জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
আওয়ামী লীগ সরকার পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ইউরোপ, এশিয়া, আমেরিকাসহ প্রত্যেক দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে তারা ঘুরে এসেছে, আশানুরূপ কিছু পেয়েছে বলে মনে হয় না। এ কারণেই এখন তারা বিএনপির মহিলা নেত্রীদের নিয়ে খারাপ মন্তব্য করছে।
রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নারী নেত্রীদের নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কুরুচিপূর্ণ ও বিতর্কিত বক্তব্যের প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, দেশটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে-মা বোন স্ত্রী কন্যাদের নিয়ে বসবাস করার মত আর সেই দেশ নেই। এই দেশে যারা মন্ত্রী বলে দাবি করে, তারা লাগামহীন। তারা জানে তাদের ভোট করতে হবে না। সুষ্ঠু ভোটের দরকার নেই। জনগণের কাছে যেতে হবে না। তাই যা ইচ্ছা তাই তারা করছে, যা ইচ্ছা তাই বলছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে, চৌধুরী আলমকে গুম করেছে, হুমায়ুন পারভেজ, সুমন, জাকিরকে গুম করেছে। গুম করতে করতে ওরা এখন নারী সমাজের ইজ্জতকে গুম করা শুরু করেছে। আজ নারী সমাজ বাংলাদেশে নিরাপদ নয়।
তথ্যমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, হাছান মাহমুদ প্রতিনিয়ত মিথ্যা কথা বলেন। তারপরও ভেবেছি নামের আগে ডক্টরেট লেখা আছে তাই নারীদের নিয়ে অশ্লীল কথা বলবেন না। কিন্তু না যাদের সংস্কৃতি কালচারাল ইতিহাস ঐতিহ্য নারীকে অপমান করার তাদের যে নেতাই হোক না কেন, আর যতই ডক্টরেট ডিগ্রি থাকুক না কেন- তারা ওই একই সংস্কৃতির। আওয়ামী লীগ খারাপ সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক, এই জন্য তারা যা ইচ্ছা তাই করছে, যা ইচ্ছা তাই বলছে।
তিনি আরও বলেন, আপনি হাছান মাহমুদ চরিত্রহননের কথা যে বলতে পারেন এটাই স্বাভাবিক। আপনার দলের সংস্কৃতি তো তাই। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীকে যখন হত্যা করা হলো তখন সাংবাদিকরা যখন সোচ্চার, রাজনৈতিক দলগুলো যখন সোচ্চার, নাগরিকরা যখন সোচ্চার, তখন প্রধানমন্ত্রী রেগে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি কি তাদের বেডরুমে পাহারা দেব’। এই অশ্লীলতা আপনার একার নয় আপনার মন্ত্রী নেতাকর্মী সবারই একই রুচি। এর চেয়ে অন্য কিছু আপনাদের কাছে আশা করা যায় না।
রিজভী বলেন, হাছান মাহমুদকে নিয়ে আমাদের মহিলা দলের নেত্রীরা অনেক মন্তব্য করলেও অশ্লীল মন্তব্য কেউ কখনো করেনি। কিন্তু আপনার দলের সিনিয়র একজন নেত্রী সাজেদা চৌধুরী আপনাকে কী বলেছিলেন, সেটা কি আপনার মনে আছে? সুতরাং আপনার কাছ থেকে সভ্যতা, ভব্যতা এসব জনগণ আশা করতে পারে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনাদের অনেক সভা সমাবেশ থেকে নেতাকর্মীদের অশ্লীল বক্তব্য শুনেছি। আপনারা কাউকে পরোয়া করেন না। কারণ আপনারা মনে করেন, রাষ্ট্র আপনাদের ক্ষমতা, তাই আপনারা যা বলবেন, যা করবেন- জনগণ বিশ্বাস করবে, মেনে নেবে। আর জনগণ বিশ্বাস না করলেও কিছু যায় আসে না। আপনারা কাউকে পরোয়া করেন না কিসের বিরোধী দল, কিসের বিএনপি, কিসের মহিলা দল, মহিলা নেত্রী, যা ইচ্ছা তাই করব- এই ধরনের অহংকার আপনাদের পেয়ে বসেছে। সুতরাং যাদের অহংকার হয় তাদের পতন অত্যন্ত তাড়াতাড়ি হয়। যেকোনো মুহূর্তে আমরা আপনাদের পতনের আওয়াজ শুনতে পাবো।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, কোন মামলা করতে চাইলে থানায় অথবা কোর্ট যেতে হয়। কিন্তু কয়েকদিন আগে দেখলাম গাড়ি বহর নিয়ে অভিযোগ দিতে গেল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বললেন, এটা দিতেই পারে আমাদের কাছে। পরে দেখলাম মানহানি মামলা। এখন আমি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে বলতে চাই-এত বড় মানহানিকর অশ্লীল বক্তব্য দিয়েছে হাছান মাহমুদ মহিলা দলের নেত্রীদেরকে নিয়ে; এখন দেখি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মহিলা নেত্রীদের আহ্বান করে বলেন কি না, আসেন মানহানি মামলা করার পরামর্শ দেই। দেখি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ হাছান মাহমুদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করার সাহস রাখেন কি না।
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কুরুচিপূর্ণ ও বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে একটি ঝাড়ু মিছিল পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিংগেল মোড় ঘুরে ফের নয়াপল্টনের সামনে এসে মন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করে শেষ করা হয়।