অভি হাসানঃ
মানিকগঞ্জের গ্রামীণ সংস্কৃতিতে ‘ভেলা ভাসানি’ অনুষ্ঠান ও মেলা একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। আগে এ এলাকায় বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মেলা বসত। যেমন হিন্দুদের মধ্যে রথের মেলা, গলুইয়া ইত্যাদি এবং মুসলমানদের মধ্যে মহররমের মেলা, খোদায়ী শিন্নির মেলা ইত্যাদি। এখনো এসব মেলা একেবারে হয় না তা নয়। তবে আগের চেয়ে অনেক কম।
বেশ কয়েক বছর ধরে এ এলাকায় বাংলা মাসের ভাদ্র মাসে ভেলা ভাসানি মেলা বেশ জমে উঠে। শোনা যায়, নুরুল্লাপুরের শাহ লাল ফকিরের আস্তানা থেকে এ মেলার আবির্ভাব হয়েছে। পরবর্তীকালে মানিকগঞ্জে এ মেলা ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে মানিকগঞ্জের অনেক গ্রামেই এ মেলা ও অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, ‘ভেলা ভাসানো’ অনুষ্ঠান হিন্দু সমাজেও প্রচলিত আছে। জানাযায় বিক্রমপুরের নুরুল্লাহপুরসহ বিভিন্ন এলাকার হিন্দুরা এ ভেলা ভাসিয়ে থাকে। যেমন-ইছাপুরা গ্রামের পরিতোষ চন্দ্র চক্রবর্তী, সুজানগর আখড়ার সুবল সাধু, ফৈনপুর গ্রামের রাধেশ্যাম সরকার প্রমুখ। হিন্দু সমাজের লোকজনও নাকি খোয়াজ খিজিরের (আ.) উদ্দেশেই ভেলা ভাসিয়ে থাকেন।তবে মানিকগঞ্জে মুসলিম সমাজে এ ‘ভেলা ভাসানো অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
এই অনুষ্ঠানের অনেকেই বিশ্বাস করেন ‘ভেলা ভাসানো হয় হজরত খিজিরের (আ.) উদ্দেশে। তিনি জিন্দাপীর। তিনি এখনো বেঁচে আছেন। তিনি পানির দায়িত্বে নিয়োজিত। পানির আপদ-বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং মনোবাসনা পূর্ণ করার জন্য এ ভেলা ভাসানো হয়। হাদিসেও এর উল্লেখ আছে’।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় ভেলা ভাসানির নানা অনুষ্ঠান। পরে শেষ হয় রাত সাড়ে ১১ টার সময়ে। পরে ভেলা নিয়ে বেউথা কালিগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম সেওতার আবুল কালামের বাড়িতে বৃহস্পতিবার ভেলা ভাসানো ও মেলার আয়োজন করা হয়। মোঃ আবুল কালাম, মোঃ সিরাজুল ইসলাম, এম এ রহম মিয়া , মোঃ মানিক,মোঃ মহর ঠান্ডু মিয়া ভেলা ভাসানোর কার্যক্রম পরিচালনা করেন। মেলায় প্রায় ৪ হাজার লোকের সমাগম হয়।এছাড়াও ভেলা ভাসানো উপলক্ষে খাবার বিতরণ করা হয়।
আজ শুক্রবার রাতে যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হবে।