জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ২০০৭ সালের এই দিনে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্দেশে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের পায়ে শেকল পরানো হয়েছিলো। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি যে, মুক্ত শেখ হাসিনার চেয়ে বন্দি শেখ হাসিনা কম শক্তিশালী ছিলেন না।
রোববার (১৬ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে ‘২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনার কারাবন্দী দিবস’ উপলক্ষে তিনি এ কথা বলেন।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি-দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং সেই দুর্নীতির সাথে যুক্ত হওয়া এক-এগারো পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার জননেত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠ ও গণতন্ত্রের পথ চলাকে স্তব্ধ করার জন্য সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার বাসভবন সুধাসদন তছনছ এবং তার প্রয়াত স্বামী এবং বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আণবিক শক্তি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার পর হাজারো মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আদালত চত্বরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যার মুক্তি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সে কারণে তারা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ১১ মাস পরে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। প্রকৃতপক্ষে আমাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বেগম খালেদা জিয়াও মুক্তি লাভ করেছিলো।
‘বাংলাদেশের মানুষ আর কখনো সেই ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না, কিন্তু ইদানীং এক-এগারোর কুশীলবরা আবার সক্রিয় হয়েছে’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, তারা নানা জায়গায় গোপনে-প্রকাশ্যে বৈঠক করছে, বিভিন্ন দূতাবাসে ধর্নাও দিচ্ছে, নানা ধরনের প্রেসক্রিপশনও দেওয়া শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আর কখনো 8 ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠা করা সুযোগ কাউকে দেবে না। আমাদের সার্বভৌম রাষ্ট্র চলবে আমাদের সংবিধান অনুযায়ী, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী।
সাংবাদিকরা শনিবার এফবিসিসিআইয়ের সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা পুনরায় শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় বলেছে, এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা জানে এবং বোঝে যে সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে দেশে শান্তি এবং স্থিতি বজায় থাকবে, দেশ আরও এগিয়ে যাবে। সেটি অনুধাবন করেই শীর্ষ ব্যবসায়ীরা এক বাক্যে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান বলেছেন, সভা শেষে সবাই দাঁড়িয়ে পতাকা নাড়িয়ে সেই ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এর কারণ হিসেবে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, গত সাড়ে ১৪ বছরে দেশ বদলে গেছে। আমাদের জিডিপি একশ’ বিলিয়ন থেকে দশ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে এখন এক হাজার বিলিয়ন ডলার। বাজেটের আকার সাড়ে ১১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাথাপিছু আয় বিএনপির আমলের ৫শ’ ৪০ ডলার থেকে এখন সাড়ে ২৮শ’ ডলারে উন্নীত হয়েছে। জিডিপির আকারে আমরা ৩৫তম অর্থনীতির দেশ আর পিপিতে ৩১তম। সাড়ে ১৪ বছরে আমাদের জিডিপি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশকেও ছাড়িয়েছে। এগুলো মির্জা ফখরুল সাহেবরা দেখেও না দেখার ভান করেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তো প্রকৃত চিত্রটা জানেন।
আওয়ামী লীগ কি বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে – এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী হাছান বলেন, বিএনপির যেমন রাজনৈতিক কর্মসূচির অধিকার আছে আমাদেরও আছে। কয়েকদিন আগে বিএনপি সমাবেশ করেছে আমরাও করেছি, কই ঢাকা শহরে তো কোনও সমস্যা হয়নি। বিএনপি কর্মসূচি দিলে সরকারি দল হিসেবে আমাদের বাড়তি দায়িত্ব থাকে যাতে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা-স্থিতি বজায় থাকে, আগুনসন্ত্রাসীরা মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে না পারে। রাজনৈতিক কর্মসূচির ব্যানারে যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায় সে ক্ষেত্রে জনগণের সাথে থাকা আমাদের দায়িত্ব। সে জন্যই আওয়ামী লীগ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
বিএনপি মহাসচিব মানুষকে কাজ ছেড়ে রাস্তায় নামতে বলেছেন – এ প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেবকে বলবো আগে তাদের কর্মীদের মাঠে নামানোর ব্যবস্থা করার জন্য। তাদের কর্মীরাই তো মাঠে নামে না। বহু আগে থেকে তারা জনগণকে এসব বলছে, কিন্তু জনগণের কী ঠেকা পড়েছে যে বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য ঠিক করার জন্য কিংবা তারেক জিয়াকে হাওয়া ভবনে ফিরিয়ে আনার জন্য রাস্তায় নামবে! জনগণের সেই ঠেকা পড়ে নাই, এটা মির্জা ফখরুল সাহেব বুঝেন কিনা আমি জানি না।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এবং দৈনিক সংবাদের সাংবাদিক ও কার্টুনিস্ট এম এ কুদ্দুসের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
শনিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এম এ কুদ্দুসের অকস্মাৎ ইন্তেকালের সংবাদে শোকাহত তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রয়াতের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। ড. হাছান তার শোকবার্তায় বলেন, এম এ কুদ্দুসের মতো সাংবাদিক ও সংগঠক আরও বেঁচে থাকলে সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারতেন। তার এ অকাল মৃত্যু গণমাধ্যমের বেদনাবিধুর বিয়োগান্তক ঘটনা।