নিউজ ডেস্ক:
বর্তমানে দেশের ক্ষুদ্রতম প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে মোট ৪ হাজার ৫৭৬টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে ১০ জন করে গ্রাম পুলিশ কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে একজন দফাদার এবং নয়জন মহল্লাদার পদে রয়েছেন।
পাঁচ বছর পর প্রায় ৪৭ হাজার গ্রাম পুলিশদের বেতন-ভাতা বাড়ছে। স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত একটি সুপারিশ বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ (দফাদার ও মহল্লাদার) সদস্যদের বেতন-অবসর ভাতা ১৫ থেকে ২৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। গ্রাম পুলিশদের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সম্মানি একই থাকছে।
ইউনিয়ন পরিষদের দফাদারদের বেতন ৭ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার ৫০০ টাকা করা হচ্ছে। এর ফলে তাদের বেতন বাড়ছে ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তাদের অবসর ভাতা ৬০,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২,০০,০০০ টাকা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের অবসর ভাতা বাড়ছে ২৩৩ শতাংশ।
আর একজন মহল্লাদারের বেতন ৬৫০০টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫০০ টাকা করা হয়েছে। তাদের বেতন বাড়ছে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের অবসর ভাতা ৫০,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১,৫০,০০০ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ তাদের অবসর ভাতা বাড়ছে ২০০ শতাংশ।
গ্রাম পুলিশ সদস্যরা তাদের বেতনের ৫০ শতাংশ পাবেন সরকারি কোষাগার থেকে এবং বাকিটা দেবে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ।
সূত্র জানায়, সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে গ্রাম পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে আরও আন্তরিক হবেন। তবে অনেক ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম পুলিশের বেতন-ভাতা সময় মতো দিতে পারছে না। ফলে, অনেক সময় উপজেলা পরিষদের হাট-বাজারের ইজারার টাকা জমার জন্য সৃষ্ট তহবিল থেকে তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট উপসচিব নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম পুলিশদের বেতন সময় মতো দিতে পারছে না বলে, তাদের জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাদের জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি এখন রায়ের অপেক্ষায় থাকা একটি মামলার ওপর নির্ভর করছে। তবে তাদের বেতন বাড়ানোর প্রশ্নে কোনো সমস্যা নেই বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, গ্রাম পুলিশদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ গ্রাম পুলিশের মহল্লাদারদের জাতীয় বেতন স্কেলের ২০তম গ্রেডে এবং দফাদারদের ১৯তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বেতন স্কেল অনুসারে ২০১১ সালের ২ জুন থেকে তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে বলা হয়।
২০০৮ সালে গ্রাম পুলিশের সদস্যদের জাতীয় বেতন স্কেলের চতুর্থ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০১৭ সালে লাল মিয়াসহ ৩৫৫ জন গ্রাম পুলিশ সদস্য হাইকোর্টে একটি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেন। এতে ২০০৮ সালের সিদ্ধান্ত অনুসারে গ্রাম পুলিশ সদস্যদের চতুর্থ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
৩৫৫ জন রিট করলেও সারা দেশে ৪৭ হাজার গ্রাম পুলিশ সদস্য রয়েছেন। রিট আবেদনকারীসহ সবাই এসব সুবিধা পাবেন।