ঠাকুরগাঁও সদরে গৃহ ও ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪২টি ঘর বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খোকনের বিরুদ্ধে।
আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় চতুর্থ পর্যায়ে সদরের জগন্নাথপুর ইউনিয়নে কালিতলা বাজারের পাশে নির্মাণ করা হয় ৫৪টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর।
পরে পর্যায়ক্রমে ১২টি ঘর ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হলেও পড়ে থাকে ৪২টি ঘর। নিয়মনুযায়ী এসব ঘর দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারীর। তবে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়ে যেন ঘরের মালিক বনে যায় খোকন।
অভিযোগ উঠেছে যে, প্রকৃত ভূমিহীন ও সরকারি নিয়ম তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঘরে উঠিয়ে দেন তিনি। তার এই কাজে সহযোগিতা করেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহকারী মো. হালিম ও সামাদ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি।
খোকনের মাধ্যমে ঘরে উঠেন শাহানাজ পারভীন ও তার পরিবার। শাহানাজ বলেন, খোকন স্যার আমাদের ঘরে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু এখন আমাদের নামে ঘর বরাদ্দ হয়নি বলে জানতে পেরেছি।
দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা ঠরিজা বেগম। তিনি এবং তার স্বামী আখতারুল ইসলামসহ এর আগে চট্টগ্রামে থাকতেন। কিন্তু গত একমাস আগে তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের গুচ্ছগ্রামে চলে আসেন। সেসময় ভোর রাত্রে তাদেরকে এই গুচ্ছগ্রামে তুলে দেয় খোকনের সহযোগী সামাদ।
ঠরিজা বেগম বলেন, গত একমাস আগে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে রাতের আঁধারে তারা এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ওঠেন। ঘরে উঠিয়ে দেন খোকনের সহযোগী সামাদ।
তিনি আরও বলেন, আগে আমরা চট্টগ্রামে থাকতাম। আমার স্বামীকে ঘর দেওয়ার কথা বলে খোকন ও সামাদ এখানে নিয়ে আসে। এখন গুচ্ছ গ্রামে বসবাস করছি।
ওই গুচ্ছগ্রামের পাশের এলাকার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সামাদ আমার কাছে ১০ হাজার টাকা চেয়েছিল; আমি টাকা দিতে পারি নাই বলে ঘর পাইনি। যারা টাকা দিচ্ছে তারাই ঘর পাচ্ছে।
গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা চন্দনা বলেন, সামাদ আমার কাছে টাকা চাইতে আসছিল। আমার কাছে টাকা নাই। আমি দিতে পারিনি। তাই সামাদ আমার ঘরে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। এই টাকা সে নাকি খোকেনকে দিবে।
এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দীন রহমান বলেন, আমি যুবলীগের সেক্রেটারি এবং যুবলীগের নেতাদের নতুন ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলছিলাম। তারা আমাকে ঘরে উঠিয়ে দিয়েছে। ঘরের কোন কাগজ আমার কাছে নেই।
জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. সাইদুল বলেন, মানিক মিয়া নামের একজন এই গুচ্ছগ্রামে একটি ঘর পায়। তিনি এই ঘরে কখনোই থাকেন না। এই ঘরটি ন্যায্য দাম পেলে তিনি বিক্রি করবেন। বেশ কিছু মানুষের কাছে বলেছেন। আমার কাছেও এসেছিলেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. দুলাল হোসেন বলেন, এই গুচ্ছগ্রামে ৫৪টি ঘর আছে। তার মধ্যে ১০ থেকে ১২টি ঘর ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪২টি ঘর খোকন, সামাদ ও হালিমের নেতৃত্বে বিক্রি করা হয়েছে। তারা যেন ঘরগুলোর মালিক। নিজেদের খেয়ালখুশিমতো সরকারি এই ঘরগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খোকন বলেন, আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। এটা অনেকদিন আগের কথা। এ বিষয়ে অনেক কিছু হয়েছে। এখন এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।
ঘর বিক্রির ঘটনাটি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে জানিনা এবং আমাকে কেউ এ বিষয়ে বলেনি। এখন আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা বসবাস করছেন এদের কোন প্রকার ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।