স্টাফ রিপোর্টার :
কাজের সন্ধানের সারা ন্যায় বছরের বর্তমানেও দেশের উত্তরাঞ্চল সহ বিভিন্ন জেলা হতে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে স্থানীয় ভাবে “কামলার হাট ” বা মানুষের হাট নামে পরিচিত স্থানে অবস্থান করছেন কয়েক শত দিনমজুর শ্রমিক। কত কয়েক দিনে প্রচন্ড শীতে কর্মহীন এই মানুষ গুলোর উপর নেমে এসেছে মড়ার উপর খড়ার ঘা।এক দিকে তাদের কোন কাজ না থাকাতে খাবার অর্থ নেই,থাকার জায়গা নেই,বাথরুম বা পানি খাবারের ও কোন উপায় নেই। আর না আছে পর্যান্ত গরম কাপড়।কেউ কেউ সারা দিন কিছুই না খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন।রাতে স্থানীয় বাসটার্মিনালে,ওভার ব্রীজের উপর (স্টিলের ব্রীজ ),স্থানীয় নূরুল হোসেন ল”কলেজের বারন্দা সহ বিভিন্ন স্থানে খোলা জায়গায় এই শীতে(শৈত প্রবাহ কালিন সময়ে)ছেড়া কাথা,সামান্য কাপড় আবার কারো কারো ভাগ্যে জোটা একটা পাতলা কম্বলই এই হাড়কাপানো শীতের রাত পার করার একমাত্র সম্বল।
রাজশাহী,রংপুর,গাইবান্ধা,চাপাই,নবাবগঞ্জ,বগুড়া,নাটোর,দিনাজপুর,ঠাকুরগা,পাবনা,সিরাজগঞ্জ সহ অনেক জেলার মানুষ কৃষি শ্রমিক,রাজমিস্ত্রির জোগালদার,রাস্তা নির্মান শ্রমিক সহ যে কাজ পায় তাই করে তারা।এখনো প্রায় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ৪০০ শতাধিক শ্রমিক অবস্থান করছে।
বছরের অন্য সময়গুলোতে একদিন অপেক্ষা করলেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত হতে গেরাস্ত (জমির মালিক),ঠিকাদার সহ বিভিন্ন মানুষ তাদের চাহিদামত শ্রমিক দাম মিটিয়ে এখান হতে নিয়ে কাজে লাগায়।কিন্তু গত এক সপ্তাহে এখানকার পরিস্থিতি সম্পূর্ন ভিন্ন আর এ ধরনে অভিঞ্জতাও এদের নতুন।অনেকেই এসেছেন ২০/২৫ দিন পূর্বে তখন তেমন একটা শীত ও ছিলো না।তাই সামান্য শীতবস্ত্র নিয়ে এসেছে।আবার যারা ৭/৮ দিন পূর্বে এসেছে তাদের নিকটও তেমন শীত বস্ত্র নেই।মূলত যারা এদের কাজে নিয়োগ করে তারাই এদের থাকা,খাওয়া ও অনেক সময় প্রয়োজনমত শীতবস্ত্রও দিয়ে থাকে।বর্তমানে মানিকগঞ্জ জেলায় ধান লাগানো শুরু হয়নি,সরিষাও পাকা শুরু হয়নি,শীতের কারনে অন্যান্য কাজও মানুষ বন্ধ রেখেছে।
কাজের সন্ধানে আসা কর্মহীন এই মানুষগুলি প্রচন্ড শীতে,খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থানহীন অবস্থায় সত্যই অমানবিক জীবন কাটাচ্ছে।অনেকেই শীতে সারা রাত নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।অর্থে অভাবে অনেকেই নিজ এলাকায় ফিরেও যেতে পারছে না।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার গুটিয়া মহিষমারি গ্রামের ৬৫ বছরের বৃদ্ধ আঃ খালেক বলেন,ছেলেরা ভাত দেয় না।এলাকায় কোন কাজ নেই।পেটের তাড়নায় কাজের জন্যে ৮দিন আগে এখানে এসেছি।এসেই প্রথম ২দিন কাজ করেছি।এবং তারপর ঠান্ডা বাড়ার সাথে সাথে গেরাস্ত বলেছে এখন আর কাজ করাবে না।গত ৬দিনে দিনে এশবার করে খেয়ে আছি ।গতকাল থেকে আমার কাছে আর কোন টাকা নেই। আজ ১১টা বাজে কিছুই খাই নাই।একই জেলার মানিকদীঘি গ্রামের মোঃ ইদ্রিস বলেন,১৬দিন আগে এসে মাত্র ২দিন কাজ করেছি। ১৪দিন যাবত বসা।পেটে খাবার নেই ,কাউকে বলতেও পারছি না আর টাকার অভাবে গ্রামেও ফিরে যেতে পারছি না।
সিরাজগঞ্জের সলাঙ্গার পুরান বেড়া গ্রামের আঃ মালেক বলেন,৫দিন আগে এসে ২দিন কাজ করেছি।যা পেয়েছি ৩দিন খেয়ে শেষ এখন না খেয়েই আছি।নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার রিয়াঘাট গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে মোঃ হোসাইন বলেন,পেটের ক্ষুধায় কাছে থাকা শেষ সম্বল মোবাইলটাও মাত্র ২০০ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি।
বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার পূর্ব ভরনশাহী গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন গায়ে থাকা একটি মোটা গেঞ্জি মাত্র ৩০ টাকায় বিক্রি করে দিয়ে সকালে ২টি রুটি কিনে খেয়েছেন।টাংগাইল জেলার নাগরপুরের মোঃ সোহেল হোসেন বলেন,আগে আমরা খেয়ে ৪০০ টাকা রোজ কাজ করেছি কিন্তু এখন ৩০০টাকা তো দূরে থাক,আমাদের কেউ কাজেই নিচ্ছে না ।এভাবে অনেক শ্রমিক বলেন,আমাদের এখন শুধু পেটের খাবার দিয়ে কেউ যদি সাহায্য করতো তাতেই আমরা খুশি।
সার্বিক বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক,মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র,সমাজসেবা কর্মকর্তা সহ অনেকের সাথেই যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয় নাই।তারা কেউ ফোন ধরেননি।সর্বশেষ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে,তিনি তাৎক্ষনিক ভাবে সোমবার সকালে আটকে পড়া শ্রমিকদের রান্না করা খাবার দেয়া হবে বলে জানান ।পরে সোমবার ১১টার দিকে তিনি প্রায় ২০০ শতাধিক শ্রমিকদের মাঝে খাবার বিতরন করেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন,যে কয় দিন তারা এই বিপদজনক অবস্থায় থাকবে,সে কয়দিন তাদের নূন্যতম খাবার সাহায্য দেয়া হবে।তাদের থাকার ও বাথরুমেরও কি ব্যবস্থা করা যায় তাও চেষ্ঠা করা হবে।এ সময় তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তের জেলা প্রতিনিধির এ ধরনের একটি মানবিক বিষয় তাকে জানানোর জন্যে নয়াদিগন্ত সহ উপস্থিত সকল সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান।তিনি বলেন,বিষয়টি সর্ম্পকে আমরা অবগত ছিলাম না ,এখন জানতে পেরেছি কিছু একটা করার অবশ্যই চেষ্ঠা করবো।ফিফ রেস্টুরেন্ট এর পক্ষ হতে বিনা পারিশ্রমিকে খাবার গুলো রান্না করে দেয়া হয়। ঢাকার বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী বিশ্বাস মোহাম্মদ ফজলুল করীম এ কাজে সহযোগীতা করেন।
এ বিষয়ে সোমবার জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতারের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন,গত বৃহসপতিবার আমরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছিন্নমূল মানুষের মাঝে কম্বল বিতরন করেছি।তখন তো আমাদের কেউ খাবার কষ্ঠের কথা বলেনি।কারো প্রয়োজন হলে তিনি আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।এসব মানুষের কি আপনার নিকট যাওয়া সম্ভব ? তখন তিনি বলেন,বিষয়টি নিয়ে আমরা খোজ-খবর নিচ্ছি এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন,বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক ও মেটলাইফে ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার মোঃ শাহানুর ইসলাম, অ্যাডভোকেট শাহনেওয়াজ মহীউদ্দীন শোভন,পৌর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ শামীম পাঠান, মেটলাইফের ইউনিট ম্যানেজার ও ফিফ রেস্টুরেন্টের মালিক মোঃ রমজান আলী,প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি গাজী ওয়াজেদ আমল লাবলু,সম্পাদক পরিষদের সাধারন সম্পাদক মোঃ আশরাফুল আলম লিটন,জেলা সাংবাদিক সমিতি ও সম্পাদক পরিষদের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মোঃ আকরাম হোসেন,প্রেসক্লাবের ক্রীড়া সম্পাাদক জাহিদুল হক চন্দন,সাংবাদিক সমিতিরি সহ-সাধারন সম্পাদক মোঃ ইউসুফ আলী শেখ,দপ্তর সম্পাদক এ এস এম সাইফুল্লাহ,কোষাধক্ষ্য মোঃ সোহেল হোসেন,প্রমুখ।
২য় দিনের মত মঙ্গলবার সকালেও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মহীউদ্দীনের সহযোগীতায় শতাধিক আটকে পড়া শ্রমিকদের খাদ্য বিতরন করেন মানিকগঞ্জ জেলা সাংবাদিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ও দৈনিক নয়া দিগন্তে জেলা প্রতিনিধি মোঃ শাহানুর ইসলাম।এসময় সার্বিক সহযোগীতা করেন সাংবাদিক নেহায়েত হাসান সবুজ সহ অনেকে। অপর দিকে মঙ্গলবার দুপুরে শ্রকিররা জানায় এই খাদ্য সাহায্য ছাড়া সরকারি/বেসরকারি কোন খাদ্য সাহায্য এখনও তারা পায় নাই।