নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ভর্তুকি খাতে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। সর্বাধিক ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে, যার পরিমাণ ২ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। রফতানি প্রণোদনা খাতে ২১০০ কোটি টাকা এবং জ্বালানি খাতে প্রণোদনার পরিমাণ ছিল এক হাজার কোটি টাকা। রফতানি খাতে প্রণোদনার মধ্যে শুধু রফতানি খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ১৯০০ কোটি টাকা। বাকি ২০০ কোটি টাকা পাট খাতে দেওয়া হয়েছে।
এবারই প্রথম দুই মাসে ভর্তুকি খাতে এত টাকা ছাড় করা হয়েছে। এর আগে আর কখনো দুই মাসে এত টাকা ভর্তুকিতে ব্যয় করা হয়নি। বিদ্যুৎ খাতে যে ভর্তুকি তার অধিকাংশ দেওয়া হয়েছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের। এই অর্থ দেওয়া হয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ। অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভর্তুকি অর্থ দেওয়া হয়েছে। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাজেটে ভর্তুকি সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যয় বরাদ্দ রয়েছে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ খাতে যে ২ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয় তা ছিল গত ২০২১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের ও ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুসারে। এই তিন মাসের ভর্তুকির অর্থ চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে দেওয়া হয়। অন্যদিকে জ্বালানি খাতের এক হাজার কোটি টাকা এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) খাতে দেওয়া হয়েছে। রফতানি প্রণোদনার বেশির ভাগই দেওয়া হয়েছে গার্মেন্ট খাতে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ভর্তুকির আরও অর্থ ছাড় করা হবে বলে সূত্র জানায়।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য খাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। বিদ্যুতের ভর্তুকি ১৭ হাজার কোটি টাকা, সারের ভর্তুকি ১৬ হাজার কোটি টাকা। এলএনজি ভর্তুকি ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়, প্রতি বছরই বাজেটে ভর্তুকির চাপ বেড়ে চলেছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২০২৩ সালের বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতিতে সরকারের ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার ওপরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের প্রাথমিক প্রাক্কলনে ব্যয় এবার আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৯০ শতাংশ।’
এই ব্যয় আরও বাড়তে পারে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস ও সারের মূল্যের সাম্প্রতিক যে গতিপ্রকৃতি তাতে ভর্তুকি ব্যয় আরও ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যবস্থাপনায় একটি চ্যালেঞ্জ।’
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, করোনা-উত্তর চাহিদা বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও এলএনজির মূল্য বৃদ্ধি এবং সর্বশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকির চাপ বাড়ছে। এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে ভর্তুকির চাপ আরও যে বাড়বে তা নিশ্চিতই বলা যায়।
তবে ভর্তুকির চাপ কমানোর জন্য সরকার ইতোমধ্যে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। বাড়ানো হয়েছে এলপিজি গ্যাসের দামও। খুব শিগগিরই বাড়ানো হতে পারে বিদ্যুতের দাম। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে সরকারকে এই খাতে আর ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। উপরন্তু তেল বিক্রি সরকার এখন মুনাফাও করছে। এর আগে গত আট বছর তেল বিক্রি করে বিপিসি ৪৮ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে।