স্টাফ রিপোর্টার:
চাবি ও কাগজপত্র কেড়ে নেওয়ার পর মানিকগঞ্জের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে শুভযাত্রা পরিবহনের বাসগুলো রোডে চলাচল করতে পারেনি।এতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাসের মালিক ও ড্রাইভাররা।
ঢাকায় সোমবার বিএনপির সমাবেশে অংশ নিতে নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের জন্য ভাড়া দেওয়ায় মানিকগঞ্জের প্রায় ১৫টি বাসের কাগজপত্র ও চাবি জব্দ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত জেলা পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের নির্দেশে এসব বাসের চাবি জব্দ করা হয় বলে অভিযোগ মালিক ও ড্রাইভারদের।
গতকাল রাতে এবং আজ মঙ্গলবার সকালে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শুভযাত্রা পরিবহনের এসব বাসের কাগজ ও চাবি জব্দ করা হয়। আজ দুপুরে ওই পরিবহনের বাসের বেশ কয়েকজন চালক, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে। তাঁরা বলছেন, কারা কোন দল করেন, তা তাঁদের দেখার বিষয় নয়। গাড়ির চাকা না চললে তাঁদের সংসার চলে না।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পদত্যাগের এক দফা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়। রাজধানীর নয়াপল্টনে গতকাল এ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দল। ওই সমাবেশে মানিকগঞ্জ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন পরিবহনের ৩০ থেকে ৩৫টি বাস ভাড়া করে জেলা বিএনপি। এর মধ্যে শুভযাত্রা পরিবহনের প্রায় ১৫টি বাস ভাড়া করা হয়।
আজ দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ১০ থেকে ১২টি শুভযাত্রা পরিবহনের বাস দাঁড়িয়ে আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চালক ও মালিকপক্ষের কয়েকজন অভিযোগ করেন, বিএনপির কর্মসূচিতে দলটির জেলার নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের জন্য বাস ভাড়া দেওয়ায় গাড়ির চাবি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোর করে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি ও মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলামের নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা এসব করেছেন। বিষয়টি কাউকে না জানাতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও আছে তাঁদের বিরুদ্ধে।
শাকিল নামের এক চালক বলেন, গতকাল ওই কর্মসূচি থেকে রাত ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসার পর বাসের চাবি ছিনিয়ে নেন জাহিদুল ইসলামের লোকজন। আজ সকালে তাঁরা পুলিশের নাম করে গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে যান।
শুভযাত্রা পরিবহনের একটি বাসের মালিক কাইয়ুম হোসেন বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচিতে গাড়ি ভাড়া দেওয়া যাবে না, এ বিষয়ে আমাদের আগে তো বলা হয়নি। তা ছাড়া আমরা সাধারণ মালিক। বাসের চাকা চললে আমাদের জীবনের চাকা চলে। আমরা তো কোনো দল করি না।’
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় মনে হচ্ছে, আমরা বর্বর যুগে ফিরে যাচ্ছি। এ ধরনের ঘটনা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা নয়। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
অভিযোগের বিষয়ে মানিকগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। ঢাকায় থেকে মানিকগঞ্জ ফিরে বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখব।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ সরকার বলেন, ‘বাসের চাবি ও কাগজপত্র নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’