসভার মেয়র একেএম মাহাবুবুর রহমান ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাশাপাশি অন্য প্রার্থী থাকায় ভোটাররা ধরে নিয়েছে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে অন্য কেউ এই দুই আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হবেন। আর বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য কেউ যদি বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হন তবে দীর্ঘ ২৭ বছর পর বগুড়ায় জিয়া পরিবারের কোনো সদস্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে থাকলো না। রোববার যাচাই বাছাইকালে দুটি আসনে প্রাথমিক পর্যায়েই বেগম জিয়ার মনোনয়ন পত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। এদিকে বেগম জিয়ার মনোনয়ন বাতিল হলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ করে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।