মোঃ শফি আলম, ঘিওর থেকে:
মানিকগঞ্জের ঘিওরে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই কোরবানীর পশু হাট বসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের রাথুরা এলাকায় এই হাট বসিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী। তারা আইনের তোয়াক্কা না করে এবং প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এই পশুর হাট বসিয়ে রীতিমত কেনা বেচা করছেন।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এখানে পশুর হাট বসানোর কোন প্রকার অনুমতি প্রদান করা হয়নি।
সরজমিন দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ – ঘিওর আঞ্চলিক সড়কের বানিয়াজুরী বাসষ্ট্যান্ডের অদূরে “দিব্য এগ্রো এন্ড ডেইরী ফার্ম” নামে পশু প্রদর্শণী ও বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী দেবাশীষ সিংহ। তার সাথে রয়েছেন আরোস্থানীয় বেশ কয়েকজন। আঞ্চলিক সড়কের পাশে এবং বাজার এলাকায় এই পশু বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলায় চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণের। বিশাল প্যান্ডেল, ব্যানার, লাইটিং, মাইকিং ও শামিয়ানা টাঙিয়ে জমজমাট এই হাটে রবিবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে পশু কেনা বেচা। রাস্তার উপর অস্থায়ী তোরণ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও ইজারাদারদের বসার স্থান ও হাসিল ঘরগুলো সম্পূর্ণ তৈরি। ইজারাদারদের নাম ঠিকানা সম্বলিত “দিব্য এগ্রো এন্ড ডেইরী ফার্ম” নামে পোস্টার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। পাশেই বানিয়াজুরী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অফিস রয়েছে। ফলে রাস্তার পথচারী এবং শিক্ষার্থীদের চলাচলে ভোগান্তি ও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও পশুর বর্জ্যে এলাকার পরিবেশ দুর্গন্ধময় হয়ে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ০৫.৩০.৫৬০০.২০৬.০৯.০২২.১৮-২৬১ নং স্মারকে জেলায় সরকার অনুমোদিত কোরবানীর পশুর হাটের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করে গরুর হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই তালিকায় নেই দিব্য এগ্রো এন্ড ডেইরী ফার্ম এর নাম। তারপরেও কেমন করে তারা পশু বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে তুললো এ প্রশ্ন এলাকাবাসীর।
ঘিওর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী উপজেলায় ১টি (ঘিওর সদরে) পশু হাট বসানোর অনুমতি দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রদর্শনীর নামে বিভিন্ন স্থান থেকে গরু সংগ্রহ করে এ হাটে বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা। এছাড়াও প্রশাসনের কোন প্রকার অনুমতি ছাড়া ও হাট ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে কোরবানীর পশু বিক্রয় করছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে ইজারা ছাড়া তারা কিভাবে অস্থায়ী হাট বসালো এ নিয়ে এলাকাবাসী ও সরকারী অনুমোদিত হাটের ইজারাদারদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ইজারা ও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া হাট কিভাবে বসালেন জানতে চাইলে দেবাশীষ সিংহ বলেন, আমরা নতুন উদ্যোক্তা। আমাদের খামার রয়েছে বেশ কয়েকটি। এই খামারের পশুগুলো এখানে প্রদর্শণী ও বিক্রয় করছি। বাংলাদেশে অনেক পশু বিক্রয় কেন্দ্র আছে যেখানে প্যান্ডেল করে পশু বিক্রয় করে। এ বিষয়ে আমি জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি, মিনিস্ট্রিতে কথা বলেছি। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যানকে ও থানায় অবহিত করা হয়েছে।
বানিয়াজুরী ইউপি চেয়ারম্যান এস আর আনসারী বিল্টু বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে এই হাটের কোন অনুমতি দেয় নি। এ বিষয়ে বানিয়াজুরী ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে (স্মারক নং-২০২২-২২৯) সরকারীভাবে অনুমোদন বিহীন পশুর হাট/ প্রদর্শণী ও বিক্রয় কেন্দ্রটি বন্ধ করার নোটিশ করেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: হামিদুর রহমান বলেন, উপজেলায় ঘিওর সদরে একটি পশুর হাটের অনুমোদন দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। এর বাইরে অস্থায়ী কোরবানীর পশুর হাটের কোন ইজারা দেয়া হয় নি। তবে যে বা যারা ইজারা ছাড়া হাটের জন্য স্থাপনা তৈরি করেছে সেটা বেআইনি। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।