এস এম আকরাম হোসেন
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মাহিয়া আক্তার (১৫ ) খেলাধুলার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছাদ থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয় ।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার জয়রা গ্রামে আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা মাদ্রাসায় এই দূর্ঘটনাটি ঘটেছে । নিহত মাহিয়া আক্তার জেলার সিংগাইর উপজেলার বড় কালিয়াকৈর গ্রামের আল মামুনের মেয়ে। সে ওই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্রী এবং ১৮ পারা কোরআনের হাফেজা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার ( ২৬ এপ্রিল ) সকালের দিকে বান্ধবীদের সঙ্গে মাদ্রাসার ছাদে খেলাধুলা করছিলো মাহিয়া আক্তার নামের ওই শিক্ষার্থী । মাহিয়া,মরিয়ম ও বাবলী মিলে ছুটাছুটি করার এক পযার্য়ে ছাদের টিনের বেড়া ভেঙ্গে নিচে পড়ে যায় । ছাদ থেকে পড়ে গুরুত্বর আহত হয়ে নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়। মাহিয়া আক্তারকে দ্রুত উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয় । হ্সাপাতালটির কর্তব্যরত ডাক্তার জরুরী চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপালে রেফার্ড করেন । পরে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক ওই শিক্ষার্থীকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে মাহিয়া আক্তারের মরদেহটি ময়নাতদন্তের পর নিজ এলাকায় স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয় ।
মাদ্রাসার নুরানি বিভাগের শিক্ষিকা শারমিন আক্তার বলেন, সকালের দিকে মহিয়াসহ তিন জন ছাত্রী ছাদে ওঠে দৌড়াদৌড়ি ও দুষ্টুমি করছিল। এ সময় হয়-তো ওই মেয়েটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়।
মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ মোঃ মইনুদ্দিন বলেন, আমি ২য় তলার অফিস কক্ষে ছিলাম এমন সময় মাদ্রাসার এক ষ্টাফ এসে বলে ছাদ থেকে নিচে পড়ে গেছে এক শিক্ষার্থী । নিচে গিয়ে দেখি মাহিয়া আক্তার রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে । তাৎক্ষনিক ভাবে ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাই মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসাও দেওয়া হয় । হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে । পরে ওই হাসপাতালের ( কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ) চিকিৎসকরা রোগীকে দেখেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে । এর ভিতর মাহিয়া আক্তারের বাবা দেশের বাহিরে থাকায় তার মায়ের কাছে সংবাদ পৌছাই । আমরা ( মাহিয়া আক্তারের মা ও চাচী ) এক সঙ্গেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই এবং ওই খানের ডিউটিরত চিকিৎসক মাহিয়াকে মৃত ঘোষনা করেন । পরবর্তীতে মাহিয়া আক্তারের মরদেহটি ময়নাতদন্তের পর আমরা নিয়ে আসি এবং তার নিজ গ্রামে পারিবারিক সিদ্ধানে দাফন করা হয় ।
আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মাহিয়া আক্তারের মা আইরিন বেগম বলেন ,আমার মেয়েকে মানিকগঞ্জে আবাসিকে রেখেই মাদ্রাসায় পড়াচ্ছিলাম । মেয়ে মাহিয়াসহ ওর বান্ধবীরা মিলে ছাদে খেলাধুলার সময় পা পিছলে নিচে পড়ে মারা গেছে বলে শুনেছি । এই বিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি আরো বলেন , মাহিয়াকে তার বান্ধবীসহ মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষীকারা অনেক আদর করতো কারণ সে অনেক শান্ত প্রকৃতির ছিলো । ঘটনাটি ঘটার সাথে সাথে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে নেওয়া থেকে দাফন পযর্ন্ত সার্বক্ষনিক পাশে ছিলেন । এই বিষয়ে মাদ্রাসা ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আল্লাহ আমার মেয়েকে নিয়ে গেছে। আমিতো আর আমার মেয়েকে ফিরে পাব না। আমার মেয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাবিল হোসেন বলেন, ছাদ থেকে পড়ে শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। তবে এখনো কোন অভিযোগ করেনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।