স্টাফ রিপোর্টার : মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত অসুস্থতায় সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অর্থসংকটে থাকা লোকসংগীত শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়ার চিকিৎসা চলছিল। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই হাসপাতাল থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১টারদিকে এ খবর জানিয়েছেন কাঙালিনী সুফিয়ার মেয়ে পুষ্প বেগম।
পুষ্প বেগম বলেন, ‘মা যে কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে, আমি প্রথমদিন থেকেই ওখানকার বারান্দায় থাকতাম। এই কয়েকদিনে ঘুম বলতে আমার জীবনে কিছু ছিল না। মঙ্গলবার ভোরে যখন আজান দিলো, চোখটা একটু লেগে আসছিল, ঠিক তখনই কিছু লোক গিয়ে আমায় বলে, আমরা ঢাকা থেকে এসেছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর লোক। আপনার মাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে, ভালো চিকিৎসার জন্য।’ ‘এরপরই আমরা একটা অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আসি। তারপর মাকে পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি করা হয়। যারা আমাদের ঢাকায় নিয়ে আসছে, তারা মাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।’ পুষ্প বেগম জানান, কাঙালিনী সুফিয়া চিকিৎসক রফিকুল আলমের অধীনে রয়েছেন। কেবিন ব্লক ২১৬ নম্বর বেডে আছেন।
‘ধার-দেনা’য় চলছে কাঙালিনী সুফিয়ার চিকিৎসা! সেসময় পুষ্প বেগম বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা বলেছেন আপনারা চিকিৎসা চালিয়ে যান। যখন ছাড়পত্র দিবে, তখন তারা আমাদের একটা বিল দিবেন, ছাড় দিয়ে। আমাদের শুধু সে টাকাই দিতে হবে। কিন্তু বর্তমানে মায়ের যে চিকিৎসা চলছে, তারা টাকা কিন্তু আমাকে ধার করেই দিতে হচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে, আমার জন্য আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া।’
৪ ডিসেম্বর রাতে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়লে কাঙালিনীকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুরুতে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিউ) রাখা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা অর্থ সাহায্য পান কাঙালিনী।
সাভারের জামসিং এলাকায় তিন শতাংশ জমির ওপর একটি টিনশেড ঘরে মেয়ে পুষ্প ও নাতনিকে নিয়ে থাকেন শিল্পী কাঙালিনী। বার্ধ্যকের কারণে খুব একটা বাড়ির বাইরে যেতে পারতেন না। এ ছাড়া গান গাওয়ার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখন আর আগের মতো তার ডাকও পড়ে না। তাই সাভারের বাড়িতেই সময় কাটত তার।
১৯৬১ সালে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির রামদিয়া গ্রামে জন্ম কাঙালিনীর। টুনি হালদার থেকে কাঙালিনী সুফিয়া হয়ে ওঠার আগেই বাবা খোকন হালদার আর মা টুলু হালদারের ইচ্ছায় সুধীর হালদার নামের এক বাউলের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। কিন্তু সংসার করার স্বপ্ন কুঁড়িতেই শেষ হয়ে যায়।