এস এম আকরাম হোসেন:
মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও শিবালয় উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম খানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে প্রায় ১০ কোটি টাকার জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে অবৈধভাবে ভূমি দখল করে কবজা করাই নেশা এই নেতার।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর অবৈধভাবে জোরপূর্বক জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ করেছেন জমির প্রকৃত মালিক বাবুল আক্তারসহ আটজন ভুক্তভোগী। পরিবার পরিজন নিয়ে আতঙ্কে দিনযাপন করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর শতাধিক সন্ত্রাসী মহড়া দিয়ে শিবালয় উপজেলার টেপড়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ১১৮ শতাংশ জমি বায়না সূত্রে মালিক উল্লেখ করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে টিনের বেড়া দিয়ে দখলে নেওয়ার পায়তারা করে রহিম খান। রহিম খান শিবালয় থানার দাশকান্দী এলাকার কফিল উদ্দিন খানের ছেলে।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিবালয় উপজেলার টেপড়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন দশচিড়া মৌজায় ১১৮ শতাংশ ভূমি নিয়ে আদালতে ১৯৯০ সালে দেওয়ানী মামলা হলে ১৯৯৫ সালে মামলার রায় প্রকাশ হয়। রায়ের পর প্রকৃত মালিকদের জমি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আদালত একটি কমিশন গঠন করে। বিগত ২০০৫ সালের ৯ আগস্ট কমিশন সরকারি প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দেয় । পরে ভূমি ক্রয় সূত্রে এবং পৈত্রিক সূত্রে মালিক বাবুল আক্তারসহ ৮ জন নিজ নামে নামজারি ও জমাভাগ করে খাজনাদি পরিশোধ করে ভোগ দখল করে ।
কিন্তু হঠাৎই ঢাকা জেলার সাভারের ডগরমোড়া এলাকার কালু সিকদারের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তি ক্রয় সূত্রে মালিক দাবি করে ২০২১ সালে শিবালয় থানা সহকারী জজ আদালতে একটি দেওয়ানি বণ্টননামা মামলা করে। পরে চলতি বছরের ৩০ জুলাই মামলায় তার পক্ষে রায় প্রকাশ হয়। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে ভুক্তভোগীরা দেওয়ানি আপিল মামলা করেন। যা চলমান আছে। আদালতে মামলা চলমান থাকাবস্থায় আব্দুর রাজ্জাকের কাছ থেকে আব্দুর রহিম খান একটি আন রেজিস্টার বায়না করে।
পরে রহিম খানের নির্দেশে তার ভাতিজা দেলোয়ার হোসেন খান, হৃদয়, রাতুল, রাজ্জাক শিকদার, মোশারফ হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, রশিদ সানাইদার, রেহেনা বেগম, আকাশ, সুরিয়া, শিল্পী, সেলিনা, জুবায়েরসহ প্রায় শতাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর জোরপূর্বক ভূমি দখল করতে আসে।
পরে ভূমির মালিকরা নিষেধ করলে তারা ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ভুক্তভোগীরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ভুক্তভোগীদের বেধড়ক মারপিট করে জখম করে এবং নানা প্রকার হুমকি ধমকি দিয়ে তারা চলে যায়। পরে ভুক্তভোগীরা আদালতে ফৌজদারি মামলা ও ন্যায় বিচারের দাবিতে পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
আদালতে দেওয়ানী আপিল মামলা চলমান অবস্থায় মালিকানা দাবি করে সাইনবোর্ড টানিয়ে জমি দখল করতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জজ কোর্টের একাধিক আইনজীবী এমন কর্মকাণ্ডকে আইনপরিপন্থি বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে আব্দুর রহিম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক শিকদার বলেন, আদালত থেকে রায় পাওয়ার পর ওই জমি বিক্রির জন্য রহিম খানের কাছে বায়না করা হয়েছে। তারপর এই জমিতে বেড়া ও সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম বলেন, ইতোপূর্বেও রহিম খানের বিরুদ্ধে এলাকার জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। তার এ সকল কর্মকাণ্ডের দায়ভার তাকেই নিতে হবে। আওয়ামী লীগ জনগণের কাজ করে। তার দায়ভার দল নেবে না।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, জমি দখলের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।