দিপক সূত্রধর, মহসীন মোহাম্মদ মাতৃক:
মানিকগঞ্জ জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে ছাত্রছাত্রীদের হোস্টেলে থাকার সুবিধা থাকলেও বেশ কয়েক বছর যাবত ছাত্ররা হোস্টেল সুবিধা থেকে বঞ্চিত।এতে দূরবর্তী ছাত্রদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
বৃহস্পতিবার(১৮ মে)সকালে কলেজের হোস্টেলে গিয়ে দেখা যায় ছাত্রীদের জন্য শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল এবং শেখ হাসিনা হল থাকলেও ছাত্রদের মঞ্জুরুল আলম ও আলীমুল হক হলটি এখন ঝোড়-জঙ্গলের কবলে এবং গেইটে ঝুলছে তালা।
প্রায় ৫ বছর বন্ধ থাকলেও এখন পর্যন্ত চালু হয়নি হল দুইটি। জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হওয়াতে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা গুলোতেও কলেজটির বেশ সুনাম রয়েছে। তাই মানিকগঞ্জ জেলাসহ অন্যান্য জেলার শিক্ষার্থীরা এখানে পড়ালেখা করার জন্য আসে।তবে এদের মধ্যে অনেক দূর-দূরান্তের ছাত্র আছে যারা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাদের পক্ষে বাসা ভাড়া কিংবা মেসে থেকে পড়ালেখার খরচ চালানো সম্ভব নয়। ফলে পড়ালেখা করতে হিমসিমে পড়তে হচ্ছে মেধাবী ছাত্র ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের।
এসময় একাদশ শ্রেণির ছাত্র মোঃ আতিক বলেন, আমার বাসা সিরাজগঞ্জ,এইখানে আমার মেসে থাকতে প্রতি মাসে ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়।এতে করে আমার পড়ালেখার খরচ চালাতে পরিবারের পক্ষে কষ্ট হয়ে যায়। গণিত বিভাগের মোঃ সৈকত হোসেন জানান, বাড়ি দৌলতপুরের খলসিতে, সেখান থেকে ক্লাসে উপস্থিত হতে প্রায় দিনই দেড়ি হয়ে যায় যার ফলে প্রথম ক্লাস গুলোতে থাকতে পারি না। এতে করে আমার পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে। সময় সাংবাদিকদের কাছে অন্যান্য ছাত্ররা কলেজ হোস্টেল চালু করার ব্যাপারে জোড় দাবি জানান।
এ বিষয়ে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি অসুস্থতার কারণে মুঠোফোনে বলেন, আমরা বহুবার হোস্টেল চালু করার জন্য প্রিন্সিপাল স্যারকে বলেছি। এই বিষয়ে গত বছর আমরা জেলা ছাত্রলীগকে সাথে নিয়ে বলেছিলাম তখন স্যার আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন খুব দ্রুত সময়ে এর পদক্ষেপ নিবেন। কিন্ত আমারা এখন পর্যন্ত কোন ফলাফল পাইনি।
বিষয়টি নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মানিকগঞ্জের একটি প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। প্রায় ২৬ একর জমির উপর ২৫ হাজার শিক্ষার্থীদের পদচারনায় কলেজটি সবসময় মুখরিত থাকে। কলেজটিতে ২টি ছাত্র হোস্টেল এবং ২টি ছাত্রী হোস্টেল রয়েছে। ছাত্রদের ২টি হোস্টেল অনেক আগে প্রতিষ্ঠিত হবার কারনে খুব জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। আমার পূর্বে যিনি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি চেষ্টা করেছেন এটি সংস্করণ করার জন্য। এই সংস্করণের একটি পর্যায়ে কোভিড শুরু হয় এবং কোভিড এর কারণে নানা ভাবে কাজ ব্যাহত হয়। এরপর আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে হোস্টেল ২টি সেই সংস্করণের কাজ হাত দেওয়া হয় এবং সেখানে অনেক গুলো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্ত ফার্নিচারের অভাবে এবং আরো বেশ কিছু মেরামতের কারণে হোস্টেলটি এখন পর্যন্ত চালু করা যায় নাই।
তিনি বলেন, আমি মনে করি ছাত্রদের সুবিধার জন্য প্রত্যন্ত এলাকা হতে যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা এখানে পড়ালেখা করতে আসে তাদের কথা বিবেচনা করে হোস্টেলটি সম্পূর্ণ ভাবে চালু করা এটা সময়ের দাবি। এটি চালু করার বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশলীর সাথে আলোচনা করেছি। শিক্ষা প্রকৌশলীর গত বছর এটি বাস্তবায়ন করার কথা। কিন্ত ইতিমধ্যেই সরকারের একটি আদেশের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সেই পরবর্তি আলোকে সংস্করণের বাকি যে কাজটুকু সেটি করা সম্ভব হয়নি। যদি এই কাজটুকু সম্পূর্ণ হতো তাহলে হোস্টেল পরিপূর্ণ ভাবে চালু করে ছাত্রদের আবাসিক ব্যবস্থাকে পুনরায় আবার সে সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো।
তিনি আরও বলেন, আমি আশা করবো বর্তমান ২০২৩ সাল ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ এবং পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি সহ নানা বৈশ্বিক একটি অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে যাচ্ছে, যার প্রভাব আমাদের বাংলাদেশে পরেছে। আশা করছি এই পরিস্থিতি অবলম্বে ঘুরে দাঁড়াবে।
অধ্যক্ষ বলেন, শুধু মাত্র শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা নয় আরও কিছু সমস্যা সেগুলোসহ একবিংশ শতাব্দীতে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর যে মানব সম্পদ উন্নয়নের কাজ আমরা হাতে নিয়েছি। অদূর ভবিষ্যতে শিক্ষা ক্ষেত্রে দেবেন্দ্র কলেজ একটি অনন্য উচ্চতায় অবদান রাখবে সেই প্রত্যাশা করি।