আশুলিয়া প্রতিনিধি : আশুলিয়ায় গ্যাস সিলিন্ডার গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে মূহুর্মূহু সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে ব্যবসায়ী, আবাসিক এলাকার বসতকারিসহ সাধারণ মানুষকে প্রাণ রক্ষায় দৌঁড়ে পালাতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় ৬টি ব্যবসা কেন্দ্র, ৪টি আবাসিক কক্ষ ও একটি ওয়ার্কশপ ভস্মীভূত হয়েছে। ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিস এর সদস্যরা ঘন্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। এসময় ফলধারী নারিকেল গাছসহ কয়েকটি তরতাজা বৃক্ষ অগ্নিকান্ডের লেলিহান শিখায় ভস্মীভূত হয়েছে। এ ঘটনায় একজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহতকে এম্বুলেন্সযোগে রাজধানীতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বুধবার বিকেল ৫টায় আশুলিয়ার নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়কের বাইপাইল থানা গেটের বিপরীতে কুলফুতনেছা দ্বিতীয় তলা মার্কেটের নিচতলা ও মার্কেটের পিছনে খলিলুর রহমানের মালিকানাধীন ছারছিনা এন্টারপ্রাইজ নামে বিভিন্ন কোম্পানীর সিলিন্ডার গ্যাস বোতল ব্যবসায়ীর গোডাউনে এ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটে।
এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ মার্কেটের পিছনে খলিলের গ্যাস সিলিন্ডার রক্ষিত গোডাউনে তারা আগুন দেখতে পান। মূহুর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা পার্শ্ববর্তী আবাসিক কয়েকটি কক্ষে এবং দোকানপাটে ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পরপর বিকট শব্দে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আতঙ্কিত হয়ে আবাসিক বসবাসকারি, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ প্রাণ রক্ষায় দৌঁড়ে পালাতে থাকে। এসময় স্থানীয়রা ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করেন। ঘন্টাব্যাপী চেষ্টায় তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। আগুনে ছারছিনা এন্টারপ্রাইজের গুদাম ঘর, শো-রুম, ডিসটিনাশন টেকনোলজি এন্ড টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট, মা ড্রাইভিং এন্ড ট্রেনিং সেন্টার, দিনাজপুর প্রিন্টার্স এন্ড প্যাকেজিং, সরকার মটরস, একটি ভাংগারির দোকানসহ ৪টি আবাসিক কক্ষ ভস্মীভূত হয়। ফলধারী নারিকেল গাছসহ কয়েকটি বৃক্ষও ভস্মীভূত হতে দেখা গেছে।
ভাংগারি ব্যবসায়ী জাহিদ জানান, তার দোকানের মালামাল সব পুড়ে গেছে। তার ক্যাশে ৭ লাখ টাকাও ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডে ভস্মীভূত হয়েছে বলে কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি জানান। আগুনে পুড়ে যাওয়া কক্ষের ভাড়াটিয়ারা জানান, আগুনের ভয়াবহতার কারণে তারা প্রাণরক্ষায় কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান। তাদের সকল আসবাবপত্র, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ নগদ টাকা স্বর্ণালঙ্কারও পুড়ে গেছে। বর্তমানে তারা এক কাপড়ে রয়েছেন। কিছুই তারা রক্ষা করতে পারেননি। ছারছিনা এন্টারপ্রাইজের খলিলুর রহমান বলেন, কিভাবে আগুনের সূত্রপাত কিছুই বলতে পারেন না। তবে তার রক্ষিত বসুন্ধরা, যমুনা ও এলপিজিসহ কয়েকটি কোম্পানীর সিলিন্ডার গ্যাস ছিল। এরমধ্যে কয়েক শ’ সিলিন্ডার বিস্ফোরণসহ ভস্মীভূত হয়েছে।
স্থাপনার মালিক হৃদয়, রেহানা, ইদ্রিস, রেখা ও মোস্তফা। তাদের স্বজনরা জানান, ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডে তাদের ভাড়াটিয়াদের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ভৌত অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘটনায় তারা স্তম্ভিত ও বিস্মিত।
জানতে চাইলে, ডিইপিজেড দমকল বাহিনীর সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুল হামিদ বলেন, খবর পেয়ে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। ঘন্টাব্যাপী চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট অংশ নেয়। কিভাবে আগুন লেগেছে এবং কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। এ মূহুর্তে বলা মুশকিল বলেও তিনি জানান।
মহাসড়কের পাশে হওয়ায় লাখো জনতার ভিড়ে নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়কে তীব্র যানজট লক্ষ্য করা গেছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ওই সড়কে প্রায় ঘন্টাব্যাপী যান চলাচলও বন্ধ থাকে।
ধামরাইয়ে ৩ দিনে ৩ জন অপহৃত
ধামরাই প্রতিনিধি : ধামরাইয়ে শনিবার সন্ধ্যায় আশুলিয়া গ্রামের সোনা মিয়ার পাঁচ বছরের ছেলে মনির হোসেনকে অপহরন, সোমবার সকালে ডেমরান গ্রামের আরফান আলীর ছেলে মেহেদী হাসান ওরফে শিপন (১৮)কে অপহরণ ও একইদিন পশ্চিম বাইচাইল গ্রামের অটোভ্যান চালক নরু মিয়া (৫০) নিখোঁজ হন। এরমধ্যে মনির হোসেনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিপনের বাবা ৪০ হাজার টাকা দিলে অপরহণকারীরা শিপনকে ছেড়ে দেয়। তবে নুরু মিয়া এখনো নিখোঁজ রয়েছে। তিনটি ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। এরমধ্যে শিপনের হত্যাকারী তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
শিপনের বাবা আরফান আলী জানায়, শিপন ধামরাই থেকে আমতলা বাজার পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত অটোবাইক চালাতো। শিপনের অটোতে দুই-তিনদিন দুইজন অপরিচিত যাত্রী যাতায়াত করে। এসময় অপরিচিত দুইজন শিপনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে শিপনকে ভাল একটা চাকরি দিবে বলে লোভ দেখায়। চাকরির মধ্যে একটি কোম্পানীর সেলসম্যান হিসেবে প্রতিদিন সাড়ে তিনশত টাকা ও দুপুরের খাবার দিবে বলে প্রলোভন দেখায়। এতে শিপন তার মা-বাবার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। গত সোমবার শিপনকে সেই অপরিচিত যাত্রীরা চাকরি দেওয়ার কথা বলে মোবাইল ফোনে ডেকে নেন আশুলিয়ার নবীনগরে। এরপর তাকে কোম্পানীর মালিকের সঙ্গে দেখা করানোর কথা বলে নিয়ে যান ঢাকায়। এরপর তাকে একটি রুমে নিয়ে খেতে দেয়া হয়। খাবার খেয়ে অচেতন হয়ে পড়ে শিপন।
এদিকে অপহরণকারীরা শিপনের বাবার মোবাইল ফোনে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে দাবিকৃত টাকা না দিলে শিপনকে হত্যা করা হবে বলে জানায়। শিপনের বাবা বিস্তারিত উল্লেখ করে মঙ্গলবার বিকেলে আশুলিয়া থানায় জিডি করেন। আশুলিয়া থানা পুলিশ মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। কিন্তু শিপনকে উদ্ধার কিংবা অপরহণকারীদের আটক করতে পারেনি। এতে হতাশ হয়ে পড়ে শিপনের পরিবার। এদিকে শিপনের বাবার কাছে অব্যাহতভাবে টাকা দাবি করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের দেওয়া পাঁচটি বিকাশ নম্বরে দেনদরবার করে সর্বশেষ ৪০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেন শিপনের বাবা। এরপর গতকাল বুধবার সকালে শিপনকে মহাখালী থেকে একটি বাসে উঠিয়ে দেয়। শিপন সেই বাসে নবীনগর এসে নেমে বাড়ীতে পৌঁছ্য়া সকাল সাড়ে দশটারদিকে।
নিখোঁজ নুরু মিয়ার স্ত্রী পারভীন আক্তার জানায়,তার স্বামী অটোভ্যান চালক। সোমবার দুপুরে কে বা কারা ফোন করে বাড়ী থেকে ডেকে নেয় কালামপুর যাওয়ার উদ্দেশে। এসময় নুরু তার স্ত্রীকে বলে যায় কালামপুরে যাত্রী নিয়ে যাইতেছি। ওইদিন আর বাড়ী ফেরেনি নুরু। ওইদিন সন্ধ্যা সাতটারদিকে তার স্বামীর মোবাইল ফোনে কল করলে বন্ধ পাওয়া যায়। সম্ভাব্য সকল স্থানে খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি অটোভ্যানটিও পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যা করে অটোভ্যানটি নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার থানায় জিডি করেছে নুরু মিয়ার স্ত্রী পারভীন আক্তার।
শিশু মনিরের হত্যাকারীদের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তি
স্টাফ রিপোর্টার : গতকাল বুধবার শিশু মনিরের হত্যাকারী তিনজনকে আদালতে প্রেরণ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়ার জন্য। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধামরাই থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন জানান, মনিরের হত্যারকান্ডে জড়িত ছোট আশুলিয়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মূল পরিকল্পনাকারী মুদি দোকানী মাজেদুল ইসলাম (২২), একই গ্রামের মিশু মিয়ার ছেলে ইলেকট্রিশিয়ান রাব্বি (২৭) মিয়া ও জয়পুরা গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে রাজমিস্ত্রি (৪৪) কে আটক করে ধামরাই থানা পুুলিশ। তাদের গতকাল বুধবার স্বীকারোক্তি জবানবন্দী দেওয়ার জন্য জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের কাছে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তিনজনই স্বীকার করেছে তারা মনিরকে মাজেদুলের দোকানের সামনে মুখে স্কচ টেপ লাগানো হয়। এরপর মাজেদুলের দোকানের পিছনে নিয়ে তিনমিনিটের মধ্যে গলাটিপে হত্যা করা হয়। পরে মনিরকে বস্তাবন্দী করা হয়। এরপর গভীর অন্ধকার হলে বস্তাবন্দী অবস্থায় একটি বাঁশঝাড়ের মধ্যে রাখা হয় মনিরের লাশ। পরে রাব্বি মিয়ার বাড়ীর গোয়াল ঘরের পিছনে তিনজন মিলে গর্ত করে। ওই গর্তে রাত সাড়ে এগারটার দিকে বস্তাবন্দী অবস্থায় মনিরের লাশ ছাই দিয়ে চাপা দেওয়া হয়। পরদিন রবিবার সকালে তিনজনে মিলে মনিরের বাবার মোবাইল ফোনে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তারা টাকা পেয়ে মাজেদুল, রাব্বি ও মানসুর ধারদেনা পরিশোধ করবে বলে স্বীকারোক্তি জবানবন্দী দেয়। প্রায় দেড় মাস আগে অপহরণের পরিকল্পনা করে তারা তিনজন। এরমধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী মাজেদুল।
উল্লেখ্য, গত শনিবার সন্ধ্যায় মনির মাজেদুলের দোকানে মজা কিনতে নিয়ে যায় মনিরের বাবা সোনা মিয়া ওরফে কালা। মজা কিনে মনিরে হাতে দিয়ে কালা স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। নামাজ পড়ে বাড়ীফিরে জানতে পারে মনির বাড়িতে যায়নি। এরপর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি শুরু করে। না পেয়ে রবিবার সকালে অপহরণকারীদের মুক্তিপণ চাওয়া মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে থানায় জিডি করে মনিরের বাবা। উল্লেখিত মোবাইল নম্বর ট্যাগ করে অপহরণকারীদের আটক করে থানা পুলিশ।
আশুলিয়ায় গ্রেপ্তার ৭ নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি
আশুলিয়া প্রতিনিধি : নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের মাশফি পরিবহনের চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনায় ৭ ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ। বুধবার দুপুরে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আশুলিয়া থানা থেকে প্রিজন ভ্যানে করে গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদের ঢাকা আদালতে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আশুলিয়া গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা। এদিকে ঘটনার রাতেই হাসান নামে ডাকাত আটক করা হয়।
আটকৃতরা হলো-সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার কুসুমভাঙ্গা গ্রামের মো. আকরাম হোসেনর ছেলে মো. হাসান, নাটোর জেলার সিংড়া থানার খিরবতা গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে আব্দুল মোতালেব, কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার পানাহার গ্রামের রতন মিয়ার ছেলে উজ্জ্বল হোসেন, নওগাঁ জেলার মান্দা থানার পাটুববর গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে মিঠু, রাজশাহীর বাগমারা থানার শেখারিপাড়া গ্রামের মো. মামুন মিয়ার ছেলে পাপ্পু মিয়া, রংপুরের বীরগঞ্জ থানার ঝালবাড়ি গ্রামের হেলাল সরকারের ছেলে বাবু সরকার এবং সিরাজগঞ্জের রায়গহঞ্জ থানার পূর্ব পাইকড়া গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। তাদের সবাই গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় বসবাস করতো।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার এস আই বিলায়েত হোসনে জানান, গত সোমবার রাতে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে কুড়িগ্রামবাহী মাশফি পরিবহনের চালককে জিম্মি করে যাত্রী বেশে চলন্ত বাসে ডাকাতরা সব লুটে নেয়। এ সময় যাত্রীদের ডাকা চিৎকারে স্থানীয় জনতা ও পুলিশ তাদের আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় বাসটি আটক করে। ঘটনাস্থল থেকে হাসান নামে এক ডাকাতকে আটক করা হয়। বাকীরা পালিয়ে যায়। আটক ডাকাত হাসানের তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বাকীদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে রাজধানীর গাবতলী থেকে মাশফি পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-০৪৯০) একটি দূর পাল্লার বাস কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে রওনা হয়। পরে আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে যাত্রী বেশে ডাকাত উঠে বাসে। পরে পিস্তল দিয়ে চালককে জিম্মি করে যাত্রীদের হাত পা বেঁধে মারধর করে। মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। পরে বাসটি গাজীপুরের চন্দ্রা মোড় থেকে ইউটার্ণ করে রাত ১১ টার সময় আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎতে পৌঁছালে যাত্রীদের ডাকা চিৎকারে বাসটি আটক করা হয়। এসময় কয়েকজন ডাকাত বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে যায়।
বিক্ষোভ করায় ৫ হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক ছাঁটাই : আল-জাজিরা
ফুলকি ডেস্ক : চলতি মাসের শুরুতে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকারখানার অন্তত পাঁচ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ছাঁটাই করেছে। এ তথ্য দিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ডের জন্য কাপড় তৈরি করা শ্রমিকরা মজুরি বাড়াতে বিক্ষোভ করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের চক্ষুশূলে পরিণত হন। এর পরিণতি হিসেবে তাদের চাকরি খোয়াতে হয়েছে।
নতুন বছরের শুরুতেই দেশজুড়ে হাজার হাজার শ্রমিক দিনব্যাপী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে কাজ ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। এতে বাংলাদেশের ৩০০ কোটি ডলারের পোশাক কারখানার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। ঢাকার বাইরে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক শ্রমিক নিহত ও আরও অর্ধশত আহত হয়েছেন। বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা এইচ অ্যান্ড এম, ওয়ালমার্টসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জন্য আশুলিয়ায় পোশাক সেলাই করা হয়।
পুলিশ বলছে, বিক্ষোভের সময় লুটপাট ও ভাঙচুরে জড়িত তৈরি পোশাকশিল্পের কয়েক হাজার শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এ ছাড়া কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শন ও ধরপাকড়ের অভিযোগ আনছে ইউনিয়নগুলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, এ পর্যন্ত চার হাজার ৮৯৯ শ্রমিককে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অভিযোগে ছাঁটাই করা হয়েছে। কেবল একটি কারখানা থেকেই এক হাজার ২০০ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছেন, যাদের বেতন মাত্র ৯৫ ডলার থেকে শুরু। ইউনিয়নগুলো বলছে, ছাঁটাইয়ের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হবে, যা প্রায় সাত হাজারের কাছাকাছি। বিক্ষোভে জড়ো হওয়ায় প্রায় শতাধিক শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ব্যাপকভিত্তিক গ্রেফতার নিয়ে পুলিশের তরফে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব সালাউদ্দিন শিফন বলেন, বহু শ্রমিক কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তিন হাজার অজ্ঞাত শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এতে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই ভয়ে কাজে যোগ না দেয়াকেই পছন্দ হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারা। ধর্মঘট ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও সরকার সামান্য মজুরি বাড়াতে রাজি হওয়ার পর তার অবসান ঘটে। সরকারি ঘোষণায় কোনো কোনো শ্রমিকের জন্য মাসে মাত্র কয়েক সেন্ট মজুরি বেড়েছে। আমসটারডামভিত্তিক ক্লিন ক্লোথস ক্যাম্পেইনের বেন ভ্যানপেপারসট্রি এইট বলেন, সম্প্রতি শ্রমিকদের মজুরি কাঠামোয় সংশোধনের পরও পরিস্থিতি আগের মতোই রয়ে গেছে। কারণ এসব শ্রমিকের মজুরি এখনও দরিদ্রসীমার মধ্যেই।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের ভীতিপ্রদর্শন ও তাদের সংগঠিত হওয়ার পথ রুদ্ধ করতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাংলাদেশের সাড়ে চার হাজার তৈরি পোশাক কারখানায় ৪১ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যা বিশ্বে চীনের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তর পোশাক রফতানিকারক। বলতে গেলে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের আশি ভাগ আসে বিদেশে পোশাক বিক্রি করে। এ ছাড়া এসব কারখানা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্ষমতা রাখে। ঢাকায় শ্রমিক ধর্মঘটের রেশ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেটের বাইরে বিক্ষোভ হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর শুরু হয় এ বিক্ষোভ।
গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী আল-জাজিরা টেলিভিশনকে বলেন, ২০০৮ সালে যখন আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন গার্মেন্ট শ্রমিকদের গড় মজুরি ছিল ১৬০০ টাকা। কিন্তু এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট হাজার টাকায়। যদিও এটি কম তা আমি স্বীকার করি। তিনি বলেন, শ্রমিকদের বেতন আরও বেশি হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। কিন্তু আমাদের সরকারের আমলে পাঁচগুণ মজুরি বৃদ্ধি প্রশংসনীয়। শুধু সরকারকে দোষারোপ করা উচিত হবে না।