বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদার জাপান। ফাইল ছবি
আমার নিউজ ডেক্স,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকে কেন্দ্র করে বন্ধু রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আগামী এপ্রিলে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী জাপান সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সফরে জাপান সরকারের সঙ্গে যেসব বিষয় গুরুত্ব পাবে তার মধ্যে রয়েছে- বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ (বিগ বি) বাস্তবায়ন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) বা অর্থনৈতিক অংশীদারীত্ব চুক্তি (ইপিএ)।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, জাপান বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন সহযোগী। তাদের সব ধরনের অথনৈতিক সহযোগিতা আমাদের কাম্য। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ যে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে এজন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধনমন্ত্রীর জাপান সফরকালে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। আমরা সেভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথরিটি (বিএইচটিপিএ), বাংলাদেশের জাপান দূতাবাস, ইউএনআইডিও, টোকিওর আইটিপিওর অংশগ্রহণে একটি ওয়েবিনার আয়োজন করা হয়। সেখানে বাংলাদেশে ব্যবসা করছে এমন প্রায় ৭১ দশমিক ৬ শতাংশ জাপানি কোম্পানি তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহ জানিয়েছে। ১০০টির বেশি জাপানি কোম্পানি ওয়েবিনারে অংশ নেয়। ওয়েবিনারে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হাই-টেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরা হয়।
সূত্র জানায়, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য বৈঠককে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সফর করছে জাপান সরকারের আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধি দলটি সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সিনিয়র বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার উপদেষ্টা নাকাটানি। বৈঠকে বিগ বি উদ্যোগের অগ্রগতি এবং জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের এফটিএ বা ইপিএর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা নিয়ে আলোচনা হবে বলেও সূত্রের ভাষ্য।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জাপানি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন অসুবিধা দূর করতে একটি কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। এই কমিটি বিভিন্ন সময় জাপানি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে বিভিন্ন সুপারিশ করে থাকে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে।
তিনি বলেন, জাপানের প্রতিনিধিদল তাদের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ সুবিধা, ইকোনমিক জোনে জাপানের বিনিয়োগের সুবিধা-অসুবিধা নিয়েও আলোচনা করতে পারে। ইতিমধ্যেই নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানি বিনিয়োগকারীরা ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, জাপানের কাছে বাংলাদেশ খুবই আকর্ষণীয়। এ কারণে ২০১৪ সাল থেকে জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের পরামর্শে বিগ বি উদ্যোগের আওতায় বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কেন্দ্র এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিগ বি উদ্যোগ বাংলাদেশ ছাড়াও এই অঞ্চলের একাধিক রাষ্ট্রে বাস্তবায়নাধীন। ইন্দো-প্যাসিফিকের মূল ধারণা জাপানের বিগ বি উদ্যোগ থেকেই নেওয়া।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের তীরে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম ঘিরে বিগ বি উদ্যোগকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও নতুন বিনিয়োগ সুযোগ তৈরির নতুন ক্ষেত্র হিসেবে ধরা হয়।
ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বিগ বির আওতায় সব ধরনের অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্কে রাজি আছে বাংলাদেশ। কিন্তু ইন্দো-প্যাসিফিক ইনিশিয়েটিভে অস্ত্র সহযোগিতার মতো বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ আগ্রহী নয়।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে জাপানে ১ হাজার ৩৫৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে দেশটি থেকে আমদানি করা হয়েছে ১ হাজার ৪১০ কোটি ডলারের পণ্য। আশা করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরো বাড়াবে। বিশেষ করে তৈরি পোষাক রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।