স্টাফ রিপোর্টার:
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগ আর এই সংগঠনের মানিকগঞ্জ জেলার নব গঠিত ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘিরে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।যুব মহিলা লীগের নতুন কমিটিকে পারিবারিক কমিটি বলছে সংগঠনের নেতা কর্মীরা। বলা হচ্ছে স্বজন প্রীতির এক উজ্বল দৃষ্টান্ত রয়েছে এই কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে।
গত ২০ শে জুন রাত ১০টার দিকে জেলা যুব মহিলা লীগের নতুন আহবায়ক কমিটি প্রকাশ করা হয়। যে কমিটি কে নিয়ে নানা মহলে চলছে নানা বিতর্ক । কমিটি প্রকাশের পর স্থানীয় যুব মহিলা লীগের নেতা কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নানা অভিযোগ রয়েছে এই কমিটির বিরুদ্ধে।বলা হচ্ছে নতুন এই কমিটি মা মেয়েদের পারিবারিক কমিটি। এই কমিটির আহবায়ক রোমেজা আক্তার খান মাহিন আর তার দুই মেয়েকে করেছেন ঐ কমিটির সদস্য। পদ বঞ্চিতরা আরো দাবি করেন কমিটিতে থাকা অনেকেই মানিকগঞ্জের সন্তান হলেও তাদের বৈবাহিক সূত্রে তারা মানিকগঞ্জ থাকেন না মাঝে মাঝে বেড়াতে আসেন মানিকগঞ্জে। তারা আরো দাবি করেন স্থানীয় নেতা কর্মীদের বড় একটি অংশ কে না জানিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে রাতের আধাঁরে গোপনে করা হয়েছে এই কমিটি।
এর আগে দেখা যায় মানিকগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের প্যাড ব্যাবহার করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করেন কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সভপাতি নাজমা আক্তার।যেই কমিটিতে কাটাছেড়া করে হাতে লিখে বাড়ানো হয়েছে একজন যুগ্ম আহবায়ক ও একজন সদস্য। অন্যদিকে কমিটি প্রকাশের এক দিন পরে নানা সমালোচনার মুখে ২৩ জুন রাত ১০টার দিকে বাকি সব ঠিক রেখে আবার নতুন করে একজন সদস্য বৃদ্ধি করে মোট ৩২ সদস্য বিশিষ্ট নতুন একটি কমিটি প্রকাশ করা হয় কেন্দ্রীয় কমিটির প্যাডে। ঐ প্যাডেও দেখা গেছে কেবল কেন্দ্রীয় সভাপতির একক সাক্ষরেই অনুমোদন করা হয়েছে জেলা কমিটি।
নতুন কমিটির বিষয়ে মানিকগঞ্জে জেলা যুব মহিলা লীগ নেত্রী ফারজানা খান লিয়া বলেন, আমরা ছাত্রলীগ করেছি আমরা দলের সকল মিছিল মিটিং প্রোগ্রামে সব সময় থাকার চেষ্টা করি। যুব মহিলা লীগের শেষ প্রোগ্রামেও যখন হয় তখন আমি ৫ মাসের প্রেগনেন্ট ছিলাম তার পরেও প্রোগ্রামে উপস্থিত থেকেছি। আমাদের কাউকে কিছু না জানিয়েই হুট করে কমিটি দিয়ে দিল। যারা এই কমিটিতে এসছে তাদের বেশিরভাগ নেত্রীদের কখনই দেখি নাই আমরা।
কমিটির বিষয়ে যুব মহিলা লীগ নেত্রী সালমা আক্তার বলেন, এই কমিটি আমরা মানিনা এটা একটা অবৈধ কমিটি। এই কমিটি একটি পারিবারিক কমিটি এই কমিটির ০৩ নং সদস্য আফসানা জামান অরিন এবং ০৮ নং সদস্য আরোয়া জামান মোহনা আহবায়ক মাহিন আপার নিজের মেয়ে। এখন মা মেয়েরাই যদি কমিটির সব হয় তাহলে আমাদের কি হবে। আমরা পরিশ্রম করি দলের জন্য আমাদের ত্যাগ রয়েছে, আমাদের বঞ্চিত করে পারিবারিক কমিটি করা হয়েছে এটা আমরা কখনই মানতে পারি না।
কমিটির ব্যাপারে যুব মহিলা লীগের নতুন কমিটির সদস্য শিরিন আক্তার মুক্তা বলেন, বর্তমান আহবায়ক একজন বিএনপি নেতার স্ত্রী। তিনি আমাদের অবগত না করেই রাতের আধাঁরে পকেট কমিটি করে নিয়ে এসেছে। আমরা এই কমিটি প্রত্যাখান করছি। আহবায়ক এর তার স্বেচ্ছাচারিতার এক উজ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে।তিনি আমাদের সকলের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন। আমাদের কোন কিছু না জানিয়ে একা একা ঢাকায় গিয়ে কমিটি নিয়ে এসছেন। অবিলম্ভে এই কমিটি ভেংঙ্গে জেলার যুব মহিলা লীগের প্ররিক্ষিত ও ত্যাগী কর্মীদের নিয়ে জেলার নেতৃবৃন্দদের সাথে সমন্বয় করে সুন্দর ও শক্তিশালী একটি কমিটি গঠন করা হোক। যে কমিটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারন করে জননেত্র শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে পারে।
কমিটির ব্যাপারে জেলা যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি মোর্শেদা হোসেন মিতু বলেন, হঠাৎ ফেজবুকের মাধ্যমে জানতে পারি জেলা যুব মহিলা লীগের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি দেখে আমি হতবাক কিভাবে এধরনের একটি কমিটি হলো। এই কমিটির তিন চার জন ছাড়া কাউকে আমি চিনি না। সকলের কাছে আমার প্রশ্ন কিভাবে এই কমিটি হলো যেখানে আমার জেলার কোন এমপি ও নেতৃবৃন্দরা জানে না। কারো সাথে সমন্বয় না করে স্বজনপ্রীতি করে প্রীতি করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি জেলার সভাপতি ছিলাম আমাকে সদস্য হিসেবেও রাখা হয়নি অথচ আমার কমিটির সাধারন সম্পাদক এই কমিটির আহবায়ক ও তার দুই মেয়ে সদস্য হয়েছেন। আমি এই কমিটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। জেলার প্যাডে এই কমিটিতে শুধু আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাজমা আক্তার স্বাক্ষর করেছেন। আামি জানি জেলার একটি কমিটি গঠন করলে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের স্বাক্ষর থাকে। আমি মনে করি এটা অবৈধ কমিটি। এই কমিটি ভেংঙ্গে যাদের ডাকলে পাওয়া যায় ও দলের জন্য কাজ করে এমন কর্মীদের নিয়ে নতুন কমিটি দেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।
কমিটির বিষয়ে সদ্য ঘোষিত কমিটির আহবায়ক রোমেজা আক্তার খান মাহিন বলেন, যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাজমা আক্তার জেলা যুব মহিলা লীগের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করেছেন। কমিটির ৩ নং ও ৮ নং সদস্য হিসেবে তার দুই মেয়েকে রাখা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করে বলেন আমার দুই মেয়েকে রাখা হয়েছে। একটি কমিটিতে এক পরিবারের তিন জন অনেক দলীয় নেতাকর্মীরা বলছে পারিবারিক কমিটি। তিনি আরো বলেন, যারা এই যুব মহিলা লীগের কমিটির বিরুদ্ধে কথা বলেন তারা যুব মহিলা আওয়ামীলীগের কেউ নন।
আজকে যারা আওয়ামীলীগ জেলা অফিসে বসে এসির বাতাস খাচ্ছেন তারা যেন হিসাব করে দেখে এটা কার অবদান। এক সময় মানিকগঞ্জে আওয়ামীলীগ করার কেউ ছিলেন না। আমার বাবা রেজু আহম্মেদ খান মানিকগঞ্জে আওয়ামীলীগের জন্ম দিয়েছে। যখন আওয়ামীলীগের ঘর পুরিয়ে দিয়েছে তখন আমার বাবা জায়গা ও ঘর করে দিয়েছে। ২০০৪ সালে যখন যুব মহিলা লীগ প্রতিষ্ঠা হয় আমি জেলা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলাম। আমার এক মেয়ে ঢাকা ডেন্টাল ১৩টি ইউনিটির মধ্যে একটিতে ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিলেন। কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার আমার মেয়ের শশুর বাড়ির দিক থেকে নিকট আত্মীয়। ঢাকা জেলার সভাপতি ও ধামরাইয়ের এমপি বেনজীর আহম্মেদ এর ভাগীনার কাছে আমার মেয়ের বিবাহ হয়েছে। তিনিও আমার নিকট আত্মীয়