মোঃ শফি আলম ,ঘিওর:
এ যেন জাতীয় নির্বাচন। রয়েছে পোলিং এজেন্ট, নিরাপত্তায় আনসার-পুলিশ, ভোটকেন্দ্রে রয়েছে সাংবাদিকরাও। প্রার্থীরা ব্যস্ত ভোটারদের মন জয় করতে। আর ভোট কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীদের অভিভাবকদের মাঝেও অন্যরকম উচ্ছাস। দেখে জাতীয় কোন নির্বাচন মনে হলেও এরা ব্যাপক উৎসাহ আর উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে মানিকগঞ্জের ঘিওরে উপজেলার ৮৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় দুপুর একটায়। বিদ্যালয়ে প্রার্থীদের পোস্টার টানানোসহ প্রচার-প্রচারণায় করতে দেখা গেছে।বিদ্যালয় গুলোতে চলছে প্রার্থীদের নিয়ে আলাপ-আলোচনা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসব বিরাজ করছে। অনেকে আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পোস্টার ছেড়ে ভোট চাচ্ছে এবং দিচ্ছে নানা প্রতিশ্রুতি।
আজ বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরেজমিন ঘুরে এমনচিত্র দেখা গেছে।এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীরাই ভোটার, নির্বাচন কমিশনসহ সবধরনের কাজ করবে শিক্ষার্থীরাই। এই কার্যক্রমে স্থানীয় ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মাঝে বিপুল আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। এসব বিদ্যালয়ের এবার প্রায় ৯শ প্রার্থীরা জয়ী হতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছে। আর ভোটার ১৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী।
শিশুদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সৃষ্টির লক্ষে নির্বাচনকে কেন্দ্রকরে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা বিদ্যালয় আঙ্গিনায় সাদা-কালো ও কালার পোস্টার সাঁটিয়েছেন। তাছাড়া অভিভাবকরাও বিদ্যালয় আঙ্গিনায় নিজ নিজ প্রার্থীদের পক্ষে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভোট দেয়ার বিষয়ে কথা বলছেন।
শিক্ষা অফিস সূত্র জানা যায়, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এক যোগে উপজেলার ৮৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ নির্বাচনে ভোট প্রদান করছে। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার লক্ষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকেই প্রিজাইডিং, পোলিং কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তার কাজে পুলিশ ও আনসার সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে।
বানিয়াজুরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ বাবুল মিয়া বলেন, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি থেকে সাতজন প্রার্থী জয়ী হবে। তারা স্বাস্থ্য, বন ও পরিবেশ বিষয়ক, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, আপ্যায়ণ সহসাতটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবে। স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎসাহ- আনন্দমুখর পরিবেশ পরিলক্ষিত হয়েছে। ই বিদ্যালয় থেকে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। মোট ভোটার ছিল ২৪৭ জন, ভোট প্রদান করেছে ১৭৯ জন।
জাবরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনে সাতটি পদে ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এই বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনে জয়ী প্রার্থী ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী শেখ স্মরণী জানায়, বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শিক্ষার্থীরা তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করেছে। আমি এ দায়িত্ব পালন করবো। নির্বাচনে বানিয়াজুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র মোঃ সাইম ১২২ ভোট পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। তার আনন্দের সাথে তার অভিভাবকরার উচ্ছসিত। এসময় তারা দায়িত্ব পালনের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা জ্ঞাপন করে।
বড়টিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকা মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, এ বছর নির্বাচনে শিক্ষার্থী ছাড়াও অভিভাবকদের মধ্যে অনেক বেশিউৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
ঘিওর উপজেলা শিক্ষা অফিসার হাসিনা আক্তার পারভীন বলেন, গণতন্ত্রের চর্চা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শিশু শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাশীল করতে এক যুগ ধরে সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু করোনার প্রকোপ কমে আসায় দুই বছর পর হচ্ছে এ নির্বাচন।